ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে স্বল্প দূরত্বে কমসময়ে সাশ্রয়ী ভাড়ায় খুলনা ও বেনাপোল রুটে দুটি নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ ও ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ চালু হলেও সুবিধা পাচ্ছে না মাদারীপুর, শরীয়াতপুর ও মুন্সিগঞ্জের তিন জেলার পদ্মা পাড়ের মানুষ। নতুন এই ট্রেনের পদ্মা পাড়ের জেলাগুলোতে নেই কোন স্টপেজ। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ পদ্মা সেতু নির্মাণে সবচেয়ে বেশি অবদান এই ৩ জেলার মানুষের। দ্রুত এই অঞ্চলে রেলস্টশনে স্টপেজের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে থামবে। শরীয়াতপুর থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার ও মাদারীপুর থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার পথ। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা জংশন স্টেশনের মাঝে আর কোন স্টপেজ নেই। এজন্য ঢাকা এবং ভাঙ্গার মাঝে পদ্মা স্টেশন ও শিবচর স্টেশন স্টপেজের দাবি জানিয়েছে শিবচর উপজেলাবাসী।
তাদের দাবি পদ্মা স্টেশন ও শিবচর স্টেশনে ট্রেন স্টপেজ দিলে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার মানুষেরা এই স্টেশন থেকে স্বল্প দূরত্বে কমসময়ে সাশ্রয়ী ভাড়ায় সহজেই খুলনা ও বেনাপোল রুটে যাতায়াত করতে পারবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কাশিয়ানী-নড়াইল দিয়ে খুলনা ও বেনাপোল রুটে নতুন দুই জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ``জাহানাবাদ এক্সপ্রেস`` ও ``রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস" চালু হয়েছে। এ ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। এছাড়া বাকি ছয় দিন চলাচল করবে। এ দুুটি ট্রেন দিনে দুইবার খুলনা-ঢাকা এবং ঢাকা-বেনাপোল পথে চলাচল করবে। খুলনার ট্রেনটি নোয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী জংশন, ভাঙ্গা জংশন বিরতি দেবে। আর বেনাপোলের ট্রেনটি যশোর জংশন, নড়াইল, কাশিয়ানী, ভাঙ্গা জংশন ষ্টেশনে বিরতি দেবে।
দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত নতুন এই রুটে ট্রেন চলাচলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ উচ্ছ্বসিত হলেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে পদ্মা পাড়ের জেলাগুলোর মানুষের মাঝে। মাদারীপুরের শিবচর স্টেশন, পদ্মা সেতু সংলগ্ন পদ্মা স্টেশন, মুন্সীগঞ্জের পাড়ের কোন স্টেশনেই এ দুটি ট্রেনের বিরতি না থাকায় এ ট্রেন সার্ভিস থেকে বঞ্চিত মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ জেলার যাত্রীরা। এ ট্রেন সার্ভিস পেতে এই ৩ জেলার মানুষকে ঢাকা অথবা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যেতে হবে। তাই রেলপথ বিভাগের দূরদর্শিতা নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। নতুন রেল সার্ভিস বঞ্চিত হয়ে ক্ষুদ্ধ পদ্মা পাড়ের মানুষ।
পদ্মা স্টেশনে সেলিম মোল্লা নামের এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া বা আশা ছিলো যে আমরা ট্রেনে চড়ে বেনাপোল যাবো। সেই চাওয়াটা পূরণ হয়েছে কিন্তু যে দুইটা ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা ও বেনাপোল যাবে সেই ট্রেনের স্টেপেজ এখানে না থাকায় আমাদের আশা ভঙ্গ হয়েছে। পদ্মা স্টেশনটা গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন এই স্টেশন থেকে আশপাশের দুই জেলার মানুষ এখান থেকে ট্রেনে উঠানামা করে। সেজন্য আমাদের দাবি এখানে যেন ট্রেন স্টপেজ দেয়।
শিবচর স্টেশনে হুমায়ন কবির নামের এক যাত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ না হলে আজ রেল পথ নির্মাণ হওতো না। পদ্মা সেতু ও রেল পথ নির্মাণের জন্য মন্সিগঞ্জ, শরিয়াতপুর, মাদারীপুর জেলার মানুষের সব চেয়ে বড় ত্যাগ করতে হয়েছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর দক্ষিণ পাড়ে দুটি স্টেশন রয়েছে অথচ একটিতে নতুন দুটি ট্রেন থামছেনা। আমাদের হয়তো ঢাকার কমলা পুর অথবা ফরিদপুরের ভাঙা স্টেশনে গিয়ে উঠতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি সরকার অতিদ্রুত এখানে ট্রেন থামার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শিবচর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. সেলিম হোসেন জানান, ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল রুটে নতুন দুই জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ ও ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ চালু হয়েছে। এই ট্রেন দুটি আপাতত পদ্মা স্টেশন বা শিবচর স্টেশন কোন টাতেই থামছে না। এটি থামবে ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে। যাত্রীদের ওই স্টেশনে গিয়েই উঠতে হবে। তবে যাত্রীেদের চাপ বাড়লে পরবর্তীতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখানে স্টপেজের বিবেচনা করবেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :