বলিউডে ভাইজানখ্যাত অভিনেতা সালমান খান। নিজের ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন একের পর এক হিট সিনেমা। এরই মাধ্যমে অর্জন করেছেন কোটি ভক্তের ভালোবাসা। তবে তার ক্যারিয়ারের শুরুটা এতটা মসৃণ ছিল না। ক্যারিয়ারের শুরুতে "Andaaz Apna Apna" র সেটে কোরিওগ্রাফার সারোজ খানের সাথে সালমানের কিছুটা ঝামেলা হয়। সে তখন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন, সালমানের মনে হয়েছিলো উনি তাকে অবহেলা করছেন। ঠোটকাটা সালমান তখন অকপটে বলে ফেলেন - "আমি যখন টপ হিরো হবো, তখন তোমার সাথে আর কাজ করবো না"। এরপর প্রায়ই মিডিয়ায় সালমানকে বেয়াড়া, বেয়াদব বলে সম্বোধন করতেন সারোজ খান। বলতেন যে, সালমান কি খোদা নাকি সে আমাকে কাজ দিবে!
এরপর বহুবছর পেড়িয়ে যায়, সারোজ খান বৃদ্ধ বয়সে বলিউডে কাজ পাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। হঠাৎ উনার নাতির একটা রোগের কারণে ইমারজেন্সি সার্জারীর প্রয়োজন পড়ে। সারোজ খান তখন ইন্ডাস্ট্রির অনেকের কাছে হেল্প চান বাট কোথাও পান নি। তখন হঠাৎ একদিন তার ঘরের ফোন বেজে উঠে, ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে সালমান বলেন, "শুনলাম আপনার নাতির সার্জারি করাতে হবে, আপনি টেনশন করবেন না আমি আছি, আমি সবকিছু করিয়ে দিবো"।
এবিষয় নিয়ে সারোজ খানের মেয়ে এক ইন্টারভিউতে বলেন, সেদিন সালমান খানের ফোনটা রেখে অশ্রুজল চোখে বিষ্মিত হয়ে বসে ছিলেন বাবা। এরপর থেকে বাবা মারা যাবার পূর্বে যতোদিন সুস্থ ছিলেন ততোদিন নামাজ শেষে আলাদা করে দশ মিনিট শুধু সালমানের জন্য দোয়া করতেন।
নওয়াজুদ্দিন সিদ্দীকি এক ইন্টারভিউতে বলেন, আমি নিজের চোখে সালমান ভাইকে মানুষের জন্য যা যা করতে দেখেছি তা আমি কাউকে বলতে চাই না, বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না। শুধু বলবো আপনারা কল্পনা ও করতে পারবেন না উনি মানুষের জন্য কি কি করেন।
সাবাহ এবং ফারাহ নামে পাটনায় দুইবোন আছে। জন্ম থেকেই তাদের দুজনের মাথা জোড়া লাগানো। একবার মুম্বাইতে এনে তাদের একটা মেজর অপারেশন হবে। এতে জীবনের ঝুঁকিও প্রচুর। যার কারনে অপারেশন এর আগে তাদের একটা ইচ্ছা জানতে চাওয়া হয়। তাদের দুজনার একটাই ইচ্ছা, সালমান খানের সাথে দেখা করবে। এই খবর পাওয়ার সাথে সাথে সালমান প্লেনে করে দুই বোনকে তার বাসায় নিয়ে এসে তাদের সাথে দেখা করেন।
আমির খান যখন তার ক্যারিয়ারের ডার্ক ফেইজে, তখন একদিন সালমান হাজির তার বাসায় অথচ এর আগে আমির -সালমানের সম্পর্ক তেমন ঘনিষ্ঠ ছিলো না, বরং আমির তাকে তেমন পছন্দ করতেন না তার এরোগেন্ট স্বভাবের জন্য। সেইদিন সালমান তার পাশে এসে দাড়ানোর পর, সালমানের এরোগেন্ট স্বভাবের পেছনের মানুষটাকে দেখতে পান আমির।
শাহরুখের ছেলে আরিয়ান খানের ড্রাগের কেসে ফাসার পর মান্নাতে সবার আগে যার গাড়ি ঢুকেছিলো তিনি হলেন সালমান খান। সেদিন শাহরুখ খান ওপেনলি বলেন, "আমি যদি এখন মারা যাই, নিশ্চিন্তে মারা যাবো কারন আমি জানি সালমান সবসময় আমার পরিবারের পাশে থাকবে"।
মানুষের জন্য এতো কিছু করেও সালমান বলিউডের সবচেয়ে ভুল বুঝা ব্যক্তিদের একজন। মিডিয়া তাকে সবসময় ব্যাড বয় খেতাবই দিয়ে এসেছে, তার বিরুদ্ধে নেগেটিভ ক্যাম্পেইন করেছে অথচ সেই ব্যাড বয়ের পেছনের মানুষ কে কেউ সামনে আনেনি। অবশ্য সালমানও কখনো এসবের তোয়াক্কা করেনি, না কখনো ক্যামেরার সামনে এসে নিজের সাফাই গেয়েছে।
রাজিব মাসান্দ একবার তাকে এক ইন্টারভিউতে বলেছিলো, আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আপনি আপনার ট্রু পোটেনশিয়াল ইউজ করেন না, ক্যারিয়ার নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী না, এটা কেনো! উত্তরে সালমান বলেন, দেখুন এমন একটা সময় আসবে যখন এইসব যশ, জনপ্রিয়তা এরকম থাকবে না, তখনকার সময়টা ঐসব উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষদের ক্ষেত্রে কাটানো খুব কষ্টকর হয়ে যাবে। কিন্তু আমার তখন সমস্যা হবে না, কারন আমি সবসময় এভাবেই সাধারন জীবনযাপন করে যাচ্ছি।
সবকিছু উপরওয়ালা দিয়েছেন, উনি আবার নিয়েও যাবেন। সম্পদ, স্টারডম এগুলো আসলে চিরস্থায়ী না। আমি আসলে এগুলো নিয়ে কখনোই ভাবি না।
যখন যা ভালো লাগে কাজ করি আর চেষ্টা করি যতোটা সম্ভব মানু্ষকে সাহায্য করার। টাকা যদি কারো জীবন বাচাতে সাহায্য করতে পারে আমি তার জন্য যেকোনো এমাউন্ট দিতে প্রস্তুত।
একুশে সংবাদ//জা.আ//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :