ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চৈতন্য পাল (৩৫)। রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে কলা নিয়ে শহরে যাওয়ার পথে বাসের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় তার ইঞ্জিনচালিত ভ্যানটি। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় চৈতন্য পালের জীবনযুদ্ধও।
চৈতন্য পালের মৃত্যুতে তার স্ত্রী রেখা রানী পড়েছেন চরম বিপাকে। শ্বাশুড়ি, দুই সন্তান এবং এনজিওর কিস্তির বোঝা এখন তার কাঁধে।
চৈতন্য পাল ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামের মৃত কার্তিক দাসের একমাত্র ছেলে। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন পৈত্রিক মৃৎশিল্পের পেশা। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিনেছিলেন ইঞ্জিনচালিত ভ্যান, যা ছিল তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।
ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করেই সংসার চালাতেন তিনি। বড় ছেলে তাপস পাল (১৫) পড়ে স্থানীয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে। ছোট ছেলে শ্রীবাস পালের বয়স মাত্র ১ বছর। আর বৃদ্ধা মা পুষ্প রানী বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এখন পরিবারের সকল দায়ভার এসে পড়েছে রেখা রানীর কাঁধে। তিনি জানান, "আমার স্বামীর আয়েই চলত সবকিছু। এখন কীভাবে ছেলেদের পড়াশোনা, শাশুড়ির চিকিৎসা আর কিস্তির টাকা মেটাবো—কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।"
প্রতিবেশী বাদল পাল বলেন, “চৈতন্য ছিলেন পরিবারের একমাত্র ভরসা। এখন সেই পরিবার একেবারেই অসহায়। সাহায্য ছাড়া চলা সম্ভব না।”
এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, "ঘটনার খবর জানতাম, তবে পরিবারের অবস্থা এত খারাপ জানা ছিল না। আমরা চেষ্টা করবো পাশে থাকার।"
কোটচাঁদপুর থানার ওসি কবির হোসেন মাতুব্বর জানান, “মৃতের স্ত্রী রেখা রানী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।”
এদিকে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিসুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এখন দরকার স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজের সহৃদয় মানুষের সহায়তা, যাতে এই পরিবারটিকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করা যায়।
একুশে সংবাদ//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :