AB Bank
ঢাকা রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

তানোরের কৃষকরা আগাম আলু চাষে লোকসান গুনছেন দ্বিগুণ


Ekushey Sangbad
সারোয়ার হোসেন, তানোর, রাজশাহী
০৫:১৩ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
তানোরের কৃষকরা আগাম আলু চাষে লোকসান গুনছেন দ্বিগুণ

লাভের আশায় আগাম আলু চাষ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে রাজশাহীর তানোরের চাষীদের। উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন চাষীরা। যে পরিমান খরচ হয়েছে তার অর্ধেক টাকাও তুলতে পারছেন না চাষীরা। এতে করে মাথায় হাত পড়েছে আগাম আলু চাষীদের। কারন রোপনের সময় বীজ সার বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে। এজন্য খরচও অনেক বেশি হয়েছে বিগত বছরের তুলনায়। ফলে লোকসানে দিশেহারা চাষীরা।

গুবিরপাড়া গ্রামের আলু চাষী মমিন গত বৃহস্পতিবার ডাকবাংলো মাঠের উত্তরে  দেড় বিঘা জমিতে আগাম আলু উত্তোলন করেছেন। সে জানায় গত বছর দেড় বিঘা জমিতে আলু চাষ করে দ্বিগুণ লাভ হয়েছিল। এবারো লাভের আশায় সবকিছু বাড়তি দামে কিনে দেড় বিঘা জমিতে আলু চাষ করে গত বৃহস্পতিবার উত্তোলন করেছি। প্রতি কেজি আলু ১৪ টাকা ২৫ পয়সা দরে বিক্রি করেছি। দেড় বিঘা জমিতে ৭০ কেজির বস্তায়  ৪০ বস্তা করে  ফলন হয়েছিল। দেড় বিঘা জমিতে খরচ হয়েছিল ৭১ হাজার টাকা। ৪০ বস্তার বিপরীতে ৩১ হাজার টাকা পেয়েছি। ৪০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। 

কামারগাঁ ইউপির জমসেদপুর মাঠে ৪ বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করে প্রচুর লোকসান গুনতে হয়েছে চাষী ওলিকে। তিনি জানান সবকিছু বাড়তি দামের কারনে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা করে। বিঘায় ফলন হয়েছে ৩৪ বস্তা করে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ১৪ টাকা কেজি দরে। ৪ বিঘায় লোকসান প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা হবে। সে আরো জানায় একই মাঠে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লাভের আসায় ২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে আনোয়ারকে। একই মাঠে ফটিক নামের আরেক চাষী ৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রতি বিঘায় ফলন হয় ৪০ বস্তা করে। সাফিউল ২ বিঘাতে আলু চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন।

সাত বছর পর লাভের আশায় আগাম আলু চাষ করে খরচের অর্ধেক টাকাও তুলতে পারেননি গুবিরপাড়া গ্রামের চাষী মনি। তিনি জানান বিলের উপরের ১৬ কাঠা জমিতে আগাম আলু চাষ করে ফলন পেয়েছি ২০ বস্তা ।  ১৬ কাঠা জমিতে খরচ হয়েছিল ৩১ হাজার টাকা। প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১৪ টাকা ২৫ পয়সা করে । সেই হিসেবে ১৬ কাঠা জমিতে লোকসান ১৩ হাজার টাকা। তবে নিজস্ব জমির জন্য কিছুটা খরচ কম হয়েছে। 

ধানতৈড় গ্রামের কৃষক মুনসুর জানান, কয়েকদিন আগে গোকুল গ্রামের এনামুল ৪ বিঘা জমিতে আলু উত্তোলন করেছে, বিঘায় ৩৪ বস্তা করে ফলন হয়েছে। প্রতি কেজি ১৪ টাকা করে বিক্রি করেছে। একই গ্রামের রাব্বানী ২ বিঘা, ইব্রাহিম ১ বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করে মাথায় হাত পড়েছে।  

ধানতৈড় গ্রামের  জাহাঙ্গীর ৬ বিঘা, বিঘায় ২০ বস্তা করে ফলন, বিক্রি ১৩ টাকা কেজি। ইয়াসিন, ৩ বিঘা, ফলন ৩০ বস্তা করে, বিক্রি ১৪ টাকা কেজি। দীর্ঘ দিনের আলু চাষী জিওল গ্রামের  আলী হোসেন জানান, প্রতি বছর বিল কুমারী বিলের রহিমা ডাংগা নামক মাঠে কয়েক গ্রামের চাষীরা আগাম আলু চাষ করে থাকেন। আমি  ৬ বিঘা, জমিতে আগাম আলু চাষ করে প্রচুর লোকসান  হয়েছে।  প্রায় ১২ দিন  আগে আলু উত্তোলন করে   সাড়ে ১৩ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয়েছে।  বিঘায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এক বিঘায় আলু বিক্রি করে ৪২/৪৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।  ৬ বিঘায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা  লোকসান। একই গ্রামের মুনজুর ৫ বিঘা, একসাথে উত্তোলন বিক্রি , সুজনের ৫ বিঘা একই অবস্থা। তবে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে সিরাজ আলী ২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রতি কেজি ২২ টাকা দরে বিক্রি করেছে। ইয়াদালি দেড় বিঘা ও এমদাদ ২ বিঘায় উত্তোলনের পর ২২ কেজিতে বিক্রি করে খরচের টাকা তুলতে পেরেছেন। 

চাষীরা জানান, আলু রোপনের জন্য এত পরিমান খরচ হত না। কারন বীজ সার দ্বিগুণ দামে কিনতে হয়েছে। এক বস্তা ব্র্যাকের বীজ কিনতে হয়েছে প্রকার ভেদে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে। বিগত কয়েক মৌসুমে বাম্পার লাভ পেয়ে আলু চাষে সবাই ঝুকে পড়েছে । সেই সুযোগে বীজ সার ও জমি লীজে প্রচুর বাড়তি টাকা গুনতে হয়েছে। আলু চাষে এক প্রকার প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলেন চাষীরা। একারনে উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেশি। এখন আগাম আলুতে উৎপাদন খরচ তো দূরে থাক আসল টাকাই উঠছেনা। আবার ভোক্তারা ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে আলু কিনছেন। কিন্তু যে চাষী দিনরাত পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করছে সে খরচের টাকা তুলতে পারছেনা। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে আগাম আলু ২২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এদর কয়েক দিন ছিল। হঠাৎ করেই ১৩/১৪ টাকা কেজিতে নেমে আসে। এসব দর দাম কে নির্ধারণ করে কিছুই জানা থাকেনা। অথচ কৃষি বিপণন বিভাগ থাকলেও পণ্যের দর দামে তাদের কোন ভূমিকায় থাকে না। আলু উত্তোলনের সময় দাম কমে যায়, আবার কয়েক মাস পর বেড়ে যায়। আলুর দর দাম মুলত ঠিক করে থাকেন হিমাগারের মালিকেরা। তাদের সংগঠন আছে সেখান থেকেই চলে এসব সিন্ডিকেট। চাষী ফসল উৎপাদন করবে তার সঠিক দাম পাবে না, এটা কোন অরাজকতা। যদি কৃষি বিপণন বিভাগ কি পরিমান খরচ হয়েছে, কি পরিমান দর দাম থাকলে লোকসান হবে না। এসব নিয়ে কাজ করলে চাষীদের রক্ত ঘামের মূল্য থাকত। যারাই খাদ্য উৎপাদন করে দেশের মানুষের চাহিদা মিটাচ্ছে, তাদের কপালেই যত দুর্ভোগ যত দূর্যোগ। আলুতে একটু দাগ থাকলে সেটি ৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। 

কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, এবারে আলুর লক্ষমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩২০ মে: টন।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!