কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ২০১০ সালে চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত গ্রাহকদের জমাকৃত ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তার অভিযোগ উঠেছে শাহ আলমের বিরুদ্ধে।
সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত যার রেজিস্ট্রেশন নং ১৫৩ থাকায় গ্রাহকদের আস্থা ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রতি। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে গ্রামের মানুষদের অতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকশত গ্রাহকের কাছ থেকে দীর্ঘদিন যাবত ডিপোজিট জমা রেখে আমানত সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন নেওয়া এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসেছেন উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের কয়েক শতাধিক গ্রাহক। প্রতি লাখ টাকা ডিপোজিট রাখলে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দিবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে একই গ্রামের শাহ আলম মিয়া কয়েকশত গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা জমা নেন। প্রতি মাসে ব্যবসায়িক মুনাফা পাওয়ায় অনেকে প্রবাসে আয় করা টাকা ও গ্রাহকদের জমি বিক্রির টাকা এমন কি অন্যান্য ব্যাংকে রাখা টাকাও উত্তোলন করা এবং স্বর্ণঅংকার বিক্রি করে ডিপোজিট করেন চানপুর মাল্টিপারপাস নামের এই সমবায় সমিতিতে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক লাখ টাকা থেকে শুরু একেক জনের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এসব টাকা নেয়ার সময় সবার হাতেই একাধিক ব্যাংকের চেক ধরিয়ে দেন। এসব চেকের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক গ্রাহকের জমাকৃত প্রায় ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে দেন। পরবর্তীতে গ্রাহকরা যখন তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত চান ঠিক তখনই সমবায় সমিতির সভাপতি শাহ আলম মিয়া তার বসত বাড়ি বিক্রি করে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে রাতের আধারে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে যায় । ভুক্তভোগীরা অনেকে জানান আমরা জানতাম শাহ আলমরে বাড়ি আছে কিন্তু সে পালিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারি তার বসত বাড়ি গ্রামের প্রভাবশালী ওয়াসির উদ্দিনের ছেলে প্রবাসী আরশ মিয়ার কাছে রাতের আধারে কম মূল্যে শাহ আলম বিক্রি করে দেই যা গ্রামের কেউ জানে না। গ্রাহকদের অভিযোগ শাহ আলম কে পালিয়ে যেতে ওয়াছির উদ্দিন সহযোগিতা করেছে। তা না হলে সে বাড়িটি কেনার সময় শাহ আলমের বাড়ির কাউকে জানায়নি।
এদিকে চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানের ৬ সদস্যদের কমিটি রয়েছে শাহ আলমের স্ত্রী শীলা বেগম সভাপতি, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রানু বেগম সহ-সভাপতি, মাইন উদ্দিন সম্পাদক, ছোট ভাই নুরে আলম সদস্য,ছোটভাইয়ের স্ত্রী বেদেনা বেগম সদস্য, সাজিদ মিয়া সদস্য সরেজমিনে গিয়ে তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান কোন কমিটিতে তারা যুক্ত নয় বলে এ প্রতিনিধিকে জানান ।
দানু মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী গ্রাহক বলেন, সমিতির কার্যক্রম শুরু পর ভালোই চলছিল। গ্রাহকদের পাওনা মুনাফা সময়মতো পরিশোধ করা হতো। আমার আত্মীয় স্বজনসহ বিভিন্ন গ্রাহক থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়েছে ।
রোকেয়া বেগম নামে আরেক গ্রাহক বলেন, আমার ছেলে সৌদি প্রবাসীর। জীবনের সঞ্চয় করা ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগের পর কয়েক মাস একটা লভ্যাংশ পেয়েছিলাম। কিন্তু যখন টাকা ফেরত চাইলাম তার কিছু দিন পরই সব কার্যক্রম বন্ধ করে সমিতির মালিক পালিয়েছে। আমার আরেক ছেলে সার্বিয়া যাওয়ার কথা তার ভিসাও এসে গেছে। আমার বড় ছেলের জমানো টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা কিছুদিনের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল ছোট ছেলে বিদেশে যাওয়ার জন্য জমা দিবে বলে। কিন্তু এর মধ্যে সে সমিতির লোক পালিয়ে গেছে। আমি এখন পথে বসে গেছি।
আরেক গ্রাহক শফিক মিয়া বলেন, এই সমিতিতে আমার নিজের ও দুই বোনের মিলিয়ে মোট ৯ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম। বর্তমানে সমিতির কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের কার্যালয়ে এসে দেখি অফিস তালাবদ্ধ। শুনেছি তাদের বাড়ি ঘর বিক্রি করে চলে গেছে।
ভৈরব উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রুবাইয়া বেগম বলেন, ২০১০ সাল থেকে সমবায় সমিতিটি পরিচালনা করে আসছে। তবে কিছুদিন হলো গ্রাহকদের বিশাল অঙ্কের ডিপোজিট অর্থ নিয়ে পালিয়েছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা যদি অভিযোগ করেন তাহলে সমিতির গ্রাহকদের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে জেলা কার্যালয়ে প্রতিবেদনে পাঠানো হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সমিতির নিবন্ধন বাতিল করাসহ সমিতির ৬ সদস্যদের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ আইনে মামলা করা হবে বলে তিনি জানান ।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন, সমবায় সমিতির কার্য নির্বাহী কমিটির সভাপতির মাধ্যমে এলাকাবাসী যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সে ক্ষেতে যেহেতু এটি প্রতারণা। এই ঘটনায় মামলাটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হয়। কোনো ভুক্তভোগী স্বপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেন তাহলে আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করবেন। এছাড়া সমবায় সমিতিটি যেহেতু সরকারিভাবে নিবন্ধিত এবং ঘটনাটি সভাপতি মাধ্যমে ঘটেছে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের মাধ্যমে আমরা প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :