আধুনিক সেচযন্ত্রের দাপটে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পানি সেচ যন্ত্র “দোন”। কিন্তু কালের বিবর্তনের মাঝেও মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার কিছু প্রবীণ কৃষক এখনও এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের খেলেশ্বর গ্রামের কৃষক খৈমুদ্দিন তার ৩ বিঘা জমিতে এবং ছয়আনী গ্রামের ৭৪ বছর বয়সী কৃষক বহর আলী তার ১ বিঘা জমিতে এখনও দোন দিয়ে সেচ দিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, দোন দিয়ে পানি সেচ দিলে তেমন খরচ হয় না। বাঁশ, কাঠ বা ফলজ গাছের গুঁড়ি খোদাই করে তৈরি করা দোনের সাহায্যে নদী বা খাল থেকে পানি তুলে জমিতে পৌঁছানো হয়। এতে বিদ্যুৎ বা ডিজেলের প্রয়োজন পড়ে না, ফলে ফসল উৎপাদনে খরচও কম হয়।
বহর আলী বলেন, “৩০-৪০ বছর আগেও আমরা সবাই দোন দিয়ে পানি দিতাম। এখন সবাই ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু আমি এখনও দোন ব্যবহার করি। এতে একটু পরিশ্রম হয়, তবে টাকাও লাগে না।”
প্রাকৃতিক জলাধারনির্ভর সেচে পরিবেশের ক্ষতি নেই। আগে দোন ব্যবহার করে কৃষকরা প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে সরাসরি পানি নিতো, যার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ পড়ত না। অথচ আজকের আধুনিক শ্যালো বা ডিপ টিউবওয়েল ব্যবস্থায় অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, “এখন আর কেউ দোন ব্যবহার করে না বললেই চলে। তবে প্রাচীনকালে এটি একটি জনপ্রিয় সেচ পদ্ধতি ছিল। এতে খরচ কম এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এটি ছিল একটি টেকসই সিস্টেম।”
তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিক জলাধারনির্ভর এই সেচ পদ্ধতিকে যদি নতুন করে চিন্তা করা হয়, তবে পরিবেশ ও খরচ—দুটো দিক থেকেই এটি হতে পারে একটি বিকল্প সমাধান।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :