বাংলাদেশে মিষ্টি আলু একটি অবহেলিত ফসল তারপরেও প্রতিবছরই এ মিষ্টি আলুর চাষ করে আসছে কৃষকরা। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই ক্ষেত থেকে আলু তুলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার পাশাপাশি বাজার দর ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে এখন রঙ্গিন হাসি।
সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের ধারাবর্ষা বড়বাড়ীয়া, কৈজুরী, কান্দারপাড়া, সৈয়দপুর, বয়সিংহ ও ভাটারা ইউনিয়নের ভাটারা, মোহনগঞ্জ, কাশারীপাড়া, পাখাডুবী, ফুলবাড়িয়া, পারপাড়া, গোপীনাথপুর, কৃষ্ণপুর, চর হরিপুর এলাকায় আলু ব্যাপকভাবে চাষ হয়েছে।
সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ও ভাটারা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মিষ্টি আলু সবুজ পাতায় ছেয়ে আছে ফসলের মাঠ। পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরা আলু কুড়িয়ে এক জায়গায় স্তুপ করছে। দিনের শেষে মিষ্টি আলু ক্ষেতে বসেই মেপে বস্তাবন্দি করছে কৃষকরা। পরে ক্ষেত থেকেই এই আলু ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে বেপারীরা।
কেউ কেউ আবার আলুর লতা গবাদি পশুর জন্য যত্ন করে ঘোড়ার গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে বাড়ী। সব মিলিয়ে কৃষকদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
কৃষক একাব্বর আলী, রমজান আলী, সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, ‘অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চারা রোপন শুরু হয় এবং ফাল্গুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ক হয়ে উঠে এবং উপশী হাইব্রিড জাতের মিষ্টি আলু ৯০ দিনেই তোলা যায়। এবার আলু চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকেই আবার মাঠ থেকেই আলু বিক্রয় করে দিচ্ছেন। খরচের তুলনায় লাভ ভালোই পাচ্ছে অনেকে।
একই এলাকার কৃষক করম আলী জানান, তিনি এ মৌসুমে ৫২ শতাংশের ৩ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছেন। প্রতি শতাংশে দুই মণের বেশি মিষ্টি আলুর ফলন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু পেয়েছি একশো মণের উপরে। প্রতি মণ মিষ্টি আলু পাইকারি বিক্রি করছি ১ হাজার থেকে ১২শত টাকা দরে। ১ বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। বিক্রি করেছি ১ লাখ টাকা। খরচ বাদে তার লাভ হয় ৭০ হাজার টাকা। যা কিনা অন্য কোন ফসল করে এতো লাভ করা সম্ভব না।
কৃষকরা আরো জানান, মিষ্টি আলুর চাহিদা ঢাকাতে অনেক বেশি। তাই এলাকা থেকে ১ হাজার হতে ১২শ টাকা মণ কিনে বেশি দামে বিক্রি করেন বেপারীরা। এসব মিষ্টি আলু ব্যাপারীরা ট্রাক বোঝাই করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যান। তবে আলু তুলার সময় এখন প্রায় শেষের দিকে এখন একটু দাম কম তবে শুরুতে অনেক ভালো দামেই অনেকে বিক্রি করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, এ বছরের মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮০ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষ হয়েছে ৬৭৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৯৫ হেক্টর বেশি হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই বোরো মৌসুম শুরু হবে। তাই কৃষকরা আলু তুলে বোরো চাষের প্রস্তুত হচ্ছেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :