AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পটুয়াখালীতে বাণিজ্যিকভাবে আগাম জাতের তরমুজের বাম্পার ফলন


পটুয়াখালীতে বাণিজ্যিকভাবে আগাম জাতের তরমুজের বাম্পার ফলন

বর্তমান মৌসুমের রসালো ও মিষ্টি ফলের মধ্যে পরিচয় একটা ফল তরমুজ। বাণিজ্যিকভাবে লাভবানের লক্ষে আগাম জাতের তরমুজের আবাদ করে বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন পটুয়াখালীর কৃষকরা। রমজানকে কেন্দ্র ক দাম পাবার জন্য কৃষক ন্যায্য মূল্যে বিক্রির প্রত্যাশায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেছেন। নদী, খাল আর অধিক চর নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী জেলা। উপকূল বেষ্টিত এ জেলাটি তরমুজ চাষের জন্যে এক উর্বর স্থল। তাই তরমুজের শহর হিসেবে দিন দিন পরিচিতি লাভ করে চলেছে পটুয়াখালী।

উপযুক্ত স্থান ও অধিক ফলন হওয়ায় প্রতিনিয়ত তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন এ জেলার কৃষকরা। জেলার নৌ ও স্থল পথে বিক্রয়ের জন্য তরমুজ নিয়ে কৃষক ছুটছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গ্রেট ওয়ান, বিগ ফ্যামেলি, আনন্দ, আনন্দ সুপার, সুইট ফ্যামিলি, লাকী ড্রাগন, এশিয়ান-৩ ও ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে এ জেলায়। চরাঞ্চলে তরমুজের ক্ষেতে রোদকে উপেক্ষা করে কৃষক তরমুজের আগাছা ও পোকা দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাংলাদশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফরিয়ারা এসে ছুটছেন তরমুজ চাষীদের ক্ষেতে। একটু বেশি লাভের আশায় গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের কৃষকরা আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। অনেক তরমুজ চাষিরা রমজানের প্রথম থেকেই তাদের উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি শুরু করেছেন। তাই বাজারে তরমুজ তুলতে অনেকেই এখন ব্যস্ত হয়ে পরেছে।

গলাচিপার সবচেয়ে বড় তরমুজ ঘাট আমখোলা মুশুরীকাঠির ঘাটটি। জেলার অধিকাংশ তরমুজ সরবরাহের লক্ষে আমখোলা থেকে হরিদেপুর পর্যন্ত করা হয়েছে সাতটি ঘাট। গলাচিপার বিভিন্ন চর থেকে তরমুজ চাষী ব্যাপারীরা ট্রলারে করে তরমুজ নিয়ে আসেন ঘাটগুলোতে। মুশুরিকাঠি থেকে ট্রাকের আকারের উপর ভাড়া নিধারিত হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। প্রায় ১০০০ থেকে ১৩০০ মৌসুমি শ্রমিক দিন রাত কাজ করেন এই ঘাটে। ট্রলার থেকে ট্রাকে তরমুজ সাজাচ্ছে শ্রমিকরা। তরমুজ ঘাটকে কেন্দ্র করে মৌসুমি দোকানও জমে উঠেছে। প্রতিদিন প্রায় ৭০০-৮০০টি তরমুজের ট্রাক যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। এছাড়া মুশুরিকাঠি থেকে হরিদেপুর ঘাটেও লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি ট্রাক। এর ফলে যানজটে পরতে হচ্ছে এম্বুলেন্স সহ যাত্রী সাধারণদের।

গলাচিপা উপকূলের চরের তরমুজ চাষি মোঃ খোকন (৪৭) জানান, পাঁচ  (০৫) বছর তরমুজ চাষ করে আসছেন। এখব পর্যন্ত তার কোনো লস হয়নি। এবছরও তিনি ১২ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন প্রতি বিঘা জমিতে তার ৮৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আশা করছেন এবছর দাম ভালো পাওয়া গেলে  প্রতি বিঘা জমিতে দের থেকে দুই লক্ষ টাকা বিক্রি হবে। বিগ ফ্যামিলি, সুইট ফ্যামিলি, লাকী ড্রাগন, এশিয়ান-৩ ও ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে।

কৃষক জহিরুল ইসলাম(৫৫) বলেন, সাত (০৭) বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। সার ঔষধ ঠিক মত পাওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হলেও এক অজানা রোগের কারনে গাছগুলো মরে গিয়ে ফল নষ্ট এমটা এখানে শুধু আমার জমির তরমুজেই হয়েছে।

কৃষক কামাল হোসেন (৩৬) জানান, আমি আগাম জাতের তরমুজ চাষ করিনি কারন একটু দেরিতে বিক্রি করলে ভালো দাম পাবো। তবে স্যার কীটনাশক দাম একটু বেশি। কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে ন্যায্য মুল্য এ বছর সার কীটনাশক পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়  এ বছর ফুল প্রজনন করতে হয়নি। এটা একটা ভালো দিক আর যারা বর্ষায় জমিতে একটি চাষ দিয়ে রাখছেন তাদের ফসল ভালো হয়েছে রোগ বালাই কম। 
কৃষক বেল্লাল প্যাদা(৩০) বলেন, কৃষি বিভাগের লোকজন তরমুজ চাষীদের কাছে কম আসে ডাকলে আসে। এসে ঔষধ লিখে দিয়ে চলে জায়। এর বেশি তারা খোজ রাখেন  না।

রাঙ্গাবালী ছোটবাইশদিয়ার চাষি মোঃ জসিম (৩৫) জানান, আট বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ২৭০০ পিছ তরমুজ কেটেছেন। ভালো দাম পাবার আশায় ঢাকা নিয়ে যাচ্ছেন।

একজন ব্যাপারী রাজু আহম্মেদ (৪৮) বলেন, ঢাকা থেকে তরমুজ কিনতে চর কাজলে এসেছেন। ক্ষেত থাকে ঢাকা পর্যন্ত  তরমুজ প্রতি খরচ হয় ৩২-৩৫ টাকা।  আগাম জাতের তরমুজ বেশি আশায় বাজার একটু কমে গেছে। তবে এই তরমুজের জেলায় কোথাও কোনো চাঁদা দিতে হয়নি। এটাই তার কাছে ভালো লাগার বিষয়।

ঘাট পরিচালক মোঃ নাসির গাজী তিনি বলেন, প্রতিদিন এখানে প্রায় ১০০০-১৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি দিন বিভিন্ন চর থেকে তরমুজ নিয়ে চাষী ব্যাপারীরা এখানে আসে ট্রলারে করে। ট্রলার থেকে ট্রাকে তরমুজ ভরে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাট-বাজার মোকামে চলে যায়।
ট্রলারের মাঝী কাশেম খা জানান, তরমুজ নিয়ে আসছেন চর বিশ্বাস থেকে তিনি ব্যাস্ত, তরমুজ নামিয়ে দিয়ে আবার ছুটবেন অন্য তরমুজ চাষী তাকে ফোনে তারা দিচ্ছে। একটুও সময় নেই তার কথা বলার।

ট্রাক এর এজেন্সির একজন মনু জোমাদ্দার (৫৬) বলেন, কিছু ঝিগাইবেন আমাগো কথা নিবেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় এখানের সাতটি (০৭) ঘাটে প্রতিদিন কত ট্টাক তরমুজ লোড হচ্ছে। তিনি জানান প্রায় ৩৮০-৪৫০ ট্রাক তরমুজ শুধু এখান থেকেই যাচ্ছে। পুরো জেলা থেকে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ তরমুজ এর ট্রাক যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়।

ভাসমান মৌসুমি দোকান মোসামাৎ আকলিমা বেগম (৩৬) বলেন, ছেলে স্বামী নিয়ে ভাতের হোটেল খুলে বসেছি বিক্রিও ভালো। প্রতিদিন ২০-২৫ কেজি চালের ভাত বিক্রি হচ্ছে। এরকম কোহিনুর (৪০) সেফালি (৪৩) সবারই ভাতের হোটেল, চায়ের দোকান থেকে হরেক রকমের দোকান নিয়ে বসেছেন এই ঘাট গুলোতে। ঘাট থেকে হাট কয়েক হাজার বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এই তরমুজের মৌসুমে।

মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, উপপরিচালক, জেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, গত বছর ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে তবে চলতি বছর ২৮হাজার ৫০০হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে যা গত বছর এর তুলনায় ৫ হাজার হেক্টর বেশি। কৃষক গ্রেট ওয়ান, বিগ ফ্যামেলি, আনন্দ, আনন্দ সুপার জাতের তরমুজ বেশি চাষ করেছেন। বর্তমান তরমুজ কর্তন চলছে। চাষি যথাসময়ে স্যার কীটনাশক পেয়েছেন ফলন ভালো জলবায়ুও ভালো। গত বছর (০২) হাজার কোটি টাকা হয়েছে এবছর (০৩) হাজার কোটি টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছি। জেলা প্রশাসক মহদয় মোবাইল টিমের মাধ্যমে আমাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। যাতে কৃষক দালাল পাইকারের প্রতারণার শিকার না হয়। জেলা পুলিশ সুপার মহদয় পুরো জেলার কোথাও কোনো বাধা বা চাষি হয়রানি না হয় সে ব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। তরমুজ একটি লাভ জনক ফসল এখানে বিনিয়োগ একটু বেশি করতে হয় তবে লাভও ভালো।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও গাছে রোগবালাই আক্রমণ কম হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে তরমুজ চাষিরা। তরমুজ চাষে বেশি বিনিয়োগ করতে পারলে লাভের পরিমানও বেশি থাকে। তাই সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক থাকে অর্থের যোগান পেলে আরও বড় পরিসরে তরমুজ চাষ করতে পারতো এ উপকূলের কৃষকরা। 

 

একুশে সংবাদ/এনএস

Link copied!