নানা পাটেকরের আসল নাম বিশ্বনাথ পাটেকর। ১৯৭৮ সালে ‘গমন’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে কেরিয়ার শুরু করেন নানা। ‘সালাম বম্বে’, ‘অঙ্গার’, ‘পরিন্দা’, ‘প্রহার’-এর মতো ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছেন তিনি। আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে বলিপাড়ায় জনপ্রিয় অভিনেতাদের তালিকায় প্রথম সারিতে জায়গা করে নেন নানা।
কেরিয়ারে সাফল্যের স্বাদ পেলেও শৈশবে কঠিন সময় পার করেছেন নানা। ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নানার বাবা। কিন্তু সেই ব্যবসা লোকসানের মুখ দেখে। নানার বাবা তার বন্ধুর সঙ্গে যৌথ ভাবে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেই বন্ধুই টাকাপয়সা নয়ছয় করেন বলে বলিপাড়ার একাংশের দাবি। নানার বাবার ব্যবসায় ভরাডুবি হলে তাঁদের সংসারেও অর্থাভাব দেখা দেয়। স্কুলে পড়াকালীন অবস্থায় সংসারের খরচের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে নানার উপরেও।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, প্রতি দিন স্কুল থেকে ফিরে আবার কাজ করতে যেতেন নানা। সামান্য কিছু অর্থপ্রাপ্তির আশায় জেব্রা ক্রসিং আঁকার কাজও করেছেন তিনি। অভিনেতা তার জীবনে এমন সময়ও কাটিয়েছিলেন যে ৩৫ টাকা উপার্জনের জন্য আট কিলোমিটার হেঁটে যেতেন। কাজের বদলে এক বেলা পেট পুরে খাওয়ার সুযোগও খুঁজতেন তিনি। সিনেমার পোস্টারও বানাতেন নানা। স্কুল থেকে ফিরে আট কিলোমিটার হেঁটে পোস্টার বানাতে যেতেন তিনি। এই ভাবে প্রতি দিন ৩৫ টাকা রোজগার করতেন অভিনেতা। পোস্টার তৈরির জন্য টাকার পাশাপাশি এক বেলার খাবারও বিনামূল্যে পেতেন নানা। খাবার নিয়ে আবার আট কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফিরে যেতেন অভিনেতা।
২৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন নানা। সেই বছরেই বলিউডে নানার প্রথম ছবি মুক্তি পায়। নতুন পেশা, নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নানার যখন ২৮ বছর তখন তার বাবা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। প্রথম পুত্রসন্তানকেও হারান নানা।
১৯৯১ সালে নানার ছবি ‘প্রহার’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় হাতেখড়ি হয় নানার। পরিচালনার পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয়ও করেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘প্রহার’ ছবির জন্য তিন বছর সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন নানা। সেনা থেকে তাকে ‘ক্যাপ্টেন’ পদমর্যাদা দেওয়া হয়। জেনেরাল বিজয়কুমার সিংহের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ‘প্রহার’ ছবিতে বিজয়কুমারকেও অভিনয়ের সুযোগ দেন নানা।
শুধুমাত্র নিজের ছবির প্রয়োজনে যে সেনাবাহিনীতে নানা প্রশিক্ষণ নেননি তার প্রমাণ দিয়েছিলেন অভিনেতা। ছবির শুটিং শেষ হওয়ার পর নানা আবার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং কার্গিল যু্দ্ধের সময় দেশের সেবায় নিযুক্ত হন। দীর্ঘ সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেই নানার হাবভাব গুরুগম্ভীর প্রকৃতির। নিয়মনিষ্ঠা মেনে চলার নেপথ্যকারণও একই বলে মনে করেন অনেকে।

নানার পুত্র মালহার পাটেকরও অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু নানা কখনও মালহারের কেরিয়ার তৈরিতে তার প্রভাব খাটাননি। এক পুরনো সাক্ষাৎাকারে নানা বলেছিলেন, ‘‘আমি ওকে ইচ্ছে করেই কোনও সাহায্য করিনি। আমি চাই ও নিজের চেষ্টায় ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা তৈরি করুক।’’
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :