মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে শতবর্ষ পুরনো পলো বাওয়া উৎসবে মেতেছে গ্রাম-বাংলার শৌখিন মৎস্য শিকারীরা। সময়ের পরিবর্তনে আবহমান বাংলার অনেক কিছুরই এখন দেখা মেলে না। গ্রামীণ জনপদের অনেক ঐতিহ্য এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে ‘পলো বাওয়া’ উৎসবও বিরল। তবুও শিকড়ের টানে এই উপজেলায় প্রতি বছরই ঘটা করে পালন করা হয় এ উৎসব।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) হরিরামপুর উপজেলার লেছরাগঞ্জ লাউতার মাঝে অচিন গাছ সংলগ্ন বয়ারগারা বিলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় অনেকটাই পানিশূন্য বিল বুক চিতিয়ে দিয়েছে। মূল বিলের খালে কিছু পানি অবশিষ্ট রয়েছে। এ সময়ই এই এলাকার সৌখিন মানুষেরা যোগ দিয়েছেন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসবে।
এলাকার স্থানীয় জনগন থেকে শুরু করে, বহু দূর দূরান্ত থেকে মাছ শিকারিরা সকাল থেকে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি অটোরিকশা নিয়ে হাজির হন বিলে। পলো নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে হৈ হুল্লোড় করে নেমেছেন এ বিলে।
উপজেলার সাপাইর চানপুর এলাকায় রাকিব খান বলেন, পলো দিয়ে মাছ ধরা তার দীর্ঘদিনের শখ। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও বিলে মাছ ধরতে এসেছে। তবে আগেকার তুলনায় দেশীয় প্রজাতির মাছ কমে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরোও বলেন, মাছ পাই আর না পাই এটি বড় না, বড় হলো শখ।
লাউতা এলাকার ষাটোর্ধ মুরব্বি সোলাইমান শিকদার বলেন, আমি একটি বড় কাতল ও ছোট মাছ পেয়েছি। এতেই আমি খুশি। টাকা দিলেও এই মাছ আমি কিনতে পারবো না। এটা শখের জিনিস। আমি বাড়ি গিয়ে পরিবারকে নিয়ে মজা করে খাবো। প্রতি বছরই এই বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো-বাওয়া উৎসব হয়।
এই পলো উৎসব দেখে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ বি এম সামসুন্নবী তুলিপ জানান, মাছে ভাতে বাঙালি। মাছের অভয়ারণ্য না থাকার কারণে মানুষ আমিষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান জানান, পলো উৎসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। দেশের অন্যান্য এলাকায় এ উৎসব প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে এ এলাকায় ঐতিহ্যটি এখনো টিকে আছে। এ উৎসবটিকে জমজমাট করতে বিলে মাছ থাকা প্রয়োজন। এজন্য বর্ষায় দেশীয় পোনা মাছ রক্ষা করে উৎসবটিকে ধরে রাখার প্রয়োজন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :