পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ব্যতিক্রমী চাক সেমাই তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা।
ঈদে আনন্দে মিস্টিমুখ করতে পছন্দের তালিকায় থাকে সেমাই। কিন্তু বাজারে পরিচিত সেমাইয়ের বাইরে ব্যতিক্রমী সেমাই তৈরী করেন রূপগঞ্জের একটি গ্রামের অর্ধশত পরিবার। হাত আর যন্ত্রের সহায়তায় তৈরি হয় চার কোন আকৃতির ‘চাক সেমাই’। কোন প্রকার রাসায়নিক, রং কিংবা তেল ছাড়াই তৈরি হয় এই সেমাই।

উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের চারিতালুক গ্রামে রোজার শুরু থেকেই তৈরি করা হয় চাক সেমাই। তবে এই সেমাই সারাবছর উৎপাদন করেন না কারিগররা। কেবল দুই ঈদকে সামনে রেখে তৈরী করা হয় এই চাক সেমাই। অল্প সময়ের জন্য এই সেমাই তৈরি করা হলেও এরই মধ্যে সেমাই ছড়িয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ সহ আশেপাশের কিছু জেলায়। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় ঈদ আসলেই চারিতালুক গ্রামে শুরু হয় সেমাই তৈরির ধুম। দম ফেলবার যেন ফুসরত নেই সেমাই কারিগরদের।
সেমাই পল্লী ঘুরে দেখা যায়, ময়দার খামি একটি বিশেষ মেশিনে টিপে টিপে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন একজন। চিকন সুতার আকৃতির সেমাই হয়ে মেশিন থেকে বেরিয়ে আসছে সেগুলো। আরেকজন ধাতব পাত্রে রেখে ছুরি দিয়ে ছোট ছোট চর্তুভূজ নকশা করছেন। এরপর সেমাইয়ের ডালাগুলো রোদে শুকিয়ে নিয়ে তোলা হয় কয়লার চুলার তাওয়ায়। সেখানে হালকা ভেজে প্রস্তুত করা হয় চাক সেমাই। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যান।

সেমাই কারিগর সফিকুল মিয়া বলেন,আমাদের এই এক মাসে প্রায় দুই লাখ টাকার মত সেমাই বিক্রি হয়। পাইকারি দরে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। খুচরা ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হয় এই সেমাই।’আমরা প্রথমে ময়দার খামির তৈরি করি। এরপর সেগুলো মেশিনে দিয়ে ডালায় সেমাই নামাই। তারপর স্ক্রেল দিয়ে কেটে রোদে শুকোতে দেই। পরে তাওয়ায় ভেজে বস্তায় ভরে বিক্রি করি।
আরেকজন কারিগর বলেন, আমরা আগে হাতে ঘুরানো মেশিন দিয়ে সেমাই বানাতাম। কিন্তু তাতে ২ বস্তা বানাতেই কষ্ট হয়ে যেত। পরবর্তীতে মেশিনের সহযোগিতায় বানানো শুরু করি। এই সেমাই মূলত সেদ্ধ করে দুধে ভিজিয়ে খেতে হয়।

পারিবারিক ব্যবসা হওয়ায় বড় পরিসরে শ্রমিক কাজের সুযোগ নেই এই সেমাই তৈরীতে। একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্য মিলেই এই সেমাই তৈরি করেন। সেমাই উৎপাদনের সাথে জড়িত পরিবারগুলোর দাবি, সরকার বা যে কোন সংস্থার কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা পেলে বড় পরিসরে সেমাই বাজারজাত করা যাবে। একই সাথে এই খাদ্য শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :