২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩৫ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ৩২ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক রপ্তানি গন্তব্য হওয়ায় এই সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) গত নয় মাসের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে ইউরোপে বাংলাদেশের রফতানি ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে ১৭ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তথ্য বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান বাজার জার্মানিতে গত কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত কমেছে। ২০২৩ সালের প্রথম নয় মাসে জার্মানিতে আমাদের রপ্তানি ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ ৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ইইউ অঞ্চলের অন্যান্য যেসব বাজারগুলোতে রপ্তানি কমেছে তা হচ্ছে- লিথুয়ানিয়া, মাল্টা, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া এবং স্লোভেনিয়া। তবে ফ্রান্স, স্পেন এবং ইতালিতে রফতানি যথাক্রমে ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ২৭ দশমিক ০২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা যথাক্রমে ২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ডেনমার্কে রফতানি ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। একই সময়ের মধ্যে, লাটভিয়া, রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড এবং ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশগুলো শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৩ সালের একই সময়ে ৬ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে, গত নয় মাসে যুক্তরাজ্যে ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ ও কানাডায় ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় পোশাক রফতানি যথাক্রমে ৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
গতানুগতিক বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরে ৫ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপানে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা বছরে ৪৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় ৫৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ভারতে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০ দশমিক ৯৩ শতাংশ, চীন এবং তুরস্কের মতো অন্যান্য অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি যথাক্রমে, ৪৬ দশমিক ৩২ শতাংশ ,৩৫ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ২৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়েছে।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার, যা মোট রফতানির ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ইইউ তৈরি পোশাক রফতানির প্রায় ৪৯ দশমিক ২২ শতাংশ ধরে রেখেছে। যুক্তরাজ্য এবং কানাডার ক্ষেত্রে মোট পোশাক রফতানির ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ১৬ শতাংশে এ পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩ সালের প্রথম নয় মাসে অ-প্রচলিত বাজারের অংশ মোট রফতানির ১৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছিল। অপ্রচলিত বাজারের অংশ বৃদ্ধি অবশ্যই পোশাক শিল্পের জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির স্বপ্ন দেখে আগামী দিনগুলোতেও বাজারের বৈচিত্র্য অব্যাহত রাখতে হবে।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহ
আপনার মতামত লিখুন :