AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

দুর্নীতি অনিয়মে জৌলুস হারাচ্ছে গাজীপুর সাফারি পার্ক


Ekushey Sangbad
টি আই সানি, শ্রীপুর, গাজীপুর
০৩:৩৮ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
দুর্নীতি অনিয়মে জৌলুস হারাচ্ছে গাজীপুর সাফারি পার্ক

গাজীপুর সাফারি পার্কে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা যেন দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। এতে পার্কে বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পর্যটক, দর্শনার্থী ও স্থানীয় লোকজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্কের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কেটে পাচার, প্রাণী মৃত্যু ও রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা ঘটছে নিত্যদিন। গত ১৬ জানুয়ারি পার্কের দেয়াল টপকে পালিয়ে গেছে একটি নীলগাই। এখনও সেটি উদ্ধার করা যায়নি। এর আগে ২০২১ সালে একই পার্ক থেকে একটি নীলগাই পালিয়ে গিয়েছিল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের আঁধারে পার্কের বনাঞ্চলের গাছ কাটা হয়। দীর্ঘদিন ধরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এসব গাছ পাচার হচ্ছে। ওই সময় কাটা গাছ পড়ে শব্দ হওয়ায় আতঙ্কে দেয়াল টপকে পালিয়ে যায় নীলগাই। সেটি শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করলেও এখনও উদ্ধার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি পার্কটির বিভিন্ন প্রকল্প ইজারা না দেওয়ায় রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

ভাওয়ালের শালবনের ৩ হাজার ৮১০ একর ভূমি পার্কের আওতায় ছিল। একসময় এখানে ঘন বৃক্ষরাজি থাকলেও কর্তৃপক্ষের গাছ পাচারের ফলে বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। গাছ কাটার নিয়ম না থাকলেও কাটা হচ্ছে।

পার্কের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, কচ্ছপ বেষ্টনীর দক্ষিণ পাশে এবং ঝুলন্ত সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে একাধিক আকাশমণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রাতের আঁধারে কেটে পাচার করা হয়েছে। কোর সাফারিতে প্রবেশের ডান পাশে নিয়মনীতি না মেনে একাধিক দোকান বসিয়েছেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। এতে করে পার্কের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রাণীদের বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পার্কে প্রবেশের দায়িত্বে থাকা ধনারঞ্চজন ধনা ভ্রমনের জন্য আসা বিভিন্ন পার্টি, স্কুল, কলেজ ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাথে তার সোর্সের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। যদি ওইসব প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের ১’শ থেকে দুই’শজন সাফারি পার্ক ভ্রমণে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে তাখন ৩০ থেকে ৫০জন লোককে ফ্রি (টিকেট ছাড়াই) পার্কে প্রবেশের অনুমতি দেয়। পরে ওই টিকেটের মুল্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ধনারঞ্চজন ধনা এবং তাদের সোর্স  ভাগাভাগি করে নেন। এ ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রে। শুধু পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে তারা এসব করেন বলে পার্কের বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে।

ম্যাকাউ পাখিশালার দায়িত্বে থাকা রোকন উদ্দিন দর্শনার্থীদের শরীরে, কাধে এবং হাতে ম্যাকাউ পাখি বসিয়ে সেলফি তুললে ওইসব দর্শনার্থীদের কাছ থেকে জন প্রতি ৩০ থেকে ৫০ অথবা ১’শ টাকাও নিয়ে থাকে। যদিও পাখি দর্শনার্থীদের শরীরে বা কাধে তুলে দেওয়ার কোনো নিয়ম নাই।

বিকেল ৪টার পর থকে কোর সাফারি পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রেও রয়েছে অনিয়ম। দর্শণার্থী সেখানে প্রবেশের সময় টিকেটের মূল্য রেখে টিকেট না দিয়েই কোর সাফারি পার্কে প্রবেশের অনুমতি দেয়। ওইসব প্রতি টিকেটের মূল্য ১৫০ টাকা। বিকেল ৫টার পর কোর সাফারি পার্কে দর্শণার্থী প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও রফিকুলের নির্দেশে অনিয়ম করে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে দর্শণার্থী প্রবেশ করানো হয়। ওই সময়ে প্রায় ৭০ থেকে ১’শ দর্শণার্থী কোর সাফারি পার্কে প্রবেশ করে।

পার্কের বিভিন্ন স্থান সংষ্কার না করায় হারাতে বসেছে দর্শকদের আকর্ষণ ও নিজস্ব জৌলুস। রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পার্কের এসব অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবী জানিয়েছেন পার্কে বেড়াতে আসা পর্যটক, দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, এসিএফ রফিকুল ইসলামের ভাগনির জামাতা আলামিনকে চুক্তিভিত্তিক পার্কের গাড়ীর চালক পদে নিয়োগ দেয়। গত ১৫ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পার্কের ভেতর থেকে পিকআপে করে গাছ কেটে নিয়ে যায়। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে স্থানীয় নতুন বাজার এলাকার একটি স-মিলে বিক্রি করার সময় জনতা হাতেনাতে আটক করার পর রফিকুল ইসলাম (এসিএফ) তার লোকজন নিয়ে চালক আলামিনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্কের ভেতরে কর্মরত বন বিভাগের এক কর্মচারী বলেন, কচ্ছপ ও সাপ বেষ্টনির দক্ষিণ পাশ থেকে এসিএফ স্যারের নির্দেশে ১৫টি বড় বড় আকাশমনি গাছ কেটে বিক্রি করা হয়। পার্কের ভেতরে উটপাখি বেষ্টনীর পশ্চিম পাশে আগুন লাগিয়ে গজারি গাছের কপিস পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় বন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৫ আগস্টের পর থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার নিজস্ব লোক দিয়ে মেইন গেটের বাইরে ইজারা বিহীন দোকান বসিয়ে প্রতিদিন টাকা উত্তোলন করছে। বিকেল ৪টার দিকে দেখা যায় কোর সাফারি পার্কে দায়িত্বে থাকা ফরেস্টার হারুন, আশরাফুল ইসলাম এবং সুমন বড়–য়া দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ১’শ ৫০ টাকা নিয়ে টিকেট না দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করাচ্ছে। কোর সাফারি পার্কের পূর্ব পাশেও ইজারাবিহীন দুটি দোকান বসানো হয়েছে। ম্যাকাউ পাখি বেষ্টনীতে গিয়ে দেখা যায় দর্শনার্থীদের শরীরে ম্যাকাউ পাখি প্রদর্শন করে টাকা নিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর পার্ক থেকে পিকআপ ভর্তি গাছ পাচার হয়। কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও তার কিছু সহযোগী গাছ পাচারে ইন্ধন দিচ্ছেন। গত প্রায় একমাস আগে পার্কের ভিতর থেকে একটি নীলগাই সীমানা প্রাচীর টপকিয়ে বাইরে চলে যায়। ওই নীল গাইটি শ্রীপুরের আশপাশে বনে দেখা গেলেও পার্ক কর্তৃপক্ষ নীল গাইটি উদ্ধারে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। গত চারদিন আগে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকায় নীলগাইটি দেখে এলাকাবাসী পার্ক কর্তৃপক্ষকে জানালেও এলাকাবাসী পার্ক কর্তৃপক্ষের তৎপরতা দেখেনি।

রিভার এন্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সাফারি পার্কের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সরাসরি গ্রেফতারের দাবী জানান।

গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রফিকুল ইসলাম কোর সাফারি পার্কে টিকেট ছাড়া প্রবেশের কথা স্বীকার করলেও ভেতর থেকে গাছ কেটে বিক্রি করার কথা অস্বীকার করেন। পার্কের গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। পার্কে তার কোনো আত্মীয় নেই, এলাকার কিছু গরিব ছেলেকে কাজ দেওয়া হয়েছে। অন্য অভিযোগগুলো তিনি অস্বীকার করেন।

প্রধান বন কর্মকর্তা (সিসিএফ) আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, এসব অনিয়ম ও দুর্ণীতির বিষয়ে আমার পর্যন্ত এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। তারপরও আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে যেহেতু বিষয়গুলো জানতে পেরেছি বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিব তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণীত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর পার্কে একটি সিংহ ও একটি ওয়াইল্ডবিস্ট মারা যায়। ২০২২ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহের মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর পার্কে একটি জিরাফ মারা যায়। এতে পার্কে পুরুষ জিরাফের অভাবে প্রজনন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ২০২১ সালে তিনটি ক্যাঙ্গারু মারা যাওয়ার পর থেকে ক্যাঙ্গারু শূন্য হয়ে পরে পার্কটি।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!