প্রিয় শিক্ষককে শেষবারের মতো দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য হওয়া চট্টগ্রামের হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুবের জানাজায় সর্বস্তরের জনতার ঢল নেমেছে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুর ২টার সময় বাঁশখালী উপজেলার কাথরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বাগমারা মাস্টার আবু আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। মাঠে জায়গা না পেয়ে আশেপাশের সড়কে দাঁড়িয়ে জানাজায় অংশ নিয়েছেন অনেকে।
জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজায় অংশ নেওয়া এইচ এম মঈনুদ্দিন সিকদার বলেন, ‘স্যারের জানাজায় জনতার ঢল নেমেছে। দূরদূরান্ত থেকে তার শিক্ষার্থীরা শেষবারের মতো দেখতে এসেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ বাগমারা মাস্টার আবু আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জানাজায় শরিক হয়েছেন।’
প্রিয় শিক্ষককে শেষবারের মতো দেখতে আসা আকাশ বড়ুয়া নামে এক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার পুরো চট্টগ্রামের অন্যতম জনপ্রিয় শিক্ষক। রসায়ন বিষয়ে তার দক্ষতা ছিল। পড়ানোর ধরন ও শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়ায় সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন তিনি।’
এর আগে শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ওই শিক্ষকের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, তাকে বলপ্রয়োগ করে পদত্যাগ করানো হয়েছিল। সেদিন থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন।
শিক্ষক আইয়ুব তিন সন্তানের জনক।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে একদল শিক্ষার্থী উপাধ্যক্ষ আইয়ুবের ওপর চড়াও হয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এক পর্যায়ে উপাধ্যক্ষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।
শনিবার শিক্ষক আইয়ুবের ভাগিনা টিপু বলেন, ‘ওই ঘটনার পর থেকে মামা আর কলেজে যাননি। সেদিনের ঘটনার পর থেকে তিনি মানসিক টেনশনে থাকতেন। তবে আমাদের এ নিয়ে কিছু বলতেন না। শনিবার সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান-তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত। তার অবস্থা ভালো নয়। এর এক ঘণ্টা পরই চিকিৎসক মামাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চয়ন দাশ বলেন, ‘শনিবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের অন্যতম জনপ্রিয় রসায়ন শিক্ষক।
কলেজটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ‘একদল লোক’ হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজে অবস্থান নেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন কিছু শিক্ষার্থী। সেদিন তারা উপাধ্যক্ষ আইয়ুবের পদত্যাগ ও আরও তিন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের বরখাস্তের দাবি তোলেন।
ঘটনার দিন অধ্যক্ষ চয়ন দাশ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা জোর করে বরখাস্ত বা পদত্যাগের সাক্ষর নিয়েছে তারা সবাই বহিরাগত।’
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :