সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ধারিত সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা থাকলেও তা যেন মানতে নারাজ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বেশিরভাগ কর্মকর্তা। বিশেষ পরিস্থিতি ব্যতিত সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে, নজরদারি আর জবাবদিহিতার অভাবে সেই নিয়মে ভাটা পড়েছে। নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসেন না অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে ভোগান্তি হচ্ছে সরকারি বিভিন্ন সেবা নিতে আসা মানুষদের। ধীরগতি দেখা দিচ্ছে সরকারি কাজে। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত আবশ্যকীয়ভাবে অফিস কক্ষে অবস্থান করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। শুধুমাত্র ভিভিআইপি/ভিআইপিদের প্রটোকল, বড় রকমের দুর্ঘটনা মোকাবেলা, গুরুত্বপূর্ণ সভায় যোগদান এবং অনুমোদিত ভ্রমণসূচির সফরে যাওয়া ব্যতিত এই নিদের্শনা পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৯, ২০২১ এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালেও এ নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়।
গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ অফিসের পিয়ন ও ঝাড়ুদাররা সকালে সময়মতো অফিস খুললেও অনেক কর্মচারি এবং বেশিরভাগ কর্মকর্তারা আসতে দেরি করেন। আবার বিকেল ৪টা থেকেই অফিস ত্যাগ করতে থাকেন তারা। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক অফিস তালাবদ্ধ দেখা যায়। ১০টার পরে আসেন ব্যবস্থাপক আনন্দ কুমার সরকার। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে খোলা হয় পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের অফিস। দুইদিনই ১১টার পরে আসেন পল্লী দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা এ এম রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকবল কম, মাঠপর্যায়ে থাকতে হয়। তাই আসতে দেরি হয়।’ বুধবার অফিসে আসেননি যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা দেওয়ান তোফায়েল হোসেন। বৃহস্পতিবার তিনি আসেন প্রায় ১০টায়। তিনি বলেন, ‘গতকাল আমার এক আত্মীয় মারা গিয়েছে। সেখানে গিয়েছিলাম। আজ সকালে ফিল্ডে যাওয়ার কারণে দেরি হয়েছে।’

বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিনই ১১টার পরে অফিসে আসেন সমবায় কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার একটি উঠান বৈঠক ছিল। সেজন্য আসতে দেরি হয়েছে’। নির্বাচন কর্মকর্তা হাফিজা খাতুন আসেন ৯টা ৪১ ও ৯টা ৩৭ মিনিটে। দু’দিনে খাদ্য নিয়ন্ত্রক রাবেয়া সুলতানা আসেন সাড়ে ১০টা ও সোয়া ১০টায়। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করি। এর জন্য দু-একদিন একটু দেরি হয়।’
বুধবার বন্ধ ছিল উপজেলা আনসার-ভিডিপি অফিস। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্তও অফিস বন্ধ দেখা যায়। আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষিকা তাজ সুলতানা বেগম বলেন, চালা ইউনিয়নে আমাদের প্রশিক্ষণ চলছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ট্রেনিং। কাজ করতে করতে ২-৩টা বাজে।’ বুধবার ও বৃহস্পতিবার অফিসে পাওয়া যায়নি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুরছালিমা বেগমকে। তিনি বলেন, ‘বুধবার আমি সারাদিন ফিল্ডে ছিলাম। বৃহস্পতিবার আমি একটি ট্রেনিং এ এসেছি।’
দুইদিনেই ১০টার পরে খোলা হয় পরিসংখ্যান অফিস। সমাজসেবা কর্মকর্তা আইয়ুব আলী খান বুধবারে আসেন ৯টা ৫৬ মিনিটে। বৃহস্পতিবারে ৯টা ৪১ এ এসে তিনি মিটিং থাকায় জেলায় চলে যান। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বুধবারে অফিসে ১১টায় আসেন। বৃহস্পতিবার তিনি আসেননি। অফিস থেকে জানানো হয় তিনি ট্রেনিং এ আছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুমোদন ছাড়া অফিসে অনুপস্থিত থাকা, অফিসে দেরি করে আসা বা অফিস সময় শেষের আগে অফিস ত্যাগ করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা আছে। যার যার দপ্তর তার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আমার আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এরকম করলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :