বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের আদলে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় গড়ে উঠছে একটি মিনি সুন্দরবন, যা এখন এক অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক দৃষ্টিনন্দন স্থানে পরিণত হয়েছে। চিত্রা নদীর দুইকুলে বিস্তৃত এই অঞ্চল এখন নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি, শাখাপ্রশাখার ঘনত্ব ও পাখিদের কলতানে মুখরিত।
এলাকার মানুষদের জন্য এটি যেমন জীবিকার উৎস, তেমনি এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি। রায়গ্রাম, শুড়িগাতী, খিলিগাতী, ডুমুরিয়া, আরু-লিয়া, খড়িয়াসহ প্রায় ১৫-২০টি গ্রাম এই বনাঞ্চলের পাশে অবস্থান করছে, যেখানে নদীর উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে।
এখানে বেড়ে উঠছে সুন্দরী, গোলপাতা, কেওড়া এবং আরও বহু প্রজাতির গাছপালা, যা এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখির আগমনও এই বনের বৈচিত্র্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখানে বসবাসকারী প্রায় ৫০ প্রজাতির পাখির মধ্যে ঘুঘু, শালিক, টিয়া, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বক এবং দোয়েল অন্যতম।
প্রাকৃতিক এই সঙ্কুল পরিবেশে রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীও। বাঘডাসা, খাটাশ, তক্ষক, বনবিড়াল, শিয়াল, গুঁইসাপসহ আরও অনেক বন্যপ্রাণি এই বনাঞ্চলের আশ্রয়ে জীবনধারণ করছে।
এলাকার পল্লী চিকিৎসক হরেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, ‘এটি অপার সম্ভাবনাময় একটি মিনি সুন্দরবন, যা প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে দিনে দিনে বেড়ে উঠছে।’
চিতলমারী প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল হক মুন্সী বলেন, ‘এটি এখন কেবল গ্রামবাসীর জন্য নয়, বরং দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটক ও পরিবেশপ্রেমীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।’
অপরদিকে, বন বিশেষজ্ঞরা এ বনাঞ্চল পরিদর্শন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যা এলাকার পরিবেশের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। এখানকার মানুষও এই বনকে সংরক্ষণের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন, যাতে এটি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে টিকে থাকে।
এখন এলাকাবাসীর একান্ত ইচ্ছা, যদি কর্তৃপক্ষ এই বনাঞ্চলকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে, তবে শুধু চিতলমারী নয়, গোটা দেশের জন্য এটি হবে এক অসাধারণ প্রাকৃতিক সম্পদ।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :