রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে আবহাওয়া অফিস এই তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে।রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ অহিদুল ইসলাম সকালে বলেন, আজকে এ বছর ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সর্বনিম্ন। এ ছাড়া সারা দেশের মধ্যে আজকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সকাল ৯ টায় ১৫.২ সকাল ১০ টায় ১৯.২ ডিগ্রী তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকদিন থেকে রাত-ভোর কুয়াশায় ঢাকা থাকছে রাজশাহী। ভোরে কুয়াশার আস্তরণ পড়ছে চারপাশে। ফলে হেডলাইট জ্বালিয়েও কচ্ছপ গতিতে চালাতে হচ্ছে গাড়ি। ঝিরঝির বৃষ্টির মতো রাতে পড়ছে কুয়াশা। ভিজছে রাস্তা-ঘাট। ঘাসের ডগায় জ্বলজ্বল করছে শিশির বিন্দু।
দিনভর রোদ থাকলেও হিমেল হাওয়া যেন হুল ফোটাচ্ছে মানুষের শরীরে। গত এক সপ্তাহ ধরেই রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এতে জবুথবু জনজীবন। বিপাকে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ।
অপর দিকে শীত থেকে নিজেদের বাঁচাতে ফুটপাতের দোকান গুলোতে বেশ ভীড় লক্ষ করা গেছে। শুক্রবার মহানগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়ন্ট থেকে শুরু করে আলুপট্টি পর্যন্ত রাস্তার দুইধারে ফুটপাতের দোকান বসেছে। দোকনগুলোতে নানান বয়সী মানুষজন বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় গরম পোশাক ক্রয় করতে দেখা গেছে। এসব দোকান গুলোতে কমদামে পোশাক কিনতে পেরে স্বস্থি প্রকাশ করছেন জনসাধারণ। অপরদিকে বিক্রেতারা বলছেন প্রতি শুক্রবার আমরা দোকান বসিয়ে থাকি। আমরা কমদামে বেশী পণ্য বিক্রি করার উদ্দেশে বসি। তাদের বেঁচা কেনাও বেশ ভালো বলে জানিয়েছে। আমাদের দোকানে একেবারে নিন্ম আয়ের থেকে শুরু করে ধনীলোকেরাও এসে পোশাক কিনে নিয়ে যায় বলে জানান।
এদিকে, শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অ্যালার্জি, এ্যাজমা, হৃদ্রোগ, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। অপরদিকে, কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজশাহীর আলু চাষিদের।
তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নেমে এলে মাঝারি এবং ৬ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটাকে বলা হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
এদিকে, একদিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ফলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। বেড়েছে জনদুর্ভোগ। সেই সাথে ভিড় বেড়েছে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে।
রাজশাহীর মাঠজুড়ে এখন চলছে রবিশস্যের আবাদ। সরিষা, টমেটো, শিম, লাউ, শালগম, বাঁধাকপি, আলু থেকে শুরু করে একাধিক রবি ফসল চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অনেক ফসল ঘরে তোলার সময়ও হয়েছে। কিন্তু সপ্তাহ ধরে টানা কুয়াশায় অনেক ফসলেই বেড়েছে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ। এ কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে রবিশস্যের ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
কৃষি তথ্য সূত্র জানায়, কুয়াশার কারণে ধানের চারা হলদে হয়ে যেতে পারে। সরিষায় বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া আলুর পাতায় মড়ক লাগার আশঙ্কা আছে। সাধারণত এ সময় আম গাছে মুকুল আসে। তাই ভালো ফলন পেতে বাড়তি যত্ন নিতে হবে। এসব বিষয়ে সমাধান পেতে নিকটস্থ কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে সমাধান নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের আক্রমণসহ নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এভাবে বেশিদিন ঘন কুয়াশা থাকলে রবি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :