পটুয়াখালী গলাচিপায় হাজী কেরামত আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মু.আলিম উজ্জামানের বিরুদ্ধে কাম্য যোগ্যতা না থাকা সত্তে¦ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ নিয়ে অবৈধ ভাবে দায়িত্ব পালনের অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষকবৃন্দ বিভিন্ন সময় শিক্ষা মন্ত্রনালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকসহ উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন। নিয়োগের ১বছর ১০ মাস পর যোগদান এলাকায় উত্তেজনা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়নের হাজী কেরামত আলী ডিগ্রি কলেজর অধ্যক্ষ পদটি ২০১৯ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শূণ্য ছিল। গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ওই সময়কার কলেজ পরিচালনা কমিটি সভাপতি কাম্য যোগ্যতা না থাকা সত্তের
জালজালিয়াতির মাধ্যমে মু.আলিম উজ্জামানকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়া না হওয়া ও অধ্যক্ষ মু.আলিম উজ্জামানের কাম্য যোগ্যতা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পরিচালনা কমিটির সভায় অধ্যক্ষর নিয়োগ বাতিল করা হয় এবং প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-কলেজ পরির্দশক মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ ভূঞা ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.আহম্মেদ শরীফ তদন্ত করে মু.আলিম উজ্জামানের অধ্যক্ষ হিসেবে আবেদন করার যোগ্যতা না থাকা সত্তে¡ও জালজালিয়াতির আশ্রয় নেয়ায় নিয়োগ বাতিলসহ প্রয়োজনী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রহনের সুপারিশ করেন। সুপারিশের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরির্দশক ফাহিমা সুলতানা ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর মু.আলিম উজ্জামানের নিয়োগ বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আদেশ দেন।
এব্যাপারে কালেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এনামুল হক ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল গলাচিপা সিনিয়র জুডিসিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করলে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পটুয়াখালী তদন্ত করে জালজালিয়াতির প্রমান পেয়ে ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এনামুল হক (প্রভাষক বাংলা বিভাগ) বলেন, ২০২২ সালে ২৪ আগষ্টে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমার দায়িত্ব ভার গ্রহনের আগে মু.আলিম উজ্জামান চক্র রেজুলেশন খাতা সৃজন করে ২০ আগষ্ট ২০২২ পরিচালনা শিক্ষক প্রতিনিধি স্বাক্ষর জাল করে কলেজ পরিচালনা কমিটির একটি সভা দেখিয়ে একই সভায় বিজ্ঞপ্তি, বাছাই কমিটি ও নিয়োগ বোর্ড কমিটি দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালে ২১ অক্টোবর কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কলেজের একজন জুনিয়র শিক্ষক ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক রেশমা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেখিয়ে একই সময় একই তারিখে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ও পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ ভ্যানু দেখিয়ে নিয়োগ বাছাই পরিক্ষা দেখায়।
সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবুল আক্তার (সহকারী অধ্যাপক রাষ্ট্র বিজ্ঞান) জানান, ২০ আগষ্ট ২০২২ সালে আমি পরিচালনা কমিটির কোন সভা করিনি। মু.আলিম উজ্জামান নিজে রেজুলেশন লিখে আমার স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগের সকল কার্যক্রম করে। বিভিন্ন তদন্তের পরে আমি বিষয়টি জানতে পারি। আমার মেয়াদ শেষে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলা বিভাগের প্রভাষক এনামুল হককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জাহিদুল ইসলাম (প্রভাষক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বলেন, ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই কলেজ পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। আমি দায়িত্ব নেয়ার আগে বা পরে কেউ অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এমন দাবী করেনি। ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর ১১ আগষ্ট এলাকার কিছু লোকজন নিয়ে কলেজে প্রবেশ করে মু. আলিম উজ্জামান নিজেকে অধ্যক্ষ দাবী করে এবং জোর অধ্যক্ষের কার্যালয় দখল করে। এসময় কলেজ ক্যাম্পাসে থাকা আমার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
কলেজের অধ্যক্ষ মু.আলিম উজ্জামান বলেন, এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়াই অনুসরণ করে আমাকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নিয়োগের পর কলেজে যোগদান করতে গেলে কিছু শিক্ষক আমাকে ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ গোলাম মোস্তফাকে কলেজে ঢুকতে দেয়নি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :