গেল মাসের মাঝামাঝিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও ঠিক শেষের দিকে এসে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি হাঁকায়। এরপর পেঁয়াজের দাম ১০৫ থেকে ১১০-এর মধ্যে ছিল। গত শুক্রবার (৯ ফেরুয়ারি) সেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২০ টাকা ওঠে। আর আজ শনিবার তা ১৩০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ফলে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে মোটামুটি ৫০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩ টাকার বেশি।
শনিবার (১০ ফেরুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ একেবারেই শেষের দিকে হওয়ায় এই পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে বাজারে। তাই এই দাম বাড়তি আরও কয়েক দিন থাকবে, এরপর হালি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলে দাম অনেক কমে যাবে।
হঠাৎ পেঁয়াজের এমন বাড়তি দামের বিষয়ে বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের দাম বাড়তি যাচ্ছে। কারওয়ান বাজারেই দাম পড়েছে প্রতি কেজি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। এরপর আছে পরিবহন খরচ, রাস্তা খরচ, দোকান খরচ। সব মিলিয়ে আজ পেঁয়াজ ১২০/১৩০ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কেনা পড়তো ৮০/৮৫ টাকা। তখন আমরা খুচরা দোকানে ১০০/১০৫ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু গতকাল থেকে দাম বেড়ে যাওয়ায় আর পারছি না।
মগবাজার এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বাজার করতে গিয়ে পেঁয়াজের দাম শুনে নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, ৩/৪ দিন আগেই পেঁয়াজ কিনলাম ১০০ টাকা কেজি। আজ দেখছি হয়েছে ১৩০ টাকা। তিনদিনের মধ্যে এক লাফে ৩০ টাকা বেড়ে গেল, অথচ বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ দেখতে পেলাম না।
পাবনা থেকে পাইকারি দরে পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় খুচরা বিক্রি করেন আলমগীর হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে পাবনাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি কেনা পড়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, সেই পেঁয়াজ রাজধানীতে খুচরা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। আগের সপ্তাহে সেখানে প্রতি মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজ কেনা পড়তো ৩২০০ থেকে ৩৪০০ টাকা কেজি, বর্তমানে সেটা পড়ছে ৩৮০০/৩৯০০ টাকা।
অন্যদিকে মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকার খুচরা বিক্রেতা মুদির দোকানি হালিম উদ্দিন বলেন, কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য পাইকারি বাজারে প্রতি পাল্লার (৫ কেজিতে এক পাল্লা) দাম পড়ে যাচ্ছে ৫২৫ থেকে ৫৫০ টাকা। সেই পেঁয়াজ পরিবহন খরচ দিয়ে এনে অন্যান্য সব খরচের হিসেব করে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি। আমরা যখন পাইকারি বাজারে বেশি দামে কিনে আনি তখন আমাদের খুচরা দোকানেই বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়। আবার যখন পাইকারি বাজারে কম দামে পেতে শুরু করব তখন আবার কম দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করব ক্রেতাদের কাছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশনের অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন, গতকাল বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৯০ টাকা আর এক মাস আগে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৮৫ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু গত বছর এই সময় এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।
এদিকে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনায় গেলে বাজারে প্রায় সব সবজির দামই কমে এসেছে। কিন্তু একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজের দামে যেন লং জাম্প! এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি। সবজি নিয়ে স্বস্তির কথা জানালেও পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
লাল ও সাদা আলু ৩৫ টাকা, দেশি রসুন ২৬০-২৮০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ২২০, চায়না আদা ২০০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় আজ আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা এবং চায়না রসুনের দাম কমেছে ২০ টাকা।
আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, পেঁয়াজের দাম আজ ভালোই বাড়তির দিকে আছে। গত শুক্রবার যেটা ৯০ টাকা বিক্রি করেছি, সেটা আজ সেটা ১২০ টাকা। আমাদের হাতে কিছু নাই। আমরা খুচরা বিক্রি করি। আমরা যে দামে আনি সেখান থেকে লাভ রেখে বিক্রি করি।
আজকের বাজারে শিম ৬০-৭০ টাকা, শালগম ৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৫০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, পেঁয়াজ কলি ৪০ টাকা, মটরশুঁটি ১০০ টাকা, সাদা মূলা ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৮০-১২০ টাকা, খিরাই ৮০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১২০, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ১০০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ব্রোকলি ৫০ করে বিক্রি হচ্ছে। দেখা যায় প্রায় সব সবজির দামই কমেছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
সবজি বিক্রেতা মো. কালাম বলেন, গত সপ্তাহের থেকে আজ সব সবজির দামই কমে গিয়েছে। দাম কমলে আসলে ক্রেতাদের যেমন সুবিধা হয় তেমনি আমাদেরও সুবিধা হয়। কোনও সবজি যদি আমরা ৫০ টাকায় কিনি সেটা আমরা অনায়াসেই ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করতে পারি। কিন্তু কোনও সবজি যদি ৮০ টাকায় কিনি সেটা ১০০ টাকায় বিক্রি করা কঠিন হয়ে যায়।
বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল ওয়াহাব বলেন, সবজির দাম অনেকটাই কমে এসেছে। এটা একটা ভালো ব্যাপার। কিন্তু আমাদের বাজারের ওপর তো ভরসা করা যায় না। আজ দাম কম আছে। কালই এসে দেখবেন দাম বেড়ে গিয়েছে। কোনও কিছুরই ঠিক ঠিকানা নাই।
তবে মাছের বাজারে দাম আগের মতোই আছে। আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৯০০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৮০০ টাকা, কালবাউশ ৫০০- ১২০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ -১২০০ টাকা, কাঁচকি ৪৫০ টাকা, কৈ ২৫০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং ৪০০-১৪০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, কাজলি মাছ ১১০০-১২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০- ১৩০০ টাকা, রূপচাঁদা ১০০০-১২০০ টাকা, শোল ৭০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দামও একই রকম আছে। বয়লার মুরগি ১৯৫-২১০ টাকা, কক মুরগি ২৭৫-২৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির লাল ডিম ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৩০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের সব পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৭৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/স.আ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :