বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেশি দামে কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছেন এএএফএর প্রধান নির্বাহী স্টিফেন লামার। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করায় ক্রেতাদের কাছ থেকে বর্ধিতমূল্যে পোশাক কেনার প্রতিশ্রুতি আসে। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৬ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বখ্যাত সুইডিশ ফ্যাশন রিটেইলার ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, গ্যাপসহ অন্যান্য খুচরা বিক্রেতারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রয়মূল্য বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর ফলে পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে কারখানাগুলোর যে পরিমাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, তার ক্ষতিপূরণে এই বাড়তি মূল্য সহায়তা করবে। বিশ্বজুড়ে আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (এএএফএ) এক হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে। বিশ্বখ্যাত সুইডিশ ফ্যাশন রিটেইলার ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, গ্যাপসহ অন্যান্য ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান সংস্থাটির সদস্য।
বিশ্বে চীনের পর সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে পুলিশের সঙ্গে পোশাক কর্মীদের প্রাণঘাতী বিক্ষোভ-সহিংসতার পর বাংলাদেশের সরকার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা (১১৩ মার্কিন ডলার) করেছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তৈরি পোশাক শ্রমিকদের এই নতুন মজুরি আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবার কথা রয়েছে।
কারখানা মালিকরা বলেছেন, আগামী জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের আগে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করায় তাদের মুনাফা হ্রাসের পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয়ও ৫ থেকে ৬ শতাংশ বাড়বে। তৈরি পোশাকের মোট উৎপাদন ব্যয়ের ১০ থেকে ১৩ শতাংশ শ্রমিকদের পেছনে ব্যয় হয়ে থাকে। এএএফএর প্রধান নির্বাহী স্টিফেন লামারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, উৎপাদন ব্যয় ৫ থেকে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে ক্রয় মূল্য একই পরিমাণে বাড়াবেন কি না? জবাবে তিনি বলেছেন, অবশ্যই।
স্টিফেন লামার বলেন, আমরা এবং আমাদের সদস্যরা বেশ কয়েকবার বলেছি, মজুরি বৃদ্ধিকে সমর্থন জানানোর জন্য আমরা দায়িত্বশীল ক্রয় পদ্ধতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বার্ষিক ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা পদ্ধতি গ্রহণের জন্য আমরা বারবার আহ্বান জানিয়েছি, যাতে বাংলাদেশি শ্রমিকরা সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে সুবিধাবঞ্চিত না হন। রয়টার্স লিখেছে, সস্তা শ্রমই বাংলাদেশকে তার পোশাক শিল্প গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। এই শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তিও তৈরি পোশাক খাত। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৬ শতাংশ আসে এই পোশাক খাত থেকে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, বাড়ানোর পরও বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি আঞ্চলিক তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশের তুলনায় কম থাকবে। বাংলাদেশের কিছু শ্রমিক বর্ধিত মজুরিকে একেবারে কম বলেছেন। ভিয়েতনামে একজন শ্রমিক মাসে গড়ে ২৭৫ মার্কিন ডলার এবং কম্বোডিয়ায় ২৭৫ মার্কিন ডলার পান। যা বাংলাদেশের বাড়ানো মজুরির (১১৩ ডলার) তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা পোশাক বিক্রেতা অ্যাবারক্রম্বি অ্যান্ড ফিচ এবং লুলুলিমনসহ এএএফএর কিছু সদস্য ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। আর একই বিষয়ে পোশাক ক্রেতাদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক সংগঠন এএএফএর প্রধান নির্বাহী লামারও গত জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছিলেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের খুচরা বিক্রেতারাই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা। বৈশ্বিক ধীর অর্থনীতির কারণে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য খুচরা বিক্রেতার মতো ফ্যাশন কোম্পানিগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বজুড়েই ক্রেতারা এখন আগের তুলনায় কম কিনছেন।
একুশে সংবাদ/ই.ফ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :