মাইকেল মধুসূদন দত্ত যশোরের কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ পাড়ের সাগরদাঁড়ী গ্রামে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।বাংলা সাহিত্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন শেষে আজ ২৪ জানুয়ারি সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার উদ্বোধন।
আজ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭দিন ব্যাপী মধুমেলা অনুষ্ঠিত হবে। আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে মধুমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধান অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
মধুমেলা ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে মধুপল্লী। মেলার মাঠসহ কপোতাক্ষ নদ, মধুপল্লীতে কবির ভাস্কর্য, প্রসূতিস্থল, কবির স্মৃতিবিজড়িত আসবাবপত্র ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে।মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কপোতাক্ষ নদপাড়ের সাগরদাঁড়ী গ্রামে ১৮২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি জমিদার বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ও মা জাহ্নবী দেবীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতার আলিপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী। মহাকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এবছর সাগরদাঁড়ীতে জমকালো আয়োজন করা হয়েছে। মধুমেলা ঘিরে এক ধরনের উৎসবের আমেজ সেজেছে বর্ণিল সাজে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দুই ধার দর্শকদের মনোরঞ্জন আকর্ষণে টাঙ্গানো হয়েছে মধুমেলার ব্যানার ফেস্টুন।
মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্যান্ডেলসহ শিশু বিনোদনের সরঞ্জামদী, জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিস্টল বসানো হয়েছে। স্থানীয় দোকানদারদের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। মেলা প্রাঙ্গণের প্রস্তুতি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন অসংখ্য মানুষ।
সাগরদাঁড়িসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে মেলা দেখতে আত্মীয়স্বজন আসতে শুরু করেছে। দর্শনার্থী ও মধু প্রেমীদের বিনোদনের জন্য এবছর মধুমঞ্চে প্রতিদিনই মহাকবির স্মৃতিময় জীবনী নিয়ে দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিকদের আলোচনা ও দেশবরেণ্য খ্যাতনামা শিল্পীদের গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্যান্ডেলে যাত্রাপালা, সার্কাস, জাদু প্রদর্শনী ও মৃত্যুকূপ থাকছে। এছাড়াও শিশুদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, শিশু বিনোদনসহ নানা আয়োজন। এছাড়াও থাকছে আকর্ষণীয় কৃষিমেলা।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, আয়োজক কর্তৃপক্ষ মধু মেলাকে সুন্দর ও স্বার্থক করতে খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। মধুমেলা প্রাঙ্গণ সুসজ্জিত করতে মধু মঞ্চসহ মেলা প্রাঙ্গণে সার্কাস, যাত্রাপালার প্যান্ডেল, যাদুর
প্যান্ডেলসহ শিশু বিনোদনের সরঞ্জাম বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাগরদাঁড়ীর মধুপল্লীতে নিয়োজিত কাস্টোডিয়ান হাসানুজ্জামান জানান, কবির টানে তার জন্মভূমি সাগরদাঁড়ীতে দর্শনার্থী আসা শুরু করেছে। শুক্র, শনিবার সরকারি ছুটিতে ভিড় জমবে। মধুপল্লী সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। বিদেশী পর্যটক ৩০০ টাকা, সার্কভূক্ত দেশ সমুহের পর্যটক ১০০ টাক, দেশী পর্যটক ২০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিকের স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা প্রবেশ মূল্য টিকিট সংগ্রহ করে দর্শনার্থীরা মধুপল্লিতে কবির ভাস্কর্য, পুকুর ঘাট, প্রসূতিস্থল, কাছারিবাড়ি, স্মৃতিবিজড়িত আসবাবপত্র ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র দেখতে পারবেন। মেলার মাঠের ইজারাদার আকরাম হোসেন খান জানিয়েছে, মেলার মাঠে আসা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিনোদনের জন্য সব ধরনের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর মধুমেলায় মানুষের ভিড় ছিল বেশি। সে কারণে দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিনোদন ও স্টল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবারের মেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। মেলাকে কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে আমার আপনজন হলেও তাকে ছাড় দেয়া হবে না। কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব এবং কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলার সকল প্রস্তুতি শেষ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি
সম্পন্ন করা হয়েছে। পুলিশ, বিজিপি, আর্মিসহ সকল বাহিনী মেলাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। থাকবে ভ্রাম্যমান আদালতও। সিসি ক্যামোররা আওয়াতায় থাকা মেলায় পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :