কদিন ধরেই টক অব দ্য কান্ট্রি শের-ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২৩ নম্বর রুম। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সময় সেদিন কী ঘটেছিল এ হলে? মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় হুমাইরা ইসলাম ছোয়া নামে এক শিক্ষার্থীর ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল ওই হলের পরিদর্শক ডা. নাফিসা ইসলামের বিরুদ্ধে। অবশেষে দেশের একটি গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন তিনি। জানালেন সেদিনের আদ্যপান্ত!
অভিযোগকারী পরীক্ষার্থীর দাবি, একজন পরিদর্শক তার পাশের শিক্ষার্থীর কাছে ডিভাইস পেয়ে সন্দেহজনকভাবে তার খাতা নিয়ে ওএমআর ছিঁড়ে ফেলেন। পরে ফেরত দিলেও তখন আর সময় ছিল না তার হাতে।
দুদিন এ নিয়ে চুপ থাকলেও ফলাফলের দিন সামনে আসে বিষয়টি। আশ্বাস দেয়া হয় সঠিক তদন্তের। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। আলাদা করে বাকিদের সঙ্গে কথা বলা গেলেও এক রকম আড়ালেই ছিলেন অভিযুক্ত পরিদর্শক ডা. নাফিসা।
এবার একটি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। ওএমআর ফরম ছিঁড়ে ফেলা কিংবা পরীক্ষার্থীর কাছে ইলেকট্রিক ডিভাইস পাওয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি বলে দাবি ডা. নাফিসার।
যেহেতু এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেই তার দাবি, তাই আলাদা করে হুমাইরার চেহারা তার মনে নেই। তবে তদন্ত কমিটির সঙ্গে আবারও সেই হল পরিদর্শনে গিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন অভিযোগকারীর ওই প্রান্তেই তিনি যাননি। তার স্বাক্ষরও নেই সেই খাতায়।
ডা. নাফিসা জানান, সেই দিন খুব স্বাভাবিক পরিবেশেই পরীক্ষা হয় ৮২৩ নম্বর রুমে। ওএমআর ছেঁড়াতো দূরের কথা, ঘটেনি কোনো অনাকাঙিক্ষত ঘটনা। পরীক্ষার কয়েক দিন পর ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগে অনেকটাই বিচলিত তিনি।
ডা. নাফিসা বলেন, ১০টা বাজলেই রুম আটকে দেয়া হয়। কতজন এসেছিলেন, সেটা গণনা করা হয়। সবকিছু হল সুপার করেন। সেখানে ১০৬ জন পরীক্ষার্থী ছিল। দুজন অনুপস্থিত ছিল। পরীক্ষা শেষে বাকিদের খাতা গণনা করে নেয়া হয়েছে। পরীক্ষায় কোনো ডিভাইস পাওয়া বা এরকম কিছু হলে হল সুপার এ বিষয়ে সাধারণত নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে জানান। কিন্তু আমার রুমে এরকম কোনো ডিভাইস পাওয়া তো দূরের কথা, এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সুন্দর মতো পরীক্ষা হওয়ার পর আমরা বের হয়ে আসি।
‘আমাকে যতটুকু দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, আমি সেটাই পালন করেছি। সবার চেহারা তো মনে রাখা সম্ভব না। কোনো কিছু ঘটলে মানুষ মনে রাখে। কিন্তু যেখানে কিছুই হয়নি, একজন শিক্ষর্থীও ভুল করেননি, ফলে ওএমআর শিটও পরিবর্তন করে দেয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে মনে রাখবো? তার খাতায় আমার সাইন নেই; সাইন থাকারও কথা না। কারণ সেখানে আমরা দুজন নারী ছিলাম। আমার সাইডে অভিযোগকারীর রোলও পড়েনি’।
নিজেকে আড়াল করা নিয়ে ডা. নাফিসা বলেন, এটা আসলে আমার দুর্ভাগ্য যে, আমাকে তারা যে নম্বরে ফোন করেছেন, পরিদর্শকের তালিকায় আমার যে নম্বর ছিল, সেটা ভুল ছিল। ভুল ছিল, কারণ সেটা তাদের টাইপিং মিসটেক ছিল। এ বিষয়ে আমার হল সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও প্রথমে আমাকে ফোন করে পাননি। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এছাড়া আমি নিয়মিত হাসপাতালেও যাচ্ছি। কিন্তু হাসপাতালে আমাকে যে বিভাগে খোঁজা হয়, আমি সেই বিভাগে ছিলাম না। আমার প্লেসমেন্ট ছিল অন্য জায়গায়। আর বুধবার পর্যন্ত আমার ফেসবুক অ্যাকটিভ ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার বাসায় এসে দেখি, আমার নামটা সরাসরি চলে এসেছে। তখন আমি ভাবলাম যে, আমার নামটা যেহেতু পয়েন্ট আউট হয়ে গেছে, আমার সন্দেহ হয়েছিল যে আমার নামে কিছু ছড়াতে পারে, সেজন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমি ফেসবুক ডিঅ্যাকটিভেট করি।
এদিকে, এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাই জানিয়েছে এমন কোনো কোনো ঘটনাই ঘটেনি এই হলে। তাহলে হুমাইরার অভিযোগ কি একেবারেই মিথ্যা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন খোদ ডা. নাফিসাও।
সূত্র- সময় টিভি
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :