কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরকারি খাদ্য গুদামে বোরো ধান ছাঁটাই বাছাইয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার যোগসাজশে মানসম্মত চালের পরিবর্তে নিন্মমানের খাবার অযোগ্য পুরাতন চাল সরবরাহ করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মিল মালিক সমিতির একটি সিন্ডিকেট চক্র।
উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্র জানায়, ২০২৪ বোরো ধান মৌসুমে ৩২ টাকা কেজি দরে ২ হাজার ২থশ ৮০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে ১ হাজার ৭শ ৩১ মেঃ টন ধান ক্রয় দেখানো হয়েছে। একই সাথে উপজেলার ৬২টি মিল চাতালের মালিকের কাছ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৩থশ ১১ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা হয়।
সরেজমিন রোববার (১০ নভেম্বর) বিকালে গিয়ে দেখা যায়, সিন্ডিকেট চক্র ট্রলিতে করে ধান ছাঁটাইয়ের মানসম্মত চালের পরিবর্তে নি¤œমানের ছাতা ধরা খাবার অযোগ্য পুরাতন ৫০ কেজি ওজনের ১শ ৬২ বস্তা চাল খাদ্য গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। একদিকে চাল নি¤œমানের অপরদিকে চালের বস্তাও ছেঁড়া ফাটা ও পুরাতন। নিয়ম অনুযায়ী নতুন বস্তায় চাল সংগ্রহের কথা থাকলেও নি¤œমানের বস্তায় চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। এভাবে এই সিন্ডিকেট চক্রটি ধান ছাঁটাইয়ে মানসম্মত চালের পরিবর্তে নিন্মমানের খাবার অযোগ্য চাল সরবরাহ করে আসছেন।
খাদ্য গুদামের একটি সূত্র ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মিল চাতাল ব্যবসায়ী জানায়, কৃষকদের কাছ থেকে ৪শ ৮০ মে. টন ধান ক্রয় করার পর গুদামে জায়গা না থাকার অজুহাতে কৌশলে গুদাম কর্মকর্তা ধান ক্রয় বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে মিল মালিক সমিতির একটি সিন্ডিকেট চক্র খাদ্য বিভাগের সাথে ধান ছাটাইয়ের চুক্তিবদ্ধ হন। ৬২টি মিল খাদ্য গুদামে চাল প্রদান করলেও ধান ছাঁটাইয়ের সময় মাত্র ১০টি মিল চুক্তিবদ্ধ হন। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগে এই ১০ জন মিল মালিকের সিন্ডিকেট কৃষকের কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে ধানের স্লিপ কিনে নিয়ে গুদামে ধান সরবরাহ না করে খাদ্য কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাংক থেকে বিল তুলে নিয়ে তা ছাঁটাইয়ের চাল হিসাবে সরবরাহ করেন। এই সিন্ডিকেট চক্রটি সবর্বোচ্চ ৬০ মে. টন ও নিন্মমানের ৪৫ মে.টন ধান ছাটাইয়ের চুক্তিবদ্ধ হন। এরপর তারা ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে ৪ থেকে ৫ বার পুনঃ বরাদ্দ নেন। নিয়ম অনুযায়ী তারা নিজেদের মিল চাতালে ধান ছাঁটাই না করে বাজার থেকে কম মূল্যে ক্রয় করে নি¤œমানের খাবার অযোগ্য পুরাতন চাল গুদামে সরবরাহ করে আসছেন। এভাবে সিন্ডিকেট চক্র ও খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ফলে একদিকে প্রকৃত কৃষকদের সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে অপরদিকে খাবার অযোগ্য চাল গুদামে সরবরাহ করে সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করা হচ্ছে।
উপজেলা খাদ্য কমকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ধান ছাঁটাইয়ে মান সম্মত চাল সরবরাহের কথা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। সব বস্তা তো বাছাই করে গুদামে তোলা সম্ভব না। নিন্মমানের পুরাতন চাল ও ছেঁড়া ফাটা বস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু ছেঁড়া ফাটা বস্তা ও নিন্মমানের চাল এসেছে যা গুদামে ভুলবশত ঢুকানো হয়েছে। তা মিল মালিকের কাছে ফেরত পাঠানো হবে। সিন্ডিকেট চক্রের সাথে যোগাসাজশের কথা তিনি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিসবাহুল হোসেন বলেন, নিন্মমানের চাল ও ছেড়া বস্তা নেয়ার কেনো সুযোগ নেই। যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান জানান, খাদ্যগুদামে নি¤œমানের চাল ঢুকানোর বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :