দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠান পর থেকে দিন-রাত অবিরাম পরিশ্রম-মেধা দিয়ে সেরাদের সেরা হিসেবে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম করেছেন ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। বর্তংমানে যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে জাগ্রত করা হয় দায়বোধ, জাতীয়তাবোধ ও মূল্যবোধ। শিক্ষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী খুঁজে পায় দেশপ্রেম, জাতীয় সত্তা ও সামনে চলার পথ। যোগ্যনেতা, সৎ, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হবার একমাত্র মাধ্যম হলো শিক্ষা। শিক্ষাই একজন শিক্ষার্থীকে দেশ ও জাতি গড়ার কাজে প্রেরণা যোগায়। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে বর্তমানে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। এতে অভিভাবক ও সচেতন মহল প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে।
অভিভাবকরা বলছেন,বর্তমানে একটি কুচক্রী মহল ঐতিহ্যবাহী শামসুল হক খান স্কুল এণ্ড কলেজের শিক্ষার মান ও সুনাম নষ্ট করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। তাদের বিরুদ্ধে সকলকে সর্তক থাকার আহ্বান জানান। গতকাল সরজমিনে এসব তথ্য জানা গেছে।
বরাবরই নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করেছে: সর্ব শেষ মেধা লালনে অনন্য ডেমরার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় বরাবরের মতো নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করেছে। পরীক্ষায় ১২৩৫ জন শিক্ষার্থীর ৮৩৬ জন এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পাসের শতকরা হার ৯৯.৭৬। কেবল মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেই নয়, এর আগে ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও তার প্রতিষ্ঠানের ফলাফল ভালো ছিল। ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ৯৬ জন। তাদের মধ্যে এ প্লাস পায় ৮৯৯ জন, পাসের হার ছিল ৯৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত বছরে ৩৫ জন শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। বুয়েটসহ অন্যান্য প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ছেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পাস করে সম্মিলিত মেধা তালিকায় একাদশ স্থান অর্জন করা সানজিদা হক মাহী ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে।
তিনি বলেন, তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। তার বড় দুই ভাই-বোনও এখান থেকেই পাস করেছেন। তার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। এরআগে প্রকাশিত হয়েছে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল। তাতে দেখা যায়, ঢাকার একটি কলেজের ৫১ জন শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। চিকিৎসক হতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তারা।
যে তথ্য তুলে ধরলেন ড.মাহবুবুর রহমান মোল্লা: বরাবরের মতো সাফাল্য অর্জন নিয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেছেন, শিক্ষকদের সহযোগিতা, শিক্ষার্থীদের কঠোর অধ্যবসায় এবং দুই কলেজের পড়ার মানই কারণ। মাতুয়াইলের সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ শুধু মেয়েদের জন্য। মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজটিতে ছেলে-মেয়ে উভয়ই পড়েন। প্রভাতী শাখায় মেয়েরা, দিবা শাখায় ছেলেরা। দুই কলেজের শিক্ষার্থীরাই মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তিনি আরও বলেন, এখানে এবারে ভর্তির সুযোগ পাওয়া এমন শিক্ষার্থীও রয়েছে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবে আমরা প্রমাণ করতে চেয়েছি, দারিদ্র্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সেখানে কেবল দরকার নিজ ইচ্ছা, আর সঙ্গে গাইডেন্স। সেই গাইডেন্সটা আমরা দিয়েছি। বাকিটা তারা নিজেরাই করেছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি কতটা মনোযোগ দেন, তা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা ছোট থেকেই শিক্ষার্থীদের স্বপ্নবাজ করে গড়ে তুলি। আমরা তাদের শিখিয়েছি, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-মেয়ে, ধর্ম-বর্ণ কোনিিটই বিশেষ কিছু নয়। কেবল মানুষ হতে হবে, মানবিক হতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও যাদের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি বা ম্যাথের মতো বিষয়গুলোতে ক্লাসে সমস্যা হতো, তাদের জন্য আমরা ছুটির পর স্পেশাল ক্লাস নিতেন শিক্ষকরা। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে নিজের বেতন থেকে ভর্তির টাকাও দিয়েছেন বলে জানান অধ্যক্ষ মাহবুবুর।
ভালোবাসার প্রতিষ্ঠানকে যত্ন করাই বড় হওয়ার মূলমন্ত্র: ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেছেন,যাকে ভালোবাসি তাকে যত্ন করতে হয়, এটিই বড় হওয়ার মূলমন্ত্র। প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের হাতে গড়েছি। কী করলে শিক্ষার্থীরা মনোযোগী হবে, লেখাপড়া কবরে, পরীক্ষায় ভালো করবে প্রতিনিয়ত সেই চিন্তা করেছি। শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনোযোগ দিয়ে, তাদের পাঠোন্নয়ন প্রচেষ্টা নিয়ে নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ করেছি। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি ও শ্রেণিকক্ষে মনোনিবেশের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান কখনোই শিথিল ছিল না। পুরো শিক্ষাবর্ষ সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছি। সাপ্তাহিক কুইজ ও পরীক্ষার্থীদের সব রকম মডেল টেস্ট গ্রহণ করা হয়। নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে শিক্ষকেরা যে যাঁর মতো ভূমিকা পালন করেন, তাদের বড় মাপের মানুষ হতে স্বপ্ন দেখান। শিক্ষার্থীদের আনন্দ-বিনোদনের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছে সমৃদ্ধ সহশিক্ষা অঙ্গন। ভালো লাগা, ভালোবাসা, আশাবাদ ও নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজকে ধীরে ধীরে বিকশিত করেছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য স্কুল ও কলেজ শাখায় রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সেন্ট্রাল জেনারেটরের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীদের তথ্য অভিভাবককে পৌঁছে দেওয়া হয় খুদে বার্তার মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শিক্ষকেরা। গৃহীত সব পরিকল্পনার ফলশ্রুতি পর্যাপ্ত মেধা বৃত্তি, এবং ২০১৫ সালে এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করে।
এ কলেজ থেকে অসংখ্য এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। নিত্যনতুন পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ আজ দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ। এছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিকল্পনার ফসল ক্রমাগত ঈর্ষণীয় সাফল্য। প্রথমত, মেধার ভিত্তিতে সেকশন বিভাজন। অর্থাৎ মেধাবী ও দুর্বল মেধার শিক্ষার্থীদের আলাদা করা হয়। তারা কী পড়বে এবং কেমন করে পড়বে সে ব্যাপারে বিষয় শিক্ষকেরা পরিকল্পিত ভূমিকা রাখেন। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের ভালো পরীক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকেরা তদারকি করেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সমস্যা প্রশাসনিক উদ্যোগে অবগত হতে হয়। তাদের সব রকম সমস্যা বিবেচনায় রেখে পরীক্ষা প্রস্তুতিতে প্রতিষ্ঠান নিয়মিত সহযোগিতা করে। অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পাঠোন্নয়নে পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো পরিস্থিতিতেই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিরাশ বা নিরুৎসাহিত করা হয় না। পরীক্ষার্থীদের আনন্দিত ও উৎসাহিত রাখতে প্রতিষ্ঠান তার ভূমিকা পালন করে যায়। পরীক্ষার্থীদের পাঠের পরিবেশ জানতে হোম ভিজিট করা হয়, শ্রেণি সমন্বয়ক শিক্ষকেরা তাদের খোঁজখবর রাখেন। এসব প্রচেষ্টা পরীক্ষার ফলাফলকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় আশাব্যঞ্জক ফল লাভ করে।
শিক্ষার্থীদের বিনোদন চর্চায় গড়ে উঠেছে ১৫টি ক্লাব: প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেছেন, সহশিক্ষায় দেশের অগ্রগামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শিক্ষার্থীদের বিনোদন দিতে ও সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহী করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেছে ১৫টি ক্লাব। এর মধ্যে স্কাউট গ্রুপ, ডিবেট ক্লাব, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব ও আর্ট অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব উল্লেখযোগ্য। জাতীয় মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা পুরস্কার ও পদক জয় করছে। প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব শিক্ষার্থীই কোনো না কোনো ক্লাবের সদস্য। এ বছরের জানুয়ারি মাসে উদ্যাপিত হলো জাঁকালো ক্লাব উৎসব। এভাবে নানা চিন্তায়, চেষ্টায় শিক্ষার্থীরা এগোচ্ছে, সহশিক্ষার অঙ্গন প্রতিষ্ঠানের বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় তাঁদের জানার গভীরতা, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁদের জ্ঞান যথাসম্ভব যাচাই করা হয়। বলা যায়, এসব দিক বিবেচনায় রেখে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজশিক্ষক নিয়োগ করে।
কিন্ডার গার্টেন থেকে সেরা স্কুল: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটর দূরে ডেমরার মাতুয়াইল পাড়াডগার গ্রামে অবস্থিত দেশসেরা শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মাতুয়াইল এলাকার স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সামসুল হক খান ১৯৮৯ সালে নিজের নামে কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯৯৩ সালে সেটি উচ্চ মাধ্যমিক হিসেবে হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ড. মাহবুবুর রহমান সে বছরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দেন। তখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল মাত্র ১২৫ জন। বর্তমানে ১৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকের সংখ্যা ৩৭৫ জন। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১২০ জন। কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০০৩ সালে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখানে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা। বর্তমানে সারা দেশে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ বেশ সুপরিচিত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির শুরুটা হয়েছিল খুবই সাধারণভাবে। অল্প কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। তখন অনেকটা চেয়ে, অনুরোধ করে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করতে হতো। পড়ানো হতো বিনা বেতনে। এমনকি মাস শেষে শিক্ষকেরা বেতনও পেতেন না। তবু হাল ছেড়ে দেননি মাতুয়াইলের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের কৃতিসন্তান ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা। তার নিরলস প্রচেষ্টা-শ্রম আর মেধায় আজকে দেশজুড়ে খ্যাতি অর্জন করে চলেছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিক ও বৃত্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় এবং বৃত্তি পায়। অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ে। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি জুনিয়র হাইস্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর পর থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ে, প্রতিষ্ঠানের প্রতি অভিভাবকদের বিশ্বাস ও আগ্রহ বাড়তে থাকে। যা আজও চলমান। ইচ্চে থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষাকে এই প্রতিষ্ঠানে বর্তি করা যায় না।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :