রমজান মাস ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের পাশাপাশি মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনে। সেহরি ও ইফতারে পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে ফলমূলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে এই চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলের বাজারে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি করে রোজাদারদের কষ্টের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
রমজানের আগে দেশীয় ফলের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও রোজা শুরু হওয়ার পর থেকেই বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফলের দাম হু হু করে বেড়ে গেছে। প্রতি কেজিতে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
অক্সিজেন কাঁচাবাজার, বালুচরা বাজার, ফতেয়াবাদ বাজার, আমান বাজার, লালিয়ারহাট, মদন হাট, ইসলামিয়া হাট, নন্দিরহাট, চৌধুরীহাট, হাটহাজারী বাজার, সরকারহাট বাজার, কাটিরহাট বাজার ও নাজিরহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মৌসুমি ফল কমলা প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, আপেল ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা, তরমুজ কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, আনার ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আঙুর ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, কলা ডজন ১৪০ থেকে ২০০ টাকা এবং মালটা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর দাম যেন আকাশছোঁয়া, ছোট সাইজের লেবু প্রতি পিস ৪০ টাকা থেকে শুরু, বড় হলে দাম আরও বেশি।
সরকার নির্ধারিত দামে নিত্যপণ্য বিক্রির কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। বাজারে মূল্য তালিকা টাঙানো নেই, ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম হাঁকছেন। প্রশাসনের তদারকিতে গেলে অনেক ব্যবসায়ী মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কম দামের কথা বলছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজানে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে নিত্যপণ্যের দাম কমানো হয়, অথচ আমাদের দেশে ঠিক উল্টো চিত্র। এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির রোজাদাররা। রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের এই পবিত্র মাসেও লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
প্রশাসন তদারকি করেও বাজারের লাগাম টানতে পারছে না। বিভিন্ন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং চললেও, এসব অভিযান শুধুমাত্র উপস্থিতির সময় পর্যন্তই কার্যকর থাকে। প্রশাসনের দল চলে গেলে মুহূর্তেই পুরোনো দাম ফিরে আসে, ব্যবসায়ীরা আবার নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বসিয়ে দেন। এতে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাওয়ার পরিবর্তে আরও হতাশ হয়ে পড়ছে, কারণ বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো স্থায়ী সমাধান দৃশ্যমান নয়।
এ বিষয়ে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক মুফতি হাসান সাহেবের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, "মানুষের নৈতিক পরিবর্তন না হলে শুধু প্রশাসনের ভয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীদের মাঝে যদি আল্লাহর ভয় ও পরকালের জবাবদিহিতার অনুভূতি জাগ্রত না হয়, তাহলে প্রশাসনের সাময়িক তদারকি কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে, ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির মানসিকতা গড়ে তুলতে হলে নৈতিক শিক্ষা ও ইসলামী আদর্শকে গুরুত্ব দিতে হবে।"
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :