AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পোশাকখাতে কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না : বিকেএমইএ সভাপতি


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬:৩২ পিএম, ৩ জানুয়ারি, ২০২৪
পোশাকখাতে কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না : বিকেএমইএ সভাপতি

পোশাকখাতে চলমান অস্থিরতা, চ্যালেঞ্জ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নানামুখী গুজব প্রসঙ্গে সময় সংবাদের সঙ্গে একান্ত আলাপ হয় বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলির। তিনি জানান, দেশের পোশাকখাতে বিদেশি কোনো নিষেধাজ্ঞা আসার বিন্দুমাত্র শঙ্কা নেই।

সময় সংবাদকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পশ্চিমারা দেশের পোশাকখাতের শ্রমমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। হলফ করে বলা যায়, তারা বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য যেসব দেশ থেকে পোশাক নেয় তাদের শ্রমমানের তুলনায় বাংলাদেশের শ্রমমান বহুগুণে ভালো।

চাইলেই শ্রমিকদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই করা যায় না উল্লেখ করে হাতেম বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইনে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে এবং সেটির বাস্তবায়ন দৃশ্যমান। ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারা মানে শ্রমিকরা তাদের সমঅধিকারের দাবি জানাতে পারবেন এবং এ লক্ষ্যে মালিকদের থেকে ন্যায্য দাবি আদায় পর্যন্ত করতে পারবেন। ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের (আইএলও) কনভেনশনে বঙ্গবন্ধু শ্রমিকদের অধিকারের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন।

বাংলাদেশের শ্রমনীতি অন্যান্য দেশের থেকে ভালো উল্লেখ করে হাতেম বলেন, আমেরিকা এখন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে অনেক উচ্চবাচ্য করছে। কিন্তু ১৯৭৪ সালে আমেরিকা নিজেই ট্রেড ইউনিয়ন প্রস্তাব এবং কালেকটিভ বারগেইন প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেনি। আইএলওর প্রধান মৌলিক ৮ প্রস্তাবের সবকটিতে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে, যেখানে আমেরিকা সম্মত হয়েছে মাত্র দুটিতে। অন্যদিকে আমেরিকা বাংলাদেশ ছাড়া যাদের থেকে পোশাক নেয়, যেমন- ভারত, ভিয়েতনাম চীন সেসব দেশও আইএলওর সব প্রস্তাব মানেনি। বাস্তবতা বিবেচনা করলে আমেরিকা বাংলাদেশের শ্রমমান নিয়ে এ ধরনের প্রশ্নই তুলতে পারে না।

চলমান শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে হাতেম বলেন, যখন দেশের পোশাকখাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধির কারণে কমেছে পোশাক আমদানির চাহিদা, ঠিক সে সময়ে বেতন বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। তারপরও তাদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। মালিকরা লোকসান করে শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছেন। এরপরও প্রায় প্রতিদিন খবর আসে কোনো না কোনো পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন। হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দেয়ার এখতিয়ার কোন দেশের শ্রমিকদের আছে? দেশের শ্রম আইন কিংবা আইএলওর কোনো নীতিতে এই এখতিয়ার তাদের দেয়া হয়নি। কিন্তু এমন অরাজকতার পরেও তাদের কাউকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না। আন্দোলন শেষে কারখানায় ফিরলে আগের চাকরিতেই বহাল থাকছেন, বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।

যারা পোশাকখাত নিয়ে বড় বড় কথা বলছেন তারাই রক্তচোষার ভূমিকায় আছেন উল্লেখ করে হাতেম বলেন, পশ্চিমারা বড় গলায় শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর কথা বলে। অথচ তাদেরই অনেকগুলো ব্র্যান্ড আছে যারা বাংলাদেশ থেকে কম দামে পোশাক নিচ্ছেন। এদেরকে দাম বাড়াতে বলা হলেও কোনোভাবেই দাম বাড়াচ্ছে না। কারখানা মালিকরা লোকসানে কাপড় বিক্রি করছেন। বাধ্য হয়ে ব্র্যান্ডগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছে কারখানা মালিকরা আর সেই সুযোগ নিয়ে তারা মালিক-শ্রমিকদের রক্ত চুষে খাচ্ছে।

পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোকে পোশাকের দাম বাড়ানোর জন্য কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হাতেম বলেন, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর পর তাদের ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে হ্যাঁ-না কিছুই এখন পর্যন্ত জানাননি তারা। তবে ৫ শতাংশ না হলেও ২ শতাংশ দাম বাড়ানো হবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশের পোশাকখাত পশ্চিমাদের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। পশ্চিমারা বাংলাদেশের পোশাকখাতের ওপর নির্ভরশীল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাতেম বলেন,
বাংলাদেশ থেকে তারা যে পরিমাণ লাভ করতে পারে তার ধারকাছেও অন্য দেশ থেকে পোশাক নিয়ে লাভ করতে পারে না। আমরা ১ ডলারে তাদের কাছে টি-শার্ট বিক্রি করি যেটি ব্র্যান্ডগুলো ভোক্তাদের কাছে ১০ ডলারের বিক্রি করে। পোশাক উৎপাদন করে আমরা পাই ১০ শতাংশ লাভ, তাদের ভাগে যায় ৯০ শতাংশ। এটা কোনো মনগড়া মুখরোচক পরিসংখ্যান না। কেউ চাইলে একদম খাতে-কলমে এই বৈষম্যের প্রমাণ দেয়া সম্ভব। তারা যতই বলুক বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনবে না, তাদের সবচেয়ে বেশি লাভ বাংলাদেশের পোশাকে।

বর্তমানে পোশাকখাতে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনেক বেশি কথা হলেও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের থেকে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ বেশি উল্লেখ করে নির্বাহী সভাপতি বলেন, দেশের পোশাক কারখানাগুলো ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতে ভুগছে। কিছু কারখানা হয়তো ফার্স্ট স্টেজে আছে কেউবা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে ব্যবসা বন্ধের চিন্তাভাবনা করছেন। মূলত তিনটি অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য দেশের পোশাকখাতের নাজেহাল দশা। প্রথম গ্যাস সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের অভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দেশের একটি জোনে দুই মাস ধরে গ্যাস নেই। সেই জোনের কারখানাগুলো রীতিমতো ধুঁকছে। এর আশু সমাধানের দাবি জানিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে চরম মাত্রার অসহযোগিতার শিকার হচ্ছে। কেউ কেউ ঋণপত্র খুলতে পারছে না, কেউবা আবার পেমেন্ট করতে পারছে না- এমন সমস্যা এখন নিত্যদিনের ঘটনায় রূপ নিয়েছে। এদিকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়লেও আশানুরূপভাবে ব্যবসায়ীদের খরচের লিমিট বাড়ানো হয়নি। এতে করেও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।

ব্যাংকের পাশাপাশি কাস্টমসের স্বেচ্ছাচারী কার্যক্রম ব্যবসায়ীদের কাছে এক রকমের অসহ্যকর অবস্থায় পৌঁছে গেছে উল্লেখ করে হাতেম বলেন,
পান থেকে চুন খসলেও কাস্টমস কঠোর পদক্ষেপ নেয়। এক একটি জরিমানার আকার ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। এভাবে ব্যবসায়ীদের গলা টিপে ধরলে ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। মাঝে ব্যবসায়ীরা কাস্টমসের ঘুষ বাণিজ্যেরে বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করলে কাস্টমস আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা এখন ঘুষও খাচ্ছে, জরিমানাও নিচ্ছে। যদ্দুর জানি এই জরিমানার একটা অংশও তারা পেয়ে থাকেন। যে পোশাকখাত দেশের সিংহভাগ রফতানি আয়ের উৎস, সেই খাতের ওপর এভাবে চড়াও হওয়া কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের মনোভাব নিয়ে হাতেম বলেন, কর্মকর্তাদের এমন একটা ভাব তারা সবাই সাধু আর আমরা ব্যবসায়ীরা চোর। অসাধু ব্যবসায়ী যেমন আছে, তেমনি অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তাও আছে। সবাইকে এক দাঁড়িপাল্লায় মাপলে হবে না। রাজস্ব বিভাগের সদস্যরা বলছেন, তারা কঠোর হলে ব্যবসায়ীরা নাকি স্যুট পড়ে পর্যন্ত ঘুরতে পারতো না। যেসব ব্যবসায়ী স্যুট পড়ে ঘুরছেন, গাড়িতে চড়ছেন তাদের ঋণের বোঝার দিকে কাস্টমস তাকাচ্ছে না। তারা ধরেই নিয়েছে ব্যবসায়ী মানে টাকার পাহাড় আর সবাই চুরি করে টাকা বানিয়েছে। তাদের এ ধরনের মনোভাব বজায় রাখলে আর যা হোক দেশের বাজারে ব্যবসা চলমান রাখা সম্ভব না।

চলতি বছর দেশের পোশাকখাত কেমন যাবে জানতে চাইলে হাতেম বলেন, বৈশ্বিক দিকে থেকে দেশের পোশাকখাতের ওপর বড় ধরনের কোনো চাপ নেই। কিন্তু অভ্যন্তরীণ এসব সমস্যা সমাধান না করলে চলতি বছর দেশের পোশাকখাত থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না বলে জানান সংগঠনটিরে নির্বাহী সভাপতি।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!