আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৩ শতাংশ রপ্তানি পণ্যের গন্তব্য। আর এসব দেশ থেকে আসে আমদানি পণ্যের ৮ শতাংশ। সমুদ্রপথে লোহিত সাগর ও সুয়েজখাল হয়ে এসব জায়গায় পণ্য পরিবহন সহজ। কিন্তু সম্প্রতি লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলায় সেই পথে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের ঝুঁকি। যা এড়াতে এরই মধ্যে শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি মায়ের্সক, এমএসসি, সিএমএ-সিজিএম, কসকো ও হ্যাপাগ লয়েড এই পথ এড়িয়ে আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে।
এতে বিপাকে পড়েছে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। বিদেশি জাহাজ কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে বিকল্প পথে পণ্য পরিবহনের ঘোষণা দিয়ে বাড়তি সারচার্জ আরোপ করেছে। এছাড়া বিকল্প পথে পণ্য পরিবহনে খরচের পাশাপাশি বাড়তি সময়ের ঝামেলায়ও পড়তে হচ্ছে দেশি ব্যবসায়ীদের।
শিপিং কোম্পানি মায়ের্সকের প্রধান নির্বাহী ভিনসেন্ট ক্লার্ক বলেছেন, ‘লোহিত সাগর দিয়ে যতো পণ্য যায়, সেটি সারা পৃথিবী জুড়ে বহন করা পণ্যের ১০-১২ শতাংশ। এবং এই পথে নিরাপদে চলাচল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখনও এই পথে আমাদের নাবিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত নই। তাই আমরা এই পথ এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ সিদ্ধান্তের ফলে হঠাৎ বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। একটি ৪০ ফুট কনটেইনার ইউরোপ বা আমেরিকা পাঠানোর খরচ ২ হাজার ডলার থেকে এক লাফে বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৮০০ ডলার। ডলার সংকটের পর এমন বাড়তি খরচ বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়াডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘ইউরোপ–আমেরিকার পণ্যগুলো নিয়ে তারা ঘুর পথেই যাচ্ছে। যে কারণে তাদের যে ১৩–১৪ দিনের অতিরিক্ত মাশুল, সেটি আমাদের ওপর নির্ধারণ করেছে।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বাইরে থেকে যে কাঁচামালগুলো আসে, সেগুলো দিয়েই কিন্তু এখানকার কারখানাগুলো উৎপাদনে যায়। যদি এটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে মিল–কারখানাগুলো সমস্যায় পড়তে পারে।
বর্তমানে লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল হয়ে একটি কনটেইনার ইউরোপে পৌঁছাতে সময় লাগে ২৫ থেকে ২৬ দিন। আর আমেরিকা যেতে লাগে ৩০ থেকে ৪০ দিন। নতুন পথে যেতে লাগবে আরও ১০ থেকে ১২ দিন বেশি।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে লোহিত সাগরের নৌসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তারা জানিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সমর্থন জানাতেই তারা এসব হামলা করছে। হুতিদের হামলার কারণে অনেক জাহাজই গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :