AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ফেঁসে যাচ্ছেন তারা সবাই!


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
১০:৩১ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
ফেঁসে যাচ্ছেন তারা সবাই!

গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বারডেম হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানা হেফাজতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে পুলিশের রমনা বিভাগের তখনকার অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিভাগীয় তদন্তে ফেঁসে যাচ্ছেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিসি) হারুন অর রশিদ, এডিসি সানজিদা আফরিন, তার স্বামী রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তদন্তে সেদিনের ঘটনায় তার দায় খুঁজে পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতাদেরও দায় পাওয়া গেছে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি।  নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তারা ডিএমপি কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরেই এমন ঘটনা ঘটেছে। যা পুলিশ ও প্রশাসনের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে।

এই ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে ডিএমপি। কমিটির সভাপতি ডিএমপি সদর দফতরের উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) আবু ইউসুফ। অপর দুই সদস্য হলেন রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ এবং অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ) মো. রফিকুল ইসলাম। এই তদন্ত কমিটির ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন তদন্ত শেষ করতে না পারায় ডিএমপি কমিশনারের কাছে আরও পাঁচ দিন সময় চায় কমিটি। পরে তাদের পাঁচ দিন সময় দেয়া হয়। সোমবার পাঁচ দিন সময় শেষ হয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হাসপাতাল থেকে নেয়ার পর শাহবাগ থানার ওসির কক্ষে আটকে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধর করে পুলিশ। এডিসি হারুনের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার পরিদর্শক গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করেন। কমিটি ইতিমধ্যে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেছে। ঘটনাস্থল বারডেম হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করেছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় যাদের যতটুকু দায় পাওয়া গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব উল্লেখ করা হয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত বর্ণনাও দিয়েছেন এডিসি সানজিদা আফরিন। সানজিদা বলেন, আমার স্বামীসহ আরও কয়েকজন প্রথমে এডিসি হারুন স্যারকে মারধর করেন।

গণমাধ্যমের কাছে তখন সানজিদা দাবি করেন,  অনেকদিন ধরে আমার কিছু শারীরিক সমস্যা ছিল। আমি স্যারকে কল দিয়েছিলাম আমার জন্য একজন চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজ করে দেয়ার জন্য। স্যার ওসি শাহবাগ এবং ওসি রমনা থানাকে দিয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টার সময় একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজ করে দেন। পরে আমি ডাক্তার দেখাতে যাই। ৬টার সময় হাসপাতালে যাওয়ার পর জানতে পারি যার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া হয়েছে সেই চিকিৎসক মিটিংয়ে আছেন। এ অবস্থায় আমি আবারও স্যারকে কল দিয়ে জানাই ওই চিকিৎসক হয়তো আমাকে দেখবেন না। তখন স্যার বলেন ‘তুমি অপেক্ষা করো আমি দেখি এসে কথা বলে কাউকে ম্যানেজ করা যায় কি না।’ এরপর উনি হাসপাতালে আসেন। উনি আসার পর হাসপাতালে কথা বলেন। এতে একজন চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজ হয়।

সানজিদা আরও বলেন, ডাক্তার আমাকে কিছু টেস্ট দেন। আমি সেগুলোর জন্য স্যাম্পল দিচ্ছি। যখন এ ঘটনা ঘটে তখন আমি ইটিটি রুমে ছিলাম। ইটিটি রুম থেকে আমি প্রথম যে শব্দ শুনতে পাই, স্যার খুব জোরে বলছেন যে, ‘ভাই আপনি আমার গায়ে কেন হাত দিচ্ছেন। আপনিতো আমার গায়ে হাত দিতে পারেন না’। আমি প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল যে, অন্য কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়েছে বা এরকম কিছু। পরে আমি আমার হাজব্যান্ডের গলার আওয়াজও শুনতে পাই। তখন আমার হাজব্যান্ডসহ কয়েকজন ছেলে যাদেরকে আমি চিনতাম না তারা স্যারকে মেরে টেনেহিঁচড়ে রুমের ভেতরে নিয়ে আসেন।

সানজিদার ভাষ্য, ওই সময় আমার হাজব্যান্ড খুব উত্তেজিত ছিলেন। আমি জানি না যে কি হয়েছিল। আমার হাজব্যান্ড সঙ্গের ছেলেদেরকে বললেন, পুরো জিনিসটা ভিডিও করার জন্য। আমি তখন ইটিটি রুমে ছিলাম। আমার সারা শরীরে বিভিন্ন মেশিন লাগানো ছিল। আমি নিজেও টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালের দেয়া কাপড় পরা ছিলাম। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বললাম, ‘রুমের ভেতরে আপনি বাইরের লোকজন নিয়ে কেন আসছেন। ওদেরকে চলে যেতে বলেন। আর আপনি কেন ভিডিও করছেন’।

এ সময় তার স্বামী মামুন তাকেও মারধর করেছেন অভিযোগ তুলে সানজিদা বলেন, ‘‘আমি যখন ভিডিও না করার জন্য চিৎকার করে বলছিলাম, তখন আমার হাজব্যান্ড আমার গায়েও হাত তুলেন। এ সময় তারা স্যারকেও মারধর করেন। তখন আমি তাদের কাছ থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে নিয়েছিলাম। বলেছিলাম যে, ‘আপনারা এই অবস্থায় ভিডিও করতে পারেন না।’ তখন ছেলেগুলো ক্যামেরা ছিনিয়ে নিতে আমার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে। এরমধ্যে রুমে হাসপাতালের সিকিউরিটিরা চলে আসে। আর কিছুক্ষণ পর, প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর থানার ফোর্স এসে তাদেরকে নিয়ে যায়।’’

উল্লেখ্য, ৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে। এর জেরে ওইদিন রাতেই শাহবাগ থানার সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের কর্মকর্তারা থানায় গিয়ে মধ্যরাতে মীমাংসা করেন। তবে ঘটনাটি আলোচনার জন্ম দেয়।

এ ঘটনায় ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এডিসি হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে সরিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দাঙ্গা দমন বা পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় তাকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয় বলেও জানানো হয়। পরের দিন ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সবশেষ তাকে পুলিশের রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত থাকা অবস্থায় বিধি অনুযায়ী তিনি খোরপোষ ভাতা পাবেন।  

একুশে সংবাদ/এসআর

Link copied!