শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে হাতির দল। প্রায় ৩৫ থেকে ৪০টি বন্য হাতির একটি দল বালিজুড়ি অফিস পাড়া, হালুয়া হাটি সংলগ্ন নেওয়া বাড়ির টিলায় অবস্থান নিয়েছে। হাতি সারাদিন পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে থাকে। বিকালের পর থেকে গহীন জঙ্গল থেকে হাতির দল লোকালয়ে নেমে আসে খাদ্যের সন্ধানে। ধান পাকার মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই বেড়েছে হাতি আক্রমণ। প্রতিবছরই হাতির তান্ডবে সীমান্তবর্তী পাহাড়ী কৃষকদের ধান খেত, সবজি ও অন্যান্য ফসলাদি বিনষ্ট হচ্ছে। পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে বিস্তৃর্ণ আবাদী জমির ফসল। কৃষক ও এলাকার লোকজন ফসল রক্ষার্থে রাত জেগে মশাল জ্বালিয়ে সার্চ লাইট ব্যবহার করে হাতি তাড়ানো চেষ্টা করে।
হাতি থাকায় সীমান্ত সড়ক দিয়ে লোকজনের চলাচল অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যেই সড়কে মানুষ ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হাতি চলে গেলে পুনরায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা হাতি আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ধান কাটার মৌসুম হলেই হাতির আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে সীমান্তে বসবাসকারীরা। হাতির উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় গ্রামবাসী।
শুক্রবার বিকালে সরজমিনে গেলে বালিজুড়ি রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ দিন থেকে ৩৫-৪০টি বন্য হাতির দল পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে। নেয়াবাড়ি টিলা, সোনাঝুড়ি, মালাকোচা, হালুয়াহাটি এলাকার বিভিন্ন পাহাড়ি জঙ্গলে হাতির দল রয়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসে। হালুয়া হাটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আমির হোসেন বলেন আমার ৮০ শতাংশ জমির ধান হাতি খেয়ে ফেলেছে। মালাকোচা গ্রামের হামিদ বলেন, আমার ১ একর ২৫ শতাংশ জমির ধান সাবাড় করে ফেলেছে বন্যহাতির দল। তারা সকলেই ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
জানা গেছে গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতে মেঘালয় প্রদেশের সীমান্ত ঘেষেঁ অবস্থিত জনপদ শ্রীবরদীর রাজারপাহাড়, নেওয়াবাড়ি টিলা, সোনাঝুরি, ঝোঁলগাও, বালিজুড়ি, অফিসপাড়া, খ্রিস্টানপাড়া, কোচপাড়া, রাঙ্গাজান, খাড়ামোরা, কর্ণজোড়া, বাবলাকোনা, হারিয়েকোনা, পাঁচমেঘাদল, চান্দাপাড়া, গারোপাড়াসহ ১২-১৫টি গ্রামে বাঙালী ও হিন্দু গারো, কোচ হাজং সহ বিভিন্ন গোত্র মিলে প্রায় ২৫-৩০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। উল্লেখিত এলাকায় বাংলাদেশে ও ভারতের ভূখন্ডে রয়েছে বিশাল বনভূমি। বাংলাদেশের বনাঞ্চল অপেক্ষাকৃত সমতল। ভারতের গহীন বনাঞ্চল রয়েছে অগনিত বুনো হাতি। হাতি দল বেঁধে সমতল ভূমিতে চলাফেরা ও আহার করতে সহজ মনে করে থাকে। তাই সময় অসময়ে বুনো হাতির পাল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের সমতল বনাঞ্চলের আবাসিক ও কৃষিপ্রধান এলাকায় চলে আসে। পাহাড়ে বসবাসরত বাড়ি-ঘর, ফসলাদি জমি ও বিভিন্ন বাগানে প্রবেশ করে ধ্বংসলীলা চালায়। আবার ফিরেও যায় হাতির পাল। গত ২০-২৫ বছর ধরে এসব বুনো হাতি তান্ডবলীলা চালিয়ে সীমান্তবর্তী উল্লেখিত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে কয়েক’শ ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে। হাজার হাজার একর জমির ধান শাক-সবজি ফসল খেয়ে এবং বাগানের গাছপালা দুমড়ে মুচড়ে সাবাড় করে ফেলেছে। আবার হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
বালিজুড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, হাতির সুরক্ষায় আমাদের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক পাহাড়া দিচ্ছি, যেন হাতির কেউ ক্ষতি করতে না পারে। হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ইআরটি’র সদস্যদের মাঝে মশাল ও তেল বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের লোকজন গভীর রাত পর্যন্ত হাতির সুরক্ষায় কাজ করছে। এছাড়াও হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করে নিয়ম অনুযায়ী সহায়তা প্রদান করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহমেদ বলেন, উপজেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিধিদের পক্ষ থেকে এলাকাবাসীদের প্রতিনিয়িত সচেতন করা হচ্ছে। হাতি সুরক্ষায় কমিটি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাঝে নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়াও স্থায়ীভাবে বন্য হাতির কবল থেকে রক্ষা পেতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :