AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বোয়ালখালী হযরত শোকর আলী শাহ ওরশ কাল


বোয়ালখালী হযরত শোকর আলী শাহ ওরশ কাল

চট্টগ্রামে বোয়ালখালীর ইমামুল্লার চর গ্রামের আলোক বর্তীকা যুগশ্রেষ্ঠ সাধক, মজ্জুবে মাজহর হযরত শাহসূফী শোকর আলী শাহ (রহঃ) একজন উচু মকামের আউলিয়া। 

উনার সময়ে উনার সমতুল্য বেশক আউলিয়া খুব বিরল ছিল। যার শান সম্পর্কে ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহঃ) আল কাদেরী তার লিখিত বিখ্যাত “দীওয়ানে আজিজ” কিতাবে বর্ণনা করে যান। যিনি দুনিয়াবি কোনো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিলেন না। শুধু প্রভূর প্রেমে ফানাফিল্লা-বাকাবিল্লা ছিলেন। 

তিনি দীর্ঘ ১২ বছর  বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা আধাঁর মানিক পাহাড়ের চূড়ায় আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের জন্য রেয়াজত ও আল্লাহ প্রেমে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। যার সাধনার স্থানটি এখনো অক্ষত আছে, উনার সাধনাস্থল এখনো পরিষ্কার রয়েছে, কোনো ঘাস বা আগাছা নেই বলে জানা যায়। কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে হযরত শোকর আলী শাহ আল মাইজভাণ্ডারীকে বনের পশুরা সম্মান করতো, বনের হাতির পাল তার কদমে লুটায় পড়তো। কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে যারা বিভিন্ন  ধরনের ফলের বাগান করে থাকে আজো তাদের মধ্যে কেউ হাতির কবলে পড়লে হযরত শোকর আলী শাহর নাম নিলে হাতি আত্মসমর্পণ করে থাকে এবং আক্রমণের হাত থেকে তারা রক্ষা পাই বলে মাঝে মধ্যে  দরবারে আসা অনেক আশেক ভক্তবৃন্দ বলে থাকে। এতে করে তারা বিভিন্ন সময় নজরানা নিয়ে আসে।

 হযরত শোকর আলী শাহ (রহঃ) এর বেশিরভাগই ভক্তবৃন্দ আহলা কড়লডেঙ্গা অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। কারণ তার সাধনার স্থান ছিল ওখানে। তিনি সংসার, ঘর-বাড়ি ত্যাগ করে কঠোর রেয়াজতের জন্য পাহাড়ের নির্জন জায়গায় চলে যান। পাকিস্তান আমলে বা ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত বাংলার মিনিস্টার সুলতান মিয়ার সহধর্মীনী ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হন, কোনো ডাক্তারি চিকিৎসায় ভালো হতে পারেনি। কারণ এটি হচ্ছে মরণব্যাধি ক্যানসার। যার চিকিৎসার ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। তো মন্ত্রী তার স্ত্রীকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, এমন এক সময় তিনি স্বপ্ন দেখেন যে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর অন্তর্ভুক্ত ইমামুল্লারচর গ্রামে শোকর আলী নামে একজন সাধকের বসবাস। তার নিকট আসলে তার উছিলায় এই রোগ থেকে তার স্ত্রী মুক্তি পাবে। 

তখন তিনি এই মহান হাস্তীর সন্ধান নিয়ে ইমাম উল্লার চর গ্রামে উনার নিকট হাজির হন। ঐ মুহূর্তে হযরত শোকর আলী শাহ (রহঃ) মজ্জুব হালে সিগারেট পান অবস্থায় ছিলেন। তখন তিনি সিগারেটের গোড়ার(শেষ) অংশটা মন্ত্রীর স্ত্রীকে খেতে বললেন। এবং পরবর্তীতে তিনি মরণব্যাধি ক্যানসার রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেন। তখন মন্ত্রী এই মহান হাস্তীর জন্য অত্র গ্রামে জায়গা দান করেন। পরবর্তীতে হযরত শোকর আলী শাহ আল মাইজভাণ্ডারী বেছাল হলে তাকে ওখানে সমাধিস্থ করা হয়। তৎকালীন এলাকার কিছু মানুষ বেড়া দিয়ে তার মাজার শরীফ নির্মাণ করেন। 

পরবর্তীতে এই অলির মাজার মিনিস্টার সুলতান মিয়ার পক্ষে পাকা বিশাল মাজার নির্মাণ করে দেন। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে অর্থাৎ ২০০৫-২০০৬ সালে এসে মিনিস্টার সুলতান মিয়ার কন্যা মরহুমা হোসনে আরা বেগম প্রায় অর্ধ কোটি টাকা খরচ করে সুন্দর নকশায় নতুন করে রওজা শরীফ নির্মাণ করে দেন। এর কয়েক বছর পর মন্ত্রীর বড় কন্যা জনাব জয়নাব মিল্কী মাজারের পাশে মসজিদ নির্মাণ করে দেন। এই মহান অলির বহু কারামতির কথা শোনা যেতো মুরব্বিদের মুখ থেকে। আশ্চর্য কারামত, এক সময় শোকর আলী শাহ নাকি বোয়ালখালী ও পটিয়ার সীমান্তবর্তী খাল বাগদণ্ডী খালের পাড়ে বসেছিলেন। তখন হযরত জনাব কেবলা আছাদ আলী ছাহেব কেবলার একজন মুরিদান খাল পাড়ের রাস্তা দিয়ে জনাব কেবলার জন্য কলসি ভর্তি গরুর দুধ নিয়ে যাওয়ার সময় শোকর আলী শাহর সাথে পথিমধ্যে দেখা হলে তিনি জনাব কেবলার মুরিদান থেকে জিজ্ঞেস করেন কলসিতে কি নিয়ে যাচ্ছো। তখন ঐ লোকটি শোকর আলী শাহ কে উত্তরে বললেন, আমি আমার পীরের জন্য দুধ নিয়ে যাচ্ছি। তখন শোকর আলী শাহ জনাব কেবলার মুরিদানকে বললেন, “কাজী ছাহেব কেবলা দুধ খাই, শোরাইল্লেপলা দুধ ন খাই”। 

তখন ঐ লোকটি বললো দুধ আমি আমার পীরের জন্য মানত করছি আপনাকে দিতে পারবো না। এমতাবস্থায় লোকটি দুধ না দিয়ে জনাব কেবলার কাছে দুধের কলসিটা নিয়ে গেলে জনাব কেবলা খালি কলসি দেখে। তখন সাহেবে কাশফ কারামত জনাব কেবলা তার মুরিদ থেকে জিজ্ঞেস করল, আসার পথে কি তোমার কাছ থেকে একজন পাগলের মত লোক দুধ চাইছিলো। উত্তরে শিষ্য বলল, হা বাজান আমি আসার পথে শোরাইল্লা পলা নামে একজন দুধ চাইছিলো। তৎক্ষণাৎ জনাব কেবলা আর দেরি না করে শোরাইল্লা পলার নিকট কলসিটা নিয়ে পাঠালো। তিনি বলল, আমাকে কলসিটা নিয়ে আমার পীর আবার আপনার থেকে দুধ ফিরিয়ে নিতে বলল। আপনি যে আল্লাহর একজন মহান সাধক আমি তা বুঝতে পারিনাই। তো শোকর আলী শাহ কলসিতে হাত লাগালে তখন কলসি ভর্তি আবার দুধ হয়ে গেলে, তিনি তা আবার পীরের নিকট কলসি ভরা দুধ নিয়ে যায়। একদা হযরত গাউছুল আজম হযরত শাহসূফী সৈয়দ গোলামুর রহমান প্রকাশ বাবা ভাণ্ডারী কেবলা কাবা জীবদ্দশায় আহলা দরবার শরীফে ১৫ দিন অবস্থান করেছিলেন। তখন হযরত শোকর আলী শাহ নাকি কোনো একটা রোগে ভোগছিলেন। 

তখন শোকর আলী শাহার আম্মাজান আহলা দরবার শরীফে মাইজভাণ্ডার থেকে হযরত বাবাভাণ্ডারী আসার খবর শুনতে পেলে শোকর আলী শাহকে দোয়া ও আর্জির জন্য পাঠায়। তখন আহলা দরবারে একটা মজলিস নাকি মাহফিল চলছিলো। মজলিসে গাউছুল আজম বাবা ভাণ্ডারী জনাব কেবলাকে এক গ্লাস দুধ পান করার জন্য দেয়ার সময় হুট করে শোরাইল্লা পলা কোত্থেকে এসে বাবা ভাণ্ডারীর হাত মোবারক থেকে কেঁড়ে নিয়ে খেয়ে পেলেন। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা মতভেদ আছে যে, আহলা দরবার সূত্রে থেকে জানা যায় যে, জনাব কেবলাকে দুধ দিলে জনাব কেবলার কাছ থেকে তা শোকর আলী শাহ কেঁড়ে নিয়ে পান করে নেন। সেই হিসেবে জনাব কেবলা থেকে খেলাফত পেয়েছে বলেও জানা যায়। 

এর পর থেকে তিনি আর বাড়ি-ঘরে থাকতে পারেনি। তিনি পাগলের ন্যায় দিক বেদিক ছুটে চলে। নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে মওলার সান্নিধ্য লাভের জন্য কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে সাধনার জন্য চলে যায়। দীর্ঘ ১২টি বছর পাহাড় জঙ্গলে কাটিয়ে দেন। এরপর থেকে তিনি আধ্যাত্মিকতা লাভ করেন এবং তার নানা কারামত প্রকাশ পেতে থাকে। হযরত শোকর আলী শাহ আল মাইজভাণ্ডারীর পৈতৃক নিবাস পশ্চিম সারোয়াতলী। ইমাম উল্লার চর গ্রামে তার নানার বাড়ি। তিনি নানা বাড়িতেই বেশি থাকতে পছন্দ করতেন। তাই উনার বেছাল শরীফে তাকে ইমাম উল্লার চর গ্রামেই সমাধিস্থ করা হয়।

 তিনি ১৯৪৩ সালের ২১ মে বাংলা ১২ই জৈষ্ঠ্য শুক্রবার দুনিয়ার বাড়ী থেকে শেষ নিঃশ্বাস   ত্যাগ করেন। উনার রওজার পূর্ব পাশেই উনার সহধর্মিণীর রওজা শরীফও রয়েছে। হযরত শোকর আলী শাহ আল মাইজভাণ্ডারী (রহঃ) এর কোনো সন্তান-সন্তুতি নেই। যুগ যুগ ধরে উনার ভাইয়ের ছেলে অর্থাৎ উনার ভাইপো মরহুম মৌলানা আব্দুল কুদ্দুস শাহ ওরশ শরীফ পরিচালনা করেছিল।পরবর্তীতে উনার দুই পুত্র মৌলানা মরহুম আবুল কালাম মিয়া ও মুহাম্মদ আবুল বশর শোকরী প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসের ৯ তারিখ এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় ওরশ শরীফ উদযাপন করে থাকে।

একুশে সংবাদ//এ.জে

Link copied!