কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদের ওপর নির্মাণাধীন সোনাহাট সেতুর কাজ দুই বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চার দফা সময় বাড়িয়েও ছয় বছরে সম্পন্ন হয়নি। ১৩৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য সেতুর অগ্রগতি মাত্র ৫৬ শতাংশ। দীর্ঘ সময় ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা, পণ্যবাহী যানবাহন এবং ব্যবসায়ীরা।
নতুন সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় শতবর্ষ পুরোনো ও জরাজীর্ণ রেলসেতুর ওপর নির্ভর করছে সোনাহাট স্থলবন্দরগামী যানবাহন ও স্থানীয় জনগণ। সরু ও দুর্বল কাঠামোর কারণে একমুখী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে যাত্রীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সীমান্তবর্তী বঙ্গসোনাহাট, বলদিয়া, চর ভূরুঙ্গামারী, আন্ধারীঝাড় ও তিলাই ইউনিয়নের পাশাপাশি নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাস ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের লাখো মানুষ এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন উঠলেই কাঁপতে থাকে, সৃষ্টি হয় ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি।
২০১৯ সালে ৬৪৫.০১৫ মিটার দীর্ঘ সোনাহাট সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। ২০২১ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, নকশা পরিবর্তন, করোনাকালীন স্থবিরতা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ধীরগতির কারণে সময় চারবার বাড়ানো হয়েছে।
সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেতুর অভাবে পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন্দর কার্যক্রম ও সরকারের রাজস্ব আদায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শফিকুল, শাহজাহান, মাসুদ, জুলহাস ও ফরিদুল জানান, "ভূরুঙ্গামারী বা জেলা শহরে যেতে হলে আমাদের এই নড়বড়ে সেতুর ওপর নির্ভর করতে হয়। একপাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে অন্যপাশের গাড়ি পার করাতে হয়, এতে সময় নষ্ট হয়। প্রতি বছর শুনি নতুন সেতু চালু হবে, কিন্তু এখনো অর্ধেক কাজও হয়নি।"
স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, সাইফুর রহমান, নুর হোসেন ও জহুরুল ইসলাম জানান, "আমরা ঠিকমতো পণ্য পরিবহন করতে পারছি না। গাড়ি লোড করলেই সেতুতে ঝুঁকি তৈরি হয়। দ্রুত নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা না হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।"
সওজ কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, "পুরোনো সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন সেতুর ৫৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পাইলিংসহ কিছু গার্ডার স্থাপনের কাজ হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে ২০২৬ সালের জুন নাগাদ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।"
সোনাহাট সেতুর নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা ও বারবার সময় বাড়ানোয় স্থানীয়দের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। স্থলবন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষতিও বাড়ছে। দ্রুত সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী, ব্যবসায়ী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :