নানামুখী সঙ্কট আর অনিশ্চয়তায় ধুঁকছে দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্প। একদিকে চোরাকারবারীদের দাপট, অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ট্যাক্স-ভ্যাটের খড়গে ঝুঁকিতে বিনিয়োগ। উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। গত দুই বছরে উৎপাদন থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত দফায় দফায় ভ্যাট আরোপ করেছে এনবিআর।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় হ্যান্ডসেট শিল্পে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে উদ্যোক্তাদের মাঝে ছড়িয়েছে উদ্বেগ। তাদের দাবি, চোরাকাবারীদের দমন করা হোক। নয়তো এ শিল্পে পড়বে বিরূপ প্রভাব।
মোবাইল ফোন ইন্ডাষ্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট রিজওয়ানুল হক বলেন, আমরা এখন সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছি, সেটা গিয়ে দাঁড়াবে সাড়ে ১২ শতাংশে। কিন্তু একাধিক ধাপে ভ্যাট-কর না নিয়ে যদি একেবারে ১৫ শতাংশ করে ফেলা হয়, তাহলে আর প্রতিটি ধাপে দিতে হতো না। আরও ৩ শতাংশের জন্য একাধিক প্রতিটি ধাপে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। যতবার ভ্যাট বসাচ্ছে, তত লাভ কমে যাচ্ছে। কারণ, গ্রে মার্কেট বড় হচ্ছে।
বছরে দেশে হ্যান্ডসেট বিক্রি হয় ১ কোটি পিস। উৎপাদনকারীদের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের পর থেকে ৩ বছরে দেশের হ্যান্ডসেট বাজারের ৪০ শতাংশের বেশি দখলে নিয়েছে চোরাকারবারীরা। ফলে, স্থানীয় উৎপাদন ৬০ লাখে নেমে এসেছে। বন্ধ হচ্ছে কারখানাগুলোর একের পর এক প্রোডাকশন লাইন। ছাঁটাই হতে যাচ্ছে কর্মী। স্থানীয় বাজার সুরক্ষার পাশাপাশি রফতানি বাজারে অবস্থান গড়ে তোলার জন্য এই খাতে দীর্ঘমেয়াদী করনীতি চান শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
এমআইওবি এর প্রেসিডেন্ট জাকারিয়া শহীদ বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে যদি এই খাত থেকে সুবিধা তুলে নেয়া হয় এবং আরও ট্যাক্স-ভ্যাট আরোপ করা হলে গ্রাহকের কাছে কম দামে হ্যান্ডসেট দিতে পারবো না। এক্ষেত্রে গ্রে মার্কেট বা অবৈধ বাজার বড় হয়ে যাবে। কোনো পরিবর্তন না এনে এখন যেভাবে আছে, সেভাবে আরও ৩-৪ বছর রাখা দরকার।
চোরাই হ্যান্ডসেটের বাজার বন্ধ করার জন্য এনইআইআর এর মতো স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি থাকলেও তা এখনও ব্যবহার করতে চায় না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তবে, এসব হ্যান্ডসেটের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জোরালো অভিযানের পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।
বিটিআরসি কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, কাস্টমসকে ফাঁকি দিয়ে মোবাইল সেট যদি ভিন্ন পথে দেশে আসে, এই দায়িত্ব কিন্তু বিটিআরসির না। এনবিআর শক্তিশালী ও স্বাধীন বিভাগ। তাদের দায়িত্ব হলো কোনো ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া হ্যান্ডসেট যেন অবৈধভাবে দেশে না আসে।
২০১৭ সালে দেশে হ্যান্ডসেট নির্মাণ শিল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। যুগপোযোগী বিনিয়োগ নীতির ফলে একে একে গড়ে উঠে দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের ১৭টি কারখানা।
একুশে সংবাদ/ই.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :