টাংগাইলে ধনবাড়ী উপজেলায় ধনবাড়ী হটিকালচার সেন্টার এর আয়োজনে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পোষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় মাশরুমের গুরুত্ব ও মাশরুম উৎপাদন কৌশল বিষয় দলভুক্ত চাষী প্রশিক্ষণ।ধনবাড়ী হটিকালচার সেন্টারে হলরুমে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। মাশরুম চাষের উপকরণ হলো খড়, কাঠের গুঁড়া, আখের ছোবড়া ইত্যাদি। এসব উপকরণ অত্যন্ত সস্তা ও সহজে পাওয়া যায়। মাশরুম চাষ অত্যন্ত লাভজনক। মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনেই এটি খাবার উপযোগী হয়ে ওঠে। এটি চাষের জন্য আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সহজলভ্য। বেকার যুবক-যুবতী ও নারীরা ঘরে বসে এর চাষ করতে পারেন। অন্যান্য সবজির তুলনায় বাজারে এর দাম অনেক বেশি, ফলে এর চাষ অত্যন্ত লাভজনক। অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও বিদেশে রফতানির সুযোগ রয়েছে। গ্রীষ্মকালে যেকোনো চালাঘরের নিচে এবং বারান্দায় চাষ করা যায়। বর্ষাকালে পানি প্রবেশ করে না অথচ বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে, এমন ঘরে এর চাষ করতে হয়। শীতকালে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে এর চাষ হয়ে থাকে। মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমিষ এবং হজমে সাহায্যকারী এনজাইম রয়েছে।
রান্না করা প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে ৩ দশমিক ১ গ্রাম আমিষ, দশমিক ৮ গ্রাম ফ্যাট, ১ দশমিক ৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ, দশমিক ৪ গ্রাম আঁশ, ৪ দশমিক ৩ গ্রাম শর্করা, ৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, দেড় মিলিগ্রাম লৌহ, দশমিক ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১, দশমিক ১৬ মিলিগ্রাম বি২, ২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম নিয়াসিন ও ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়া খাদ্যশক্তি থাকে ৪৩ ক্যালরি। সাধারণত মাশরুমে মাছ-মাংসের চেয়ে কিছু বেশি এবং প্রচলিত শাকসবজির চেয়ে দ্বিগুণ খনিজ পদার্থ থাকে। আমিষের পরিমাণ থাকে বাঁধাকপি ও অন্যান্য শাকসবজির চেয়ে চার গুণ।
এছাড়া এতে যে ফলিক অ্যাসিড থাকে, তা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। বহুমূত্র রোগী এবং যারা মোটা, তাদের জন্য মাশরুম একটি উত্তম খাবার। এটা খেতে বেশ সুস্বাদু এবং সহজে হজম হয়। সুস্বাদু এ খাবারের স্বাদ অনেকটা মাংসের মতো। রান্না ছাড়া একে শুকিয়েও খাওয়া যায়। যেকোনো সবজির চেয়ে এর খাদ্যগুণ বেশি। শুকনো মাশরুমেও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে। এটি দাঁত ও হাড়ের গঠনে বিশেষ উপযোগী। রক্তশূন্যতা, বেরিবেরি ও হূদরোগ প্রতিরোধ এবং বহুমূত্র রোগের চিকিৎসায় বিশেষভাবে কার্যকর শুকনো মাশরুম। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ২৫ গ্রাম প্রোটিনসহ ভিটামিন বি, সি, বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, খনিজ পদার্থ, আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড ও এনজাইম রয়েছে। এছাড়া এতে ইরিটাডেনিন ও ল্যাম্পট্রল নামে রাসায়নিক পদার্থেরও উপস্থিতি রয়েছে। উপাদান দুটি হূদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, পেটের পীড়া ও রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ, টিউমার বড় হওয়া রোধ এবং হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ধনবাড়ী হটিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ মোঃ রাসেল পারভেজ তমাল বলেন,মাশরুমের অধিক উৎপাদন এবং এটি লাভজনক হওয়ায় এ খাতে উদ্যোক্তা তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :