শ্রমিক দিবসে প্রতিবাদের সুরে একসঙ্গে গর্জে উঠলেন দেশের খ্যাতিমান তিন নির্মাতা হিমেল আশরাফ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও মিশুক মনি। তাদের অভিযোগের তীর দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্সের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের।
বুধবার ( ১ মে) নির্মাতা হিমেল আশরাফ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও মিশুক মনি তাদের ফেসবুক পেজে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তাদের পরিচালিত সিনেমাগুলো সিনেমা হলে ভালো দর্শক টানার পরও হলমালিকরা তাদের সিনেমার শো নামিয়ে ফেলছেন। প্রমাণ হিসেবে আজকের টিকিট বিক্রির স্ক্রিনশটও নিজের পোস্টে শেয়ার করেন নির্মাতারা।
ঈদে মুক্তি প্রাপ্ত হিমেল আশরাফ পরিচালিত ‘রাজকুমার’, গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘কাজলরেখা’ ও মিশুক মনি পরিচালিত ‘দেয়ালের দেশ’ তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও হলে দর্শক চাহিদা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিন নির্মাতার দাবি, দেশের সিনেমাগুলো নামিয়ে বিদেশি সিনেমাগুলোর শো বাড়িয়ে দিচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স। অথচ বিদেশি সে সিনেমাগুলোর দর্শকচাহিদা নেই। অযৌক্তিক এমন কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
ফেসবুকে নির্মাতাদের এমন পোস্ট দেখে নেটিজেনদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা। সবাই নির্মাতাদের পক্ষেই করছেন ইতিবাচক মন্তব্য। বিষয়টি স্টার সিনেপ্লেক্সের নজরে পড়লে সংবাদমাধ্যমে সিনেমা হলের আসল পরিস্থিতি তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ।
স্টার সিনেপ্লেক্সের ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশি হিসেবে বাংলা সিনেমাকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছি সব সময়। বাংলা সিনেমার পৃ্ষ্ঠপোষকতায় এই প্রতিষ্ঠান নিজেরাও বাংলা সিনেমা প্রযোজনা করে। অথচ মে দিবসের এই দিনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠবে কখনও ভাবিনি।
মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, দর্শক চাহিদা রয়েছে এমন সিনেমার শো নামিয়ে ফেললে প্রতিষ্ঠানেরই ক্ষতি। সেটা কেন করতে যাবে সিনেপ্লেক্স? বলতে বাধ্য হচ্ছি, আজ মে দিবস। বন্ধের দিন। সিনেমা হলের টিকিট বিক্রি হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নামিয়ে ফেলা সিনেমাগুলোর দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের টিকিট বিক্রি দেখলে বোঝা যাবে, কেন সিনেমাগুলো নামাতে বাধ্য হয়েছি।
এসময় আফসোস করে মেজবাহ বলেন, নিয়ম মেনে গ্লোবাল সিনেমা চালাতে গেলে দেশের সিনেমা কখনও বিদেশের সিনেমা চালাতে হয়। একটু খেয়াল করে দেখবেন, ঈদের আগে বিদেশি সিনেমা ‘ক্রু’ মুক্তি দেয়া হয়েছিল। দেশীয় সিনেমার স্বার্থে চাঁদরাতেই তা নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন যে সিনেমাগুলো নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে তার টিকিট বিক্রি গত সপ্তাহগুলোর দর্শক খরার কারণে।
মেজবাহ আরও বলেন
এই মুহূর্তে দুটি বিদেশি সিনেমা চলছে। একটি স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের ডকুফিল্ম ‘মুচাচোস’। অন্যটি হলিউডের আলোচিত নতুন ছবি ‘দ্য ফল গাই’। প্রথমদিনেই হতাশ করেছে সিনেমা দুটি। সময়মতো সেগুলোও নামিয়ে ফেলা হবে। তাছাড়া শুধু বিদেশি সিনেমার শো বাড়াতে দেশের সিনেমার শো নামিয়ে ফেলা হচ্ছে সেটি ভুল। চলতি মাসেই দেশের আরও দুটি নতুন সিনেমা (‘ডেডবডি’ ও ‘শ্যামাকাব্য’) আসছে। তাই ৩ মে ‘ডেডবডি’ ও ‘শ্যামাকাব্য’-র শো চালানো হবে। দর্শক বুঝে সে সিনেমার শোও বাড়ানো কমানো হবে।
সবশেষে দুঃখপ্রকাশ করে মেজবাহ বলেন, সিনেমার শো নামিয়ে ফেলাই শেষ সিদ্ধান্ত নয়। দর্শকচাহিদা আর গ্লোবাল নিয়ম মেনেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাগুলো চালানো হয়। মূল পরিস্থিতিটা নির্মাতাদের বুঝতে হবে। সিনেমা না চালালে আমাদেরই ক্ষতি। সে ক্ষতি কেন আমরা করব? বাংলা সিনেমায় স্টার সিনেপ্লেক্সের এত অবদান, অথচ আমাদের প্রতি তাদের এমন ঠুনকো বিশ্বাস সত্যি কষ্টকর!
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :