বাংলা লোক শিল্পের অন্যতম অনুসঙ্গ সার্কাস এখন অস্তিত্বের সংকটে। অবহেলা আর উপেক্ষায় প্রায় বিলীন হতে চলেছে একসময়ের জনপ্রিয় এই শিল্পধারা। এক হাতে জীবন আর অন্য হাতে জীবিকা নিয়ে মানুষকে হাসিয়ে আনন্দ দিয়ে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে শারিরীক কসরতের খেলা দেখিয়ে কাটছে যাদের জীবন সেই সার্কাস শিল্পের সাথে জড়িত মানুষেরা এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সাথে নিয়ে বিপন্ন জীবন যাপন করছেন।
সার্কাসের একটি প্রধান সমস্যা প্রশাসনিক অনুমোদন। এই অনুমোদন পাওয়া অতি দুরূহ। সে কারণে সার্কাস আর আগের মতো দেখা যায় না।
সার্কাসের দল টিকিয়ে রাখাও খুব ব্যয়বহুল। যাত্রা বা পুতুলনাচের মতো চট করেই দল গঠন করা যায় না। সার্কাসের বিভিন্ন কসরতের জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন, তাদের নিয়মিত অনুশীলন জরুরি। সে কারণে দল ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেলে ফের সার্কাসে ফিরে আসা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ দলে থেকে জীবিকার নিশ্চয়তা নেই। তাই অনেকে দল ছেড়ে গেছেন। অধিকাংশ সার্কাসের দল এভাবেই বিলুপ্ত হয়েছে। এখন নামেমাত্র তিন–চারটি দল টিকে আছে।
আমাদের দেশে সার্কাসের দলগুলো হয় মূলত পরিবারকেন্দ্রিক। একজন মূল মালিক থাকেন। তাঁর পরিবার, জ্ঞাতিগোষ্ঠীদের নিয়েই দল গড়ে ওঠে। একটি দলে ১০০–১৫০ জন লোক থাকে। অনেক বড় তাঁবু ফেলতে হয়, অনেক সরঞ্জাম আনতে হয়। বিশালাকার গ্যালারিও নিজেদেরই বসাতে হয়। অনেক লোক, অনেক শ্রমের প্রয়োজন। আর সার্কাসের উপযোগী বড় ও স্থায়ী মাঠের দরকার হয়। আর ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্থানে সার্কাসের আয়োজন করতে হলে একটি স্থানে অন্তত ১৫ দিন প্রদর্শনী না করলে লোকসান হয়।
মফস্বলের জেলাগুলোতেও ইদানীং লম্বা সময় ধরে তেমন কোনো মেলার আয়োজন হয় না। আবার শুধু লোকবল হলেই চলে না, সার্কাসের জন্য হাতি, বাঘসহ নানা রকম প্রাণীও প্রয়োজন। এসব প্রাণী রাখার অনুমোদন পাওয়া যায় না। এসব কারণেই সার্কাস প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের সার্কাস দলগুলোর মধ্যে বিখ্যাত দল ছিল বরিশালের লক্ষণ দাসের রয়েল বেঙ্গল সার্কাস। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। পরে তাঁর ছেলেরা সোনার বাংলা সার্কাস নাম দিয়ে দলটি চালু করেছিলেন। খুব জনপ্রিয় হয়েছিল এই দলটি। এ ছাড়া, সেভেন স্টার সার্কাস, দি রওশন সার্কাস, দি ক্যাপিটাল সার্কাস, দি লায়ন সার্কাস—এই দলগুলোও একসময় সারা দেশে ঘুরে ঘুরে সার্কাস করেছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলে কিছু কিছু বড় আকারের মেলা হয়, কোনো মেলা এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব মেলায় জড়িত থাকলে তাঁরা সার্কাসের অনুমোদন আনতে পারেন। এই অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে কোনো কোনো মেলায় মাঝেমধ্যে সার্কাসের বিশাল রঙিন তাঁবু মাথা তুলে দাঁড়াতে দেখা যায়।
রুদ্র কমল জানান, ফরিদপুরে কবি জসীমউদ্দীনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যে লোকমেলা হয়, সেখানেই কেবল নিয়মিত সার্কাস হয়। এ ছাড়া নিয়মিত আর কোথাও সার্কাস দেখা যায় না।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :