ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের গ্রাহকদের দেয়া একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। এটি দিয়ে কেনাকাটার পাশাপাশি বিভিন্ন সেবার জন্য ঋণ নেয়া যায়। তবে সেই ঋণ অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কেননা, যদি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই অর্থ ফেরত না দেয়া হয়, তাহলে গ্রাহককে গুণতে হবে সুদ। কাজেই সর্তকতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে এই কার্ড।
সাধারণত তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জারি করা প্লাস্টিকের পাতলা আয়তক্ষেত্রাকার কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড এটির ধারকদের যে কোনো পণ্য ও পরিষেবা কেনার জন্য অর্থ ঋণের সুবিধা দিয়ে থাকে। এই ঋণ করা অর্থ কার্ডের ধারককে একটি প্রযোজ্য সুদসহ নির্দিষ্ট সময় পর ফেরত দিতে হয়। যদিও বা কোনো কারণে সুদ দিতে দেরি হয়, তাহলে বাড়তে থাকে ঋণের পরিমাণ। তাছাড়া ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকাও তোলা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হারে সুদ দিতে হয়। ক্রেডিট কার্ড মূলত কেনাকাটা করার জন্যই গ্রাহকেরা ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকগুলো প্রধানত ভিসা, মাস্টারকার্ড, জেসিবি এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস- এই চার মূল ধরনের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের সরবরাহ করে থাকে। কার্ডের ধারকের আয়ের যোগ্যতার মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এই কার্ডের পরিষেবাগুলোকে আলাদা করার জন্য ব্যাংকগুলো সাধারণত প্লাটিনাম, গোল্ড বা ক্লাসিক হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে।
আবার ক্রেডিট লিমিট বা কত টাকা পর্যন্ত খরচ বা উত্তোলন করা যাবে সেটি সাধারণত গ্রাহকের মাসিক আয়ের ভিত্তিতেই ব্যাংকগুলো হিসেব করে। তবে বিভিন্ন ব্যাংকের ভিন্ন ভিন্ন নীতি থাকার কারণে ক্রেডিট লিমিট সব ব্যাংকের একই নাও হতে পারে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যে কেবল ঋণ নেয়া যায়, তা নয়, বিভিন্ন উপলক্ষে এই কার্ডগুলো গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধাও দিয়ে থাকে। রিওয়ার্ড পয়েন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ডিসকাউন্ট এবং গিফট কার্ডের ছড়াছড়ি থাকলেও সঠিক উপায়ে এই কার্ড ব্যবহার না করা হলে কার্ড ধারক পড়তে পারেন নানা সমস্যায়। তাই অবশ্যই এই কার্ড ব্যবহারে হতে হবে সাবধান। কাজেই কীভাবে সাবধানতার সঙ্গে এই কার্ড ব্যবহার করবেন, জেনে নিন।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা সহজ। কিন্তু আগেই দুইটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
এক. নিজের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি খরচ করবেন না।
দুই. প্রতি মাসে নিজের ব্যালেন্স সময়মতো পরিশোধ করুন।
তাছাড়া ক্রেডিট স্কোর কীভাবে কাজ করে তা একবার বুঝতে পারলে, তা আপনাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার ক্রেডিট স্কোর নিয়ন্ত্রণ এবং বৃদ্ধি করতে সহায়তা করতে পারে।
সঠিক ক্রেডিট কার্ড নির্বাচন করা
ক্রেডিট কার্ড নেয়ার আগে সেটি নিয়ে ভালোভাবে অবশ্যই রিসার্চ করে নেবেন এবং আপনার বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি ও ব্যয়ের ধরনের সঙ্গে যে কার্ডটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটিই বাছাই করুন। এক্ষেত্রে আপনার বিবেচনা করতে হবে, আপনার পূর্বের ঋণ, খরচ করার অভ্যাস এবং কার্ডের সুদ হার ইত্যাদি। বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে থাকে। রিওয়ার্ড কার্ডগুলো পয়েন্ট, মাইল বা ক্যাশব্যাংক অফার করে। ঋণ নিয়ে যাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই বা খারাপ অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা নিতে পারেন সিকিউরড কার্ড। উচ্চ-সুদের ঋণ এড়াতে উপকারী হতে পারে ব্যালেন্স ট্রান্সফার কার্ড এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত কার্ড হচ্ছে স্টুডেন্ট কার্ড। তাছাড়া ব্যবসায়িক খরচের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয় বিজনেস ক্রেডিট কার্ড।
আপনার ক্রেডিট স্কোর উপযুক্ত ক্রেডিট কার্ড নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উচ্চ স্কোরগুলো আপনাকে ভালো ভালো রিওয়ার্ড এবং উচ্চ ক্রেডিট লিমিট দিতে পারে। আবার সুরক্ষিত ক্রেডিট-বিল্ডিংয়ের জন্য আপনি চাইলে কম স্কোরের কার্ডগুলো বেছে নিতেও পারেন। তবে বাংলাদেশে এখনো ক্রেডিট স্কোরের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবুও, আপনার ক্রেডিট ইতিহাস আপনার ব্যাংকিং প্রোফাইলকে প্রভাবিত করে। কাজেই আপনার বাস্তবিক অর্থে কোনটা প্রয়োজন সেই অনুসারেই কার্ড বাছাই করুন।
সময়মতো ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করুন
একবার একটি ক্রেডিট কার্ড নেয়া হলে সেটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো সময়মত পেমেন্ট পরিশোধ করা। কাজেই সব সময় আপনার বিল সময়মত পরিশোধ করুন। দেরি করে অর্থ পরিশোধের কারণে আপনার যেমনি সুদের চার্জ ও বিলম্বিত ফি গুণতে হবেই, তেমনি এটি আপনার ক্রেডিট ইতিহাসকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। পাশাপাশি আপনার ক্রেডিট স্কোরও কমাতে পারে ব্যাংক।
আপনি যদি একেবারে পুরো বিল নাও পরিশোধ করতে পারেন, তাহলে কমপক্ষে সর্বনিম্ন বিল পরিশোধ করুন। ক্রেডিট কার্ডের চড়া সুদের হার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এবং ক্রেডিট স্কোর ঠিক রাখতে আপনার বিল পরিশোধ করুন।
ক্রেডিট সীমার অনুপাত
একই সঙ্গে ক্রেডিট সীমার তুলনায় কম ব্যালেন্স বজায় রাখা অপরিহার্য। ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিও হচ্ছে ক্রেডিট লিমিটের সঙ্গে আপনার ব্যালেন্সের অনুপাত। এটি ৩০ শতাংশের নিচে রাখা উচিত। এটি বেশি হলে বা আপনি কার্ড বেশি ব্যবহার করলে আপনার ক্রেডিট স্কোর বা ক্রেডিট ইতিহাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ অনুপাত কম রাখা শুধু যে আপনাকে আপনার ঋণ পরিশোধ পরিচালনায় সাহায্য করে তা নয়, বরং এটি আপনার ক্রেডিট ইতিহাসেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখুন
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সময় কিছু নিরাপত্তার বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। এটি এমন স্থানে রাখুন যাতে সহজেই অন্যদের চোখে না পড়ে। তাছাড়া ক্রেডিট কার্ডের নম্বর বা এ সম্পর্কিত স্পর্শকাতর তথ্য অন্যদের দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
ব্যাংকের অনুমোদিত বা নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া কার্ডের তথ্য অন্য কেউ চাইলে জিজ্ঞাসা করে তার পরিচয় নিশ্চিত হোন। কার্ড হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন। কেননা, দ্রুত সময়ে কার্ডটি লক হলে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়। তাছাড়া যে এটিএম ব্যবহার করে আপনি নিয়মিত টাকা তোলেন, চেষ্টা করুন সেসব স্থান থেকেই টাকা তুলতে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :