AB Bank
  • ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বিদ্যালয় স্থানান্তর দন্দে শ্রেণী কক্ষে ঝুলছে তালা



মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বিদ্যালয় স্থানান্তর দন্দে শ্রেণী কক্ষে ঝুলছে তালা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাশ থেকে স্থানান্তর করে পশ্চিম পাশে স্থান্তরকে কেন্দ্র করে দুই দিন ধরে তালা ঝুলছে শ্রেণী কক্ষে। দ্রুত সমাধান না হলে দুই পক্ষের সাথে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন নদীর দুই পারের বাসিন্দারা। প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা নিয়ে সংকায় পড়েছেন অভিবাকরা।  

সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ে দুটি টিনশেডের প্রত্যেক ক্লাসরুমে ঝুলছে তালা। শিক্ষার্থীর চট, মাধুর বিছিয়ে বারান্দায় ও খোলা মাঠের নিচে রুদে বসে আছে। আর অভিভাবকরা নানা উৎকন্ঠায় বাহিরে বসে আছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের টয়লেটেও তালা। ফলে অপেক্ষাকৃত শিক্ষার্থী পানি ও টয়লেটের কাজ করছে পাশের বাড়ি থেকে।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্জাহান বিদ্যালয়টি নদী ভাঙ্গনের কথা বলে, নদীর পশ্চিম পাশে নেবার পায়তারা শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। গত শুক্রবার বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিমে ছনকা বাজারের পাশে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে। গত রবিবার জোড় করে কোন প্রকার রেজুলেশন ছাড়া ছনকা বাজার সংলগ্ন স্থানে ক্লাস শুরু করে। অপর দিকে আমাদের বর্তমান স্কুল তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে দুইদিন ধরে ক্লাস বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ছনকা বর্তমান উচ্চ বিদ্যালয়ে সোমবার হাজিরা খাতা অনুযায়ী ১৩৭ জন উপস্থিত। সবার মধ্যে উৎকন্ঠা কবে তাদের বন্ধ শ্রেণী কক্ষ খুলবে।  

বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলেন, আমরা স্কুল নিয়ে রাজনীতি চাই না। আমারা ক্লাস করতে চাই। আমরা নদীর পূর্ব পারে বসবাস করে আসছি। আমরা কেন নদী সাতরাইয়ে পশ্চিম পাড়ে যাব। 

১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিম আক্তার বলেন, আমরা রবিবার ও সোমাবর দুই দিন ধরে রোদে কষ্ট করে ক্লাসের অপেক্ষায় বসে থাকছি। সব ক্লাস রুমেই তালা ঝুলছে। আমরা দ্রুত ক্লাস করতে চাই।

একই ক্লাসের আমিনুর রহমান বলেন, আমাকে স্যাররা বলছে, আমরা স্কুল নদীর পশ্চিম পাশেই করব। এখন থেকে এখানে নতুন স্থানে ক্লাস করবা। নইলে তোমাকে এসএসসি পরীক্ষা দিতে দিব না। 

১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাসুদ বলেন, প্রধান শিক্ষক সালাম স্যার আমাকে ডেকে বলছেন, আমরা এই বিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার শেষ ক্লাসের সময় বলে তোরা যদি নতুন ভবনে ক্লাস না কর তাহলে তোদের টেষ্ট পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিব। 

তারেক আহমেদ আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ২০২৫ সালের বই অনেক দেরীতে পাইছি। তারপর আবার দুই দিন ধরে ক্লাস রুমে তালা দিয়েছে। এখন আমরা কবে ক্লাস রুম খোলব আমরা জানি না। আমরা দ্রুত ক্লাস রুমে ফিরতে চাই। 

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নটি ধলেশ্বরী নদী দ্বারা শাষিত। এখানকার বেশীর এলাকা চরাঞ্চল। বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা গ্রামে আশে পাশে কোন বিদ্যালয় নেই। সেই আলোকে ২০১৫ সনে সর্বস্তরের জনসাধারণের কথা চিন্তা করে ছনকা গ্রামে ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে চরাঞ্চলের শত শত দরিদ্র শিক্ষার্থীরা সুবিদা পেতে শুরু  করে।  পরবর্তীতে বিদ্যলয়টি ২০২২ এমপিওভুক্ত হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাজাহান এবং প্রধান শিক্ষক  আব্দুল সালাম মিলে এলাকার মানুষের সাথে কথা কাটা কাটির একপর্যায় বিদ্যালয়টি ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম পাশে নেবার পায়তারা করে। বিদ্যালয়টি বর্তমান স্থানে থাকলে বরাইদ ইউয়িনের ৫ টি ওয়ার্ডের মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। আর পশ্চিম পাশে নিয়ে মাত্র ১ টি ওয়ার্ডের আংশিক লোক সুবিধা পাবে। কতিপয় স্বার্থান্বেশী মহল, নদীর পশ্চিম পাশে বিদ্যালয় স্থানান্তর করার জন্য জমি ক্রয় করে এবং নতুন একাডেমিক ভবন তৈরি করার জন্য পায়তারা করছে। পরে গত শুক্রবার রাতা রাতি কোন রকম একটি টিনশেড ঘর তৈরি করে রবিবার থেকে আগের ভবনে তালা ও নথিপত্র চুরি করে এনে নতুন স্থানে জুড়াতালি দিয়ে ক্লাস করার চেষ্টা করছে। 

সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ খান মজলিশ মাখন বলেন,  বিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তন করতে চাইলে বিদ্যালয় বিলীন হতে হয়। এবং নীতিমালা ২০২২ (সংশোধিত-২০২৩) এর অনুচ্ছেদ ৫.৮ আলোকে বিদ্যালয় ভবন অক্ষত আছে। বরং নদী থেকে ২৫০ ফিট দূরে। তাছাড়া বিগত ৫ বছরে ঐ স্থানে কোন ভাঙ্গন দেখা দেয়নি। বরং চলতি মৌসুমে নদী শাষন চলছে। নদীর তীর ভাঙ্গন রোধে কাজ চলছে। আর বিদ্যালয় স্থানান্তরের আদেন করা হয় অনেক আগে। আর তদন্ত করা হয় সেটা গোপনে। আর চিঠি আসে ১২ ফেব্রুয়ারি ২৫ এ। আওয়ামী লীগের দোষরা বরাইদ ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ডের মানুষের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নাজুক করতে স্থানান্তরের পায়তারা করতেছে। আর এখন স্কুলে তালা দেওয়া তে এ পারের ১৫০ জন শিক্ষার্থীরা দুই দিন ধরে নদীর পশ্চিম পাশে যাচ্ছে না। তারা পুরাতন বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই অবস্থান করছেন।

ছনকা গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি যেখানে রাতের আধারে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে, সেখানে ছনকা বাজার আছে। সেখানে আমাদের মেয়েদের বখাটে দের খপ্পরে পড়তে হবে। তাছাড়া খেয়া পারা পার হতে হবে। খেয়া পারা পার হতে গেলে  ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বেশী সময় লাগবে। তাই আমরা চাই বিদ্যালয়টি এখানেই থাকুক। 

ছনকা গ্রামের রোখসানা বলেন, বিদ্যালয়টি আমাদের জমিতে গড়ে উঠা। আমাদের ঘাম, রক্ত মিশে আছে। তারা বিদ্যলয়টি তালা মারল, আর আরেক স্থানে নিয়ে জোর করে ক্লাস করতে চাচ্ছে। সেটা ত রেজুলেশন করা লাগবে। আমাদের চরাঞ্চল দেখিয়ে বিদ্যালয় অনুমোধন আনল। আর এখন এমপিও ভুক্ত হল। আর অন্য স্থানে নিয়ে যাবে সেটা ত হয় না। আর যে রাজনীতি শুরু হয়েছে। যে কোন সময় আমাদের পুরাতন ভবনে আগুন লাগাতে পারে। আবার এ নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হলে, তার দায় কে নিবে। তাই প্রশাসনের নিকট আকুল আবেদন, আমাদের বিষয়টি সমাধান যাতে করে দেয়। 

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ আরো বলেন, বিদ্যালয়টি স্থানান্তর যাতে না হয়, এর জন্য মানিকগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে বিগত ২৩-০২-২০২৫ তারিখে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামলা নং- ২১/২০২৫। মামলা থাকার পরও চক্রটি বিদ্যালয় স্থানান্তর করার জন্য কাজ করেই যাচ্ছে। 

দুপুর ২ টর দিকে বিদ্যালয়ে নতুন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বসে আছে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ২৬০ জন। ছনক উচ্চ বিদ্যলয় হলেও এমপিও ভুক্ত হয়েছে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে। সেই হিসাব অনুযায়ী ১১ জন শিক্ষক ও ৫ জন কর্মচারী আছে। বিদ্যালয় সম্পর্কে বলেন, নিয়ম মেনেই বিদ্যালয়ের স্থানান্তরের কাজ করা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যালয় স্থানান্তের তাদের নিকট মন্ত্রণালয়ের চিঠি আছে। কিন্তু তারা যেভাবে স্থানান্তর করেছেন, সেটাত সুন্দর হয়নি। নদীর দুই পারের অভিভাবকদের সাথে সমাঝোতা মাধ্যমে যেতে হবে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সেটা করেনি। এ বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আমি আজ লিখিতভাবে জানিয়েছি।  

এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে সকল শিক্ষক নতুন স্থানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেছেন। এ বিষয়ে আমি নিজে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে গোপনে সাক্ষাতকার নিয়েছি। বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীরা চাচ্ছে বর্তমান স্থানে নদীর পূর্ব পাশেই বিদ্যালয় থাকুক। প্রধান শিক্ষককে আমি নিষেধ করেছিলাম আইন মেনে কাজ করতে। কিন্তু সে আইন অমান্য করায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 


একুশে সংবাদ//মা.প্র//এ.জে
 

Shwapno
Link copied!