AB Bank
  • ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শ্রীমঙ্গলে লেবু, কলা, শশা ও ফলের বাজারে আগুন


শ্রীমঙ্গলে লেবু, কলা, শশা ও ফলের বাজারে আগুন

পবিত্র রমজান মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর নানা ধরণের ছাড় দেওয়া হলেও ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। এই মাসকে ঘিরে দেশের অতি মোনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এবারের রমজানেও বাজারে একই চিত্র বিরাজ করছে। রমজানের শুরুতেই চারগুণ বেড়েছে লেবুর দাম। ফলে ইফতারের সময় লেবুর শরবতে গলা ভেজাতে কষ্ট হচ্ছে নিন্ম ও মধ্যভিত্ত অনেক রোজাদারের।  

দুই থেকে আড়াইড়গুণ বেড়েছে কলার দামও। ফলে সাহরির সময় দুধ-ভাতের সাথে কলা রাখাটাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে অনেকের। দিগুণ বেড়েছে শসা, বেগুন, কমলা, মাল্টা, পেয়ারা ও আনারসের দামও।

শ্রীমঙ্গল শহরের নতুন বাজার, পুরান বাজার, স্টেশন রোড, হবিগঞ্জ রোডসহ বেশকিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় হঠাৎ করেই লেবু, কলা, শসা, আনরসসহ ফলের বাজারে আগুন। কোনো কোনো পণ্য দুইগুণ থেকে দাম চারগুণ বেড়েছে। সয়াবিন তেলের এখনও তীব্র সংকট থাকায় ভোক্তারা পড়েছেন বিপাকে।

বিশেষ করে রমজানের শুরুতেই লেবুর হালিতে দাম বেড়েছে চারগুণ। খুচরা বাজারে জাত ও আকার ভেদে প্রতি হালি (৪টি) লেবু এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগেও প্রতি হালি লেবু খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। শসা ও খিরা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা। যা গত এক সপ্তাহের আগের তুলনায় দিগুণেরও বেশি। আনরস হালিতে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। যা গত এক সপ্তাহ আগেও সাইজ অনুযায়ী ৬০- ১৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। মালটা, আপেল, পেয়ারা, আঙুরের প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০/৬০ টাকা পর্যন্ত।

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লেবু, কলা, শসা ও ফলের দাম নিয়ে হতাশ সবাই। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে দাম দুই থেকে থেকে চারগুণ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। নতুন বাজারের ক্রেতা জুনেদ মিয়া বলেন, দুদিন আগেও লেবু কিনেছি ৩০ টাকা হালি দরে। এসে দেখি সেই লেবু ৮০ টাকা হালি। আবার  কোনো দোকানে ১০০ টাকা। দুদিনে কী এমন হলো যে, লেবুর দাম এত বেড়ে  গেল? এবার তো শরবতই তেমন খেতে পারব না। মানুষকে কষ্ট দিতেই লেবু নিয়ে এমন কারসাজি।

লেবুর ক্রেতা জামিল হোসেন বলেন, আমি আজ বাজার থেকে এক হালি মাঝারি সাইজের লেবু কিনেছি ১৬০ টাকা দিয়ে। অথচ এ সাইজের লেবু আমি গত দুই সপ্তাহ আগেও কিনেছি প্রতি হালি ৩০ টাকায়।

ক্রেতা রাবেয়া বেগম বলেন, আমি  লেবু কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ চারগুণ দাম বেড়ে যাওয়ায় কিনতে পারিনি। শ্রীমঙ্গলকে বলা হয় লেবুর রাজ্য। কিন্তু এখানেই লেবুর দামে আগুন। সাইজ অনুযায়ী এক হালি লেবুর দাম ৬০-২২০ টাকা শুনেই আমি চলে আসি।

বিক্রেতারা বলছেন, রোজার কারণে হঠাৎ বাজারে লেবুর চাহিদা অনেক বেড়েছে, কিন্তু সে তুলনায় লেবুর সরবরাহ আসছে না। এ কারণে দাম বেড়েছে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী লেবু সরবারহ কম উল্লেখ করে ব্যবসায়ী গোপাল দাস  দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, কিছুদিন আগেও যে লেবু আমরা ৩০ থেকে ৮০ টাকা হালি বিক্রি করছি, এখন  সেই লেবুর জাত এবং সাইজ অনুযায়ী এক হালি (৪টি) ৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে।আজিজ মিয়া নামে এক লেবু ব্যবসায়ী বলেন, কিছু দিন আগেও লেবুর এতো চাহিদা ছিল না। রোজার কারণে চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। কিন্তু সে অনুযায়ী সরবরাহ পাচ্ছি না। ফলে বাধ্য হয়েই দাম বাড়াতে হয়েছে। আমরাও নিরুপায়। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে লেবুর দাম আগের জায়গায় যাবে বলে আশা করছি।

লেবুর আড়তদার আবু তাহের বলেন, শ্রীমঙ্গলের পাইকারি বাজারে যে পরিমাণ লেবু আসে, সে পরিমাণলেবু দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মেটানোই অসম্ভব। তার ওপর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লেবু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান। ফলে স্থানীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় দাম বাড়ছে। আজ পাইকারি আড়তগুলোতে গড়ে বড় সাইজের প্রতি পিছ লেবু ৪০ টাকা, মাঝারি সাইজের প্রতি পিছ লেবু ২৫ টাকা এবং ছোট সাইজের প্রতি পিছ লেবু ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

লেবু বাগানের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, এখন লেবুর মৌসুম না থাকায় লেবুর দাম বাড়তি। রমজানের আগে প্রতি গাড়ি লেবু (গাড়িতে ৩০০ লেবু) মাত্র ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এ দামে লেবু বিক্রি করে উৎপাদন খরচ, শ্রমিক খরচ উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় গাড়ি ভাড়া ভর্তুকি দিতে হয়।

রোজায় সাহরির সময় অন্যতম উপকরণ হলো দুধ-কলা। অনেকে সাহরির আইটেমে দুধের সাথে কলাও রাখেন। গত সপ্তাহে বাজারে চম্পা কলার হালি ছিল ১২ থেকে ১৫ টাকা। সেই কলার হালি বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। ক্রেতাদের অভিযোগ, রমজানকে কেন্দ্র করে কলার দাম বাড়ানো হয়েছে। অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলার দামও বাড়তি। চাহিদা অনুযায়ী জোগান থাকলে দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। এগুলো তো আর বিদেশ থেকে আমদানী করা হয়না যে এভাবে লাফিয়ে দাম বাড়বে।

এদিকে কলার খুচরা বিক্রেতারা মূল্য বৃদ্ধির জন্য পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তাদের অভিযোগ রোজায় পাকা কলার চাহিদা বাড়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে। তবে কৃষক সে পরিমাণ দাম না  পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভটা নিয়ে নিচ্ছেন।

পাকা কলার খুচরা বিক্রেতা রুহুল আমি রুবেল বলেন, রমজান উপলক্ষ্যে পাইকারি আড়ৎদাররা কলার দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখানে আমাদের কোনো দোষ নেই। আমরা যেমন কিনি তেমনি বিক্রি করে থাকি।

রোজায় ইফতারির অন্যতম উপকরণ হলো শসা। বাজারে এখন শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শসা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। ক্রেতারা হঠাৎ এসব পণের মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক মনে করে দ্রæত দ্রব্যমুল্য ক্ষময়ক্ষমতার ভেতরে নিয়ে আসার দাবি তুলেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলার এ বছর ১২০০ হেক্টর জমিতে লেবুর আবাদ হয়েছে। এখন লেবুর মৌসুমও নয়, আর রমজান মাসে শরবতের জন্য লেবুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লেবু দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। লেবুর অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনেও এটিও একটি কারণ।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইসলাম উদ্দিন বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত জরিমানা করা হচ্ছে, সর্তক করা হচ্ছে। কোনো ব্যবসায়ী  যদি সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করেন, আমরা অভিযোগ পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!