মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় সরকারি খাল দখল করে অবৈধভাবে দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কনকসার ইউনিয়নের কনকসার খালের পূর্ব পাশে নাগেরহাট এলাকায় স্থানীয় আল-আমিন তালুকদারসহ তাঁর ভাইয়েরা কংক্রিটের খুঁটি দিয়ে কাঠ-টিনের দোকানঘর নির্মাণ করছেন বলে জানা গেছে।
কনকসার ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটির প্রস্থ কোথাও ৪০ ফুট, কোথাও আবার ৫০ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত। সিংহেরহাটি এলাকার পদ্মা নদী থেকে শুরু হয়ে খালটি নাগেরহাট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। শতবর্ষ পুরনো এই খাল একসময় নৌযান চলাচলের পথ ছিল। খালের পানি ব্যবহার করে দুই পাড়ের কৃষিজমিতে চাষাবাদ হতো। বর্ষাকালে কনকসার, হলদিয়া, কুকটিয়া ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের পানি এই খালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো।
প্রায় দেড় যুগ আগে খালের পূর্ব পাশে একটি সড়ক নির্মাণের পর নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর খালের উৎসমুখে বাড়িঘর ও দোকানপাট নির্মাণের ফলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে খালটি প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার পথে।
সরেজমিনে কনকসার বাজার থেকে নাগেরহাট পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, খালের অধিকাংশ অংশ এখন পানিশূন্য। কনকসার এলাকায় খালের পূর্ব পাশে ইতিমধ্যেই ৫-৬টি বসতবাড়ি এবং প্রায় ১৮-২০টি দোকানঘর নির্মিত হয়েছে। নাগেরহাট অংশে নতুন করে আরও দুটি স্থানে ১১টি দোকানঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব দোকানের খুঁটি কংক্রিটের, উপরের কাঠামো টিন ও কাঠের তৈরি।
একটি স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, খালটির প্রবাহ সচল করতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৭ লাখ ৩২ হাজার ৯৮ টাকা ব্যয়ে ৩.৪৩৫ কিলোমিটার এলাকা খনন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED)। তবে খননকৃত অংশে আবারও দখল শুরু হয়েছে। নাগেরহাট এলাকায় আল-আমিন ও তানভীর তালুকদার সম্প্রতি নতুন দোকান নির্মাণ শুরু করেছেন। তাঁদের দেখাদেখি আরও অনেকে দোকান তৈরির পরিকল্পনা করছেন।
স্থানীয়দের দাবি, খালটিকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। সরকারের যথাযথ নজরদারির অভাবে কেউ কেউ খালকে নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে দখল করছেন। কৃষি ও পরিবেশ রক্ষায় কনকসার খাল দখলমুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আল-আমিন তালুকদার বলেন, “যে অংশে দোকান করা হয়েছে, তা একসময় আমাদের জমির অংশ ছিল। পরে সেখানে রাস্তা হয়েছে। জমির ক্ষতিপূরণ হিসেবেই খালের পাড়ে দোকান করেছি। তবে সরকার চাইলে আমরা জায়গা ছেড়ে দেবো।”
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নেছার উদ্দিন বলেন, “খালটি অনেক পুরোনো ও গুরুত্বপূর্ণ। নাগেরহাট এলাকায় যেসব দোকানপাট নির্মিত হচ্ছিল, তাদের সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। না সরালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। পাশাপাশি খালের যে সব জায়গা অবৈধভাবে দখল হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :