প্রায় এক মাস ধরে তাপপ্রবাহের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষেরা। দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম, তাই রাতেই নির্মাণকাজ সারছেন অনেকে। ফলে কমে এসেছে শ্রমজীবী মানুষের কর্মঘণ্টা। এই তাপদাহ জীবনের হুমকি ছাড়াও চরম প্রভাব ফেলছে অর্থনীতিতেও।
আমেরিকান ভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টারের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তাপপ্রবাহে শুধু ঢাকা শহরেই ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার বা ৬৬ হাজার কোটি টাকা।
আগে যেখানে শ্রমজীবীরা ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা কাজ করতে পারতেন, এখন তাপদাহের কারণে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ছয় থেকে সাত ঘণ্টায়। কেউ কেউ করছেন নাইট শিফট। এতে, কিছুটা শ্লথ হয়ে গেছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ।
রিকশাচালক আফজাল করিম বলেন, ঝড়-বৃষ্টি, ঠান্ডা-গরম সবই তার গা-সওয়া। তবু এই তাপদাহে কাহিল তিনি। একটানা বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারছেন না। একটু রিকশা চালালেই জিরোতে হয়। এত গরম সহ্য হয় না বলে জানান তিনি। অন্যসময় রহিমের দিনের রোজগার হতো ১০০০–১২০০ টাকা। এখন হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকা। এই গরমে এমন শ্রমজীবী আরও অনেকেরই একই দশা, কমেছে রোজগার।
গরমে ক্লান্ত হয়ে শ্রমজীবীরা দিনের অধিকাংশ সময়ই বসে থাকছেন। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ঠেলাগাড়িচালক, নির্মাণ শ্রমিকরা আগে দিনে ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করতে পারতেন। কিন্তু গরমের কারণে এখন তারা দিনে ৭-৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারেন না।
পোশাক খাতেও পড়েছে এর প্রভাব। গার্মেন্টস মালিকরা জানান, গরমের কারণে এ খাতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কর্মক্ষমতা কমেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি গুনতে হচ্ছে কারখানা মালিকদের।
তীব্র গরমের প্রভাব পড়েছে দেশের বড় বড় খাতগুলোতেও। এতে, বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
দেশে চলমান এই তীব্র তাপদাহ জীবনের হুমকি ছাড়াও চরম প্রভাব ফেলছে অর্থনীতিতেও। বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষি, উৎপাদন, খনিজ, খনন, পরিবহন ও নির্মাণের মতো খাতের অবদান ৫০ শতাংশের বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব খাতের শ্রমিকরা খোলা পরিবেশে কাজ করেন।
এ অবস্থায়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ বিশ্লেষকদের।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :