কুড়িগ্রাম সদর উপজেলাধীন আরাজী পলাশবাড়ী মৌজায় সরকারি উদ্যোগে নির্মিত গুচ্ছগ্রামে হতদরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য বন্দোবস্তকৃত জমিসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি বীর প্রতীকের জন্য নির্মিত বসতবাড়ীর বন্দোবস্তকৃত জমি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হওয়ায় তা সংশোধনের জন্য দাবি জানিয়েছে গুচ্ছগ্রাম এলাকাবাসী।
কুড়িগ্রাম জেলাধীন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার আরাজী পলাশবাড়ী মৌজার এস.এ.১ নং খাস খতিয়ানের এস.এ. দাগ নং-২০৭৪, শ্রেণি: বালু, জমির পরিমাণ: ৩১.০৩ একর, এস.এ. দাগ নং- ২০৭৩, শ্রেণি: বালু, জমির পরিমাণ: ১৭.২০ একর এবং এস.এ. দাগ নং- ২০০১, শ্রেণি: বালু, জমির পরিমাণ: ২৪.০০ একর, একুনে ৭২.২৩ একর জমি আর. এস. রেকর্ড প্রস্তুত কালে চক্রান্তমূলকভাবে ভ্রমাত্মক আর.এস. রেকর্ড বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বিভিন্ন খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত করা হয়।
উক্ত জমি এস.এ. ১নং খাস খতিয়ানের নিষ্কষ্ঠক জমি হওয়ায় আরাজি পলাশবাড়ী মৌজার হতদরিদ্র, গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে ১৯৮৯ খ্রি: সালে ২২.৫০ একর জমি (প্রতি পরিবারকে ১.৫০ একর জমি হিসাবে) সরকারি উদ্যোগে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করে ১৫ টি পরিবারকে বন্দোবস্ত প্রদান করা হয় এবং সেসাথে রেজিস্ট্রিকৃত কবুলিয়ত প্রদান ও নামজারীসহ অন্যান্য যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। পরবর্তীতে অবশিষ্ট জমির মধ্যে ২.০০ একর জমি (যার এস.এ. দাগ নং-২০০১) ১৯৯৯ খ্রি: সালে সরকারি উদ্যোগে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ (বিশ) টি ঘর ০২ (দুইটি) ব্র্যাক নির্মাণ করে গৃহহীন ও ভূমি পরিবারকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে বরাদ্দ প্রদান করেন এবং সেসাথে রেজিস্ট্রিকৃত কবুলিয়ত প্রদানসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করেন।
পরবর্তীতে উক্ত গুচ্ছগ্রামের সন্নিকটে এস.এ. ২০৭৪ দাগের ৩১.০৩ একর জমির মধ্যে ১.০০ একর জমিতে সরকারি উদ্যোগে ২০০৯ খ্রি: সালে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক তারামন বিবির জন্য বাড়ী নির্মাণসহ বন্দোবস্ত দেয়া হয়। উক্ত জমিতে বীর প্রতীক তারামন বিবির বাড়ী রয়েছে; যা তাঁর স্মৃতি হিসাবে সংরক্ষিত রয়েছে। বর্তমানে এস.এ. দাগ নং-২০০১ এবং ২০৭৪ দাগের জমিতে সরকারি উদ্যোগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ ২০২১ খ্রি: সালে হতদরিদ্র ২৪ টি পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয় এবং সেসাথে রেজিস্ট্রিকৃত কবুলিয়ত হস্তান্তর করা হয়। গুচ্ছগ্রাম বাসিন্দারা, আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মিত ঘরের বাসিন্দারা, বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক তারা বিবির নির্মাণাধীন বাড়ীতে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ নির্মিত ঘরের বাসিন্দারা সুখে শান্তিতে স্বপরিবারে বসবাস করছেন। এদিকে, ১৯৮২ খ্রি: সালে আর.এস. রেকর্ড শুরু হলে স্থানীয় টাউট-বাটপার, ভূমিদস্যু সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানের জমি দখলের অপচেষ্টা শুরু করে। মাঠ জরিপের সময় সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বশীভূত হয়ে সরেজমিন না গিয়ে অফিসে বসে এস.এ. ১ নং খাস খতিয়ানের সমূদয় সরকারি জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বিভিন্ন খতিয়ানে চক্রান্তমূলকভাবে ভ্রমাত্মক রেকর্ডভুক্ত করা হয়। সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত হতদরিদ্র পরিবারের জন্য মহতী কর্মকান্ড লণ্ডভণ্ড হওয়ার ১০০% আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এতে একদিকে হতদরিদ্র পুনর্বাসিত পরিবারগুলো জমিসহ গৃহহারা হবে; অন্যদিকে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসহ প্রশাসনের ভাবপূর্তি ক্ষুন্ন হবে।
সরকারি জমি আত্মসাৎকারী এবং ভূমি দস্যুরা চক্রান্তমূলক ভুল রেকর্ডের কাগজপত্রে নিয়ে বার বার পুনর্বাসিত পরিবারকে উচ্ছেদ করার জন্য বহিরাগত কিছু ভাড়াটে গুন্ডাবাহিনীর দ্বারা নানা প্রকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। এমনকি তারা নিজেরাই পুনর্বাসিত পরিবারের ঘরগুলো ভেঙ্গে দেয়ার অপচেষ্টাসহ হতদরিদ্র পুনর্বাসিত পরিবারের নিরীহ অসহায় লোকজনকে মারধর করার হুমকি প্রদান করে নিজেরাই তাদের (পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের) বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ফৌজদারী মামলা-মোকদ্দমা দায়ের করেছিল। এতে পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় এবং নানা প্রকার হতাশার মধ্যে দিনাতীপাত করছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুড়িগ্রাম এর আর,এম, শাখার স্মারক নং- ০৫,৪৭,৪৯০০,০২১.০১.০০১.২১-৮০ (৪), তারিখ: ১/০২/২০২২ খ্রিঃ পত্র মূলে বিষয়টি সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি), কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রাম বরাবর দাখিলী যাবতীয় কাগজপত্র প্রেরণ করা হয়। সে মোতাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি), কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রাম বিষয়টি সরেজমিন তদন্তপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন তাঁর কার্যালয়ের স্মারক নং- ৩১.০২.৪৯৫২,০০০,০৪,০০৩,২২-৭৯১, তারিখ: ২৮/১১/২০২২ খ্রিঃ পত্রমূলে জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম বরাবর প্রেরণ করা হয়। উক্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুড়িগ্রাম এর আর.এম. শাখার স্মারক নং-০৫.৪৭.৪৯০০,০২১.০১.০০১.২১. ৪৬, তারিখ: ১৬/০১/২০২৩ খ্রি: পত্র মূলে আরাজি পলাশবাড়ী গুচ্ছগ্রামের জমি আর.এস. রেকর্ডে বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হওয়ায়; তা সংশোধনের জন্য এবং এস.এ. রেকর্ড মোতাবেক ভূমি উন্নয়ন কর আদায়সহ যাবতীয় কার্যক্রম চালু রাখার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি), কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উক্ত পত্র প্রাপ্তির পর সহকারী কমিশনার (ভূমি), কুড়িগ্রাম সদর,কুড়িগ্রাম কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি ।
এদিকে সরকারি এস.এ. ১ নং খাস খতিয়ানের জমি ভুলক্রমে আর.এস, রেকর্ডে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বিভিন্ন খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করার কোন প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডকৃত জমি আর.এস. রেকর্ড মোতাবেক রেজিস্টার-২ এ অন্তর্ভুক্ত করে ভূমি উন্নয়ন করার প্রক্রিয়া চালানোর অপচেষ্টা চলছে। এস.এ. ১ নং খাস খতিয়ানের জমি আর.এস. রেকর্ড মোতাবেক ব্যক্তির অনুকূলে কোন প্রকার কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে গুচ্ছগ্রামের অধিবাসী মানুষ জমিসহ বাস্তুহারা হয়ে যাবে। এ কারণেই গুচ্ছগ্রাম এলাকাবাসীর দাবি সরকারি জমি ব্যক্তিমালিকানায় আর.এস. রেকর্ডকৃত জমি যাতে ব্যক্তিমালিকানায় কোন প্রকার দাখিলা, ডি.সি. আর, প্রদান করা না হয়।
সরকারি উদ্যোগে এস.এ. ১ নং খাস খতিয়ানের জমি ভুলক্রমে আর. এস. রেকর্ডে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে আর.এস. রেকর্ডভুক্ত হওয়ায়; তা সংশোধনের জন্য উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি), কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রামকে সদয় নির্দেশনাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে আর.এস. রেকর্ডকৃত জমির কোন প্রকার দাখিলা, ডি.সি.আর. প্রদান করা না হয়; সেদিকেও সুদৃষ্টি রাখার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি), কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রামকে নির্দেশনা প্রদান করার জন্য গুচ্ছগ্রাম এলাকাবাসী ১১ জানুয়ারী’২০২৪ইং শনিবার সকালে বীর প্রতীক তারামন বিবির বসত বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আলেপ উদ্দিন, চান মিয়া, হাসেন আলী, আব্দুস সাত্তার, হানিফ উদ্দিন, রুবেল ইসলাম, আজিম মিয়া, আমিনুর ইসলাম, নুরুল ইসলাম, মোকলেছ সহ আরো অনেকে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :