রাজশাহীতে মামলাবাজ সাবেক স্ত্রীর হুমকি ও হয়রানীতে অতিষ্ট হয়ে ঘরছাড়া হয়েছেন ভূক্তভোগী পরিবার। একের পর এক মিথ্যা মামলার জালে পড়ে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে সংবাদ সম্মেলন করছেন মহানগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার মৃত আবু তালেবের ছেলে আবুল কালাম আজাদ রিংকু। সে পেশায় একজন ছাপাখানা ব্যবসায়ী।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) মহানগরীর একটি রেস্তোঁরায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ভূক্তভোগী পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ভূক্তভোগী আবুল কালাম আজাদ রিংকুর পক্ষে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন তার ভাগ্নি শাহনাজ পারভিন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার মামা আবুল কালাজ আজাদ রিংকু নিউমার্কেটে একটি প্রিন্টিং প্রেস আছে। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পোস্টার, লিফলেট ও ক্যালেন্ডারে প্রতিষ্ঠানের নাম ও মোবইল নাম্বার দেওয়া থাকে শুধুমাত্র প্রচারের স্বার্থে এবং সেই সূত্র ধরে একদিন প্রিন্টিং এর কাজ দেওয়ার কথা বলে পবা উপজেলার শুকুর আলীর বাবুর মেয়ে প্রিয়া খাতুন ফোন দেয়।
তারপর কাজ নেওয়ার জন্য ফোন দিয়ে রাজশাহী কলেজে ডাকলে কাজ নিতে গেলে সে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে। সে প্রস্তাবে রাজি না হলে বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে সম্পর্ক করার জন্য চাপ দিতে থাকে। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে প্রিয়া খাতুন বিয়ের জাল কাবিননামা ও জাল এফিডেভিট নিয়ে বাসায় হাজির হয়।
পরিবার তাকে মেনে না নিলে সে মেয়ে আমার মামার বিরুদ্ধে ২১/০৬/২০১৯ইং সালে ভুয়া যৌতুকের মামলা দায়ের করে। তারপর প্রিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে জাল কাবিননামা ও জাল এভিডেভিট করার জন্য ৩০/০৬/২০১৯ইং সালে একটি মামলা দায়ের করে আমার মামা। তারপর মামলা তদন্ত চলাকালীন সে আবার ছাপাখানায় আসে। এসে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে তারপর তাকে হত্যা করার অভিযোগে আরও একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমার মামার পরিবার ও বন্ধু বান্ধবের উপর মামলাটি দায়ের করা হয়। এই মিথ্যা মামলা দায়ের করার জন্য পুলিশ গ্রেপ্তার করলে ৪৫ দিনহাজতবাস করে।
এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে তার পরিবারের সাথে অপোষ-মিমাংসাতে বসার চেষ্টা করে। তার একটায় দাবি যে আমার মামাকে বিয়ে করতে হবে তাহলে মামলা থেকে মুক্তি দিবে। সেই করনে গত ০৮/১১/২০২০ইং সালে এক লক্ষ টাকা দেনমহরে বিবাহে আবদ্ধ হয়। তারপরে মামার দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করে রিপোর্ট আসে ওই নামে কোন কাজী অফিস নাই ও এভিডেভিট স্বাক্ষরটি মামা রিংকুর না হওয়ায় মামলাটি মিথ্যা প্রমানিত হয়। তারপর রাজশাহী কোর্ট এর মাধ্যমে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
সংসার চলাকালীন সময়ে ওই মেয়ে প্রিয়া খাতুন ও তার মাতা কাজলী বেগম বিভিন্ন ভাবে মানসিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে। সংসারে কোন ঝগড়া বা ঝামেলা হলে প্রিয়া খাতুন ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশ এনে নির্যাতন করে।
কিছু বলতে গেলে সে হুমকি দেয় যে নিজে আত্মহত্যা করে ফাঁসিয়ে দিবে। তারপর তার সাথে সংসার করতে বাধ্য হয়। এরপর সংসার চলাকালীন ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করে পুত্রের নাম মুন্তাসির জামান প্রিন্স। সে আমার মামার মা-বাবা ও পরিবারের উপর খারাপ ব্যবহার ও অত্যাচার করে এক পর্যায়ে আমার মামার বাবা আঘাত সহ্য না করতে পেরে স্ট্রোক করে মারা যায় । তারপরেও তাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং একটি ভাড়া বাসায় গিয়ে উঠে।
তারপরেও তাকে মামলা তুলার কথা বললে সে ক্ষিপ্ত হয়ে মানসিক ও শরীরিক অত্যাচার করতে থাকে। এক পর্যায়ে ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় এবং তাকে গত ০৫/১২/২০২৩ইং সালে ইসলামি শরীয়ত মতাবেক কাজীর মাধ্যমে তালাক প্রদান করে।।
এর পর থেকেই একের পর এক মামলা দায়ের করতেই আছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আব্দুল কালাম আজাদ রিংকু সাংবাদিকদের প্রশ্ন উত্তরে বলেন, আমিসহ বিভিন্ন আত্নীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ প্রায় ২৫ টি পরিবারকে মহানগরীর বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করে হয়রানি করতেই আছে। এখন পর্যন্ত ওই মেয়ে ১২ টি মামলা দায়ের করছে। তার দায়েরকৃত ৪টি মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালন হতে খারিজ হয়ে গেছে। মামলা গুলো তদন্ত চলা অবস্থায় সে আবারও অন্য থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করে দিচ্ছে। ফলে আমরা বাসায় না থাকতে পেরে ঘরছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ওই মেয়ে আগেও একাধিক বিয়ে করেছে। তার কাজই হলো বিয়ে করে মোটা অংকের টাকা আদায় করা। আমার কাছে সে ৫ লক্ষ টাকা, প্রিন্ট মেশিন, বাচ্চার খোরপোষসহ নানান কিছু দাবি করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ভূক্তভোগী আবুল কালাম আজাদের মা জিন্ন বেগম, ছোট বোন শুকতারা খাতুন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :