ভারতীয় চোরাই চিনিতে সয়লাব দেশের বাজার। এতে ধ্বংসের মুখে পড়েছে বেসরকারি খাতের চিনি শোধনাগারগুলো। ছয় লাখ টন অবিক্রীত চিনির মজুদ আটকে গেছে পাঁচটি সুগার রিফাইনারির গুদামে। এতে একদিকে উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে ঋণের বোঝা বাড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর।
হাত বাড়ালেই বস্তার পর বস্তা মিলছে ভারতীয় চোরাই চিনি। ফলে, মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেডসহ দেশের পাঁচটি রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানের গুদামে ছয় লাখ টন চিনি এভাবে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে।
মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেডের গুদামে পড়ে আছে দেড় লাখ টন চিনি। দেখে মনে হবে এটা কোন বিশাল আকৃতির পাহাড় অথবা বালু মহাল! কেনো পড়ে আছে এসব চিনি? কি কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেশিয় রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো? একমাত্র কারণ, ভারতীয় চোরাই চিনিতে দেশের বাজার এখন সয়লাব!
মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার আবু বাকার জানালেন, বিশেষ করে রোজার মাসে এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন চিনি বিক্রির সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু, ওই মাসে মাত্র ৫০ হাজার মেট্রিকটন চিনি বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতীয় চোরাই চিনির কারণে বাজারে দেশীয় চিনির বিক্রি কমেছে। এই বিশাল চিনির স্তূপ ছাড়াও পড়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ চিনি উৎপাদনের কাঁচামাল।
সুগার রিফাইনারি মালিকদের মাথার উপর ঝুলছে ঋণের বোঝা। সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকার ওপর। এছাড়া নিম্নমানের চিনি খেয়ে চরমভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন, ভোক্তারা।
সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী জানান, এভাবে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে রুগ্ন হবে দেশের চিনি শিল্প। এতে এ খাতে যে কর্মসংস্থান গড়ে উঠেছে, তাও কমবে। আর যারা এ ব্যবসায় পুঁজি লগ্নি করেছে, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চিনি শিল্পের ক্রান্তিকালে এসে ৮ হাজার কোটি টাকার এই শিল্পকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। অবৈধ পথে নিম্নমানের চিনি অনুপ্রবেশ বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্দেশনা প্রদান করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধও জানিয়েছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, কমপক্ষে ৭-৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে এ খাতে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিনি চোরাচালান বন্ধ করে এ সমস্যা সমাধানের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনভূক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের বাৎসরিক উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ লাখ টনের মতো। আর সুগার রিফাইনারি এসব প্রতিষ্ঠান চাহিদার ৯৯ শতাংশ চিনির যোগান দেয়।
আর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এ খাতে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ। সুতরাং চিনি চোরাচালান বন্ধ না হলে সুগার রিফাইনারি কোম্পানির মতোই চরম ঝুঁকির মুখে পড়বেন এসব মানুষেরা।
একুশে সংবাদ/ই.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :