ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত পিজি হাসপাতালের ডাক্তারের কেয়ারটেকার ওহাব হত্যাকান্ডের মুল পরিকল্পনাকারী আসামিসহ ৩জনকে গ্রেফতার করেছে ভাঙ্গা থানা পুলিশ। আটকের পর পুলিশ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে এক প্রেসব্রিফিং করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রেস ব্রিফিং সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার জামাল উদ্দিন খলিফা তার গ্রামের বাগান বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে চাকুরী করতেন ওহাব মাতুব্বর নামের এক বৃদ্ধা। গত বছরের জুন মাসে ওই চিকিৎসক মারা যান। তাকে দাফন করা হয় তার বাগানবাড়িতে।
গত ৮ জানুয়ারি সকালে নিহত কেয়ারটেকারের বোন নুরজাহান বেগম, নিহত ভাইকে শীতের ভিজানো চিতই পিঠা খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে আলেখারকান্দা গ্রামের ভাইয়ের কাছে যান। বাহির থেকে ভাইকে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়াশব্দ না পেয়ে ফিরে এসে মালিক (ডাক্তার সাহেবের মেয়ে কামরুননাহার হেনাকে) মোবাইলে ফোন করেন। তখন তারা জানায় এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের সঙ্গে কথা হয় না। পরবর্তীতে বাড়ির মালিকের মেয়ে স্থানীয় মনিরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তিকে তাদের বাড়িতে যেতে বলেন। তখন মনিরুজ্জামান এলাকার আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ওই বাড়িতে যান। অনেক ডাকাডাকি করে কেয়ারটেকার আব্দুল ওহাবের সাড়াশব্দ না পেয়ে একটি মইয়ের সাহায্যে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় উঠে রুমের দরজা খোলা দেখে তাদের সন্দেহ হয়, তখন তারা ভিতরে ঢুকে পচা দুর্গন্ধ পান। এক পর্যায়ে আঃ ওহাবকে (৭০) মৃত অবস্থায় হাত পা রশি দিয়া বাধা উপুড় অবস্থায় দেখতে পান। তখন তারা ৯৯৯ ফোন করে থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করেন।পরবর্তীতে নিহত কেয়ারটেকার ওহাবের বোন নুরজাহান বেগম (৭৫) বাদী হয়ে (নিহত কেয়ারটেকার ওহাব অবিবাহিত ছিলেন) গত ১০ জানুয়ারি থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে একটি এজাহার দাখিল করেন । মামলা নম্বর ১৭, তারিখ ১০/০১-২০২৫, ধারা ৩০২/৩৪।
পরে ভাঙ্গা থানার পুলিশ গতকাল ১৩ জানুয়ারি সোমবার ওই আলেখারকান্দা গ্রামের আল আমিন কাজী (৪০) কে পুলিশ সন্দেহভাজন গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। তার দেওয়া তথ্যে পার্শ্ববর্তী সদরপুর এলাকার অভি হাওলাদার (২৪) ও আব্দুর রহমান (২০) নামের আরো অনেক দুইজনকে গ্রেফতার করেন। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার হাতুড়ি ও স্ক্রু ড্রাইভার তথ্য মতে ১ নং আসামী আলামিনের বসত ঘর থেকে উদ্ধার করে জব্দ করেন পুলিশ।
এ ঘটনায় ভাংগা থানা অফিসার ইনচার মোকছেদুর রহমান জানান, আসামী তিনজনই আদালতে হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ডাক্তার জামাল উদ্দিন খলিফা মৃত্যুবরণ করেন। গত মাসে ২৬ ডিসেম্বর ডাক্তার সাহেবের ফ্যামিলি বেড়াতে আসেন দুইদিন অবস্থান করে ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরে যান । ১নং আসামী আল আমিন ভেবেছিল অনেক টাকা পয়সা গহনাগাটি এই বাড়িতে গচ্ছিত আছে। সেই চিন্তা নিয়ে পহেলা জানুয়ারি ভোররাতে ওই বাগান বাড়িতে প্রবেশ করে কেয়ারটেকার ওহাব আলামিনকে চিনে ফেলায় হত্যার পরিকল্পনা নেয়। তখন হত্যাকারীরা হাতুড়ি ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। অথচ বাড়িতে কোন টাকা পয়সা স্বর্ণালংকার কিছুই পায়নি ঘাতকরা।
খুন করে পহেলা জানুয়ারি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ৮ জানুয়ারি, নিহতের বোন বাদী হয়ে মামলা করেন ১০ জানুয়ারি, আসামিদের গ্রেফতার করা হয় ১৩ জানুয়ারি, প্রেস ব্রিফিং করা হয় ১৪ জানুয়ারি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :