ময়না বা পাহাড়ি ময়না এখন প্রায় বিলুপ্তই বলা চলে। আগের মতো দেখাও মেলেনা তাদের। এমন পরিস্থিতিতে পাঁচারকারীরা এখনো বনভূমি এবং পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এসব পাহাড়ি ময়না পাখি ধরে বিভিন্ন জেলায় পাঁচার করছে। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও বনবিট এলাকা কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া হবিগঞ্জ জেলার রেমা কালেঙ্গা এবং সাতছড়ি উদ্যান এর গভীর বনের ভিতরে অনেকটা প্রকাশ্যে শিকারীদের উৎপাতের কারণে বিপন্ন হচ্ছে বনের সুমধুর কন্ঠী এই ময়না পাখিটি। এটি মূলত হিল ময়না হিসেবেই পরিচিত। এই পাখি দ্রুত পোষ মানার কারণে সবচেয়ে বেশি শিকার হয়।এছাড়া প্রাকৃতিক বন নষ্ট এবং পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার কারণে দিন দিন বিলুপ্তির পথে হিল ময়না। বর্তমানে গভীর বন ছাড়া এদের দেখা মিলে না।
শিকারী জানান , ‘এখন একটি পাখি শিকার করতে প্রচুর সময় লাগে। বর্তমানে এদের বনে সচারচর দেখা যায় না। তবে এই পাখির চাহিদা বেশি বলে জানান শিকারীরা।’
মূলত মানুষের কারণেই হিল বা পাহাড়ি ময়না সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে। পাহাড়ি হিল ময়না অনেকটা প্রকাশ্যে বেচাকেনা চললেও বন বিভাগ অনেকটাই নিশ্চুপ। মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাখি শিকারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি ময়না ৩৫’শ থেকে ৫ হাজার টাকায় তারা বিক্রি করেন।তাদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায় গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রীম অর্ডার নিয়েই পাখি (ময়না) ধরতে বের হন তারা। ময়না সাধারণত বড় বৃক্ষের গর্তে বাসা বাধে। অনেক সময় শিকার ময়না করা বাঁচে না। সুস্থ সবল একটি ময়না ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। সারাবছরে ৮ থেকে ১২টি ময়না ধরা যায় বলেও জানান তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সরকার বাজার ,ভীমসি বাজার ,মির্জাপুর বাজার ,কমলগঞ্জের আদমপুর বাজার ,হবিগঞ্জের চুনারুঘাট বাজার, এবং শায়েস্তাগঞ্জ নবীগঞ্জের ইনাতগঞ্জ বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, প্রকাশ্যেই ময়না সহ প্রকাশ্যে বিভিন্ন বিপন্ন পাখি বিক্রি করছেন সাজিকারীরা।
এবিষয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক সানাউল্লা পাটোয়ারী বলেন, বন্যপ্রাণী কেউ বেআইনিভাবে রাখলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তিনি বলেন ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ কয়েকজনকে বনের পাখি বিশেষ করে বাণিজ্যিক উদ্দ্যেশে বিক্রিকালে আটক করে তাদের কাছে পাওয়া পাখিদের জব্দ করে বনে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী বিক্রি করা বন্ধে কঠোর নজরদারি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ময়নার বৈজ্ঞানিক নাম গ্রাক্যুলা রিলিজিওসা। রিলিজিওসা শব্দের অর্থ সুন্দরের দ্যোতক। ময়নার গায়ের পালক উজ্জ্বল কালো। রোদের আলোয় কালো রঙ চক চক করে। তার উপর কিছুটা সবুজ ও বেগুনি আভা। ময়নার মাথার পিছনের হলুদ আবরণে ডাকা ত্বক । এই যেন রূপসীর গয়না বা কন্ঠহার। বাসন্তি রঙের ঠোঁট। ডানার বড় পালাকের আড়ালে কয়েকটি সাদা পট্টি থাকে। ময়নার পা ধবধবে হলুদ। এরা সাধারণত বৃক্ষের উঁচু উঁচু ডালে থাকতে পছন্দ করে। লম্বায় দশ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বন ময়না খুব কমন পাখি হলেও মানুষের অর্থ লোভ এবং শৌখিনতার কারণে ময়না বিপন্নে পথে।১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আই.ইউ.সি এন)`র তালিকায় হিল ময়না আশঙ্কাযুক্ত প্রাণীদের তালিকায় না থাকলেও শিকারীদের কারণে দিন দিন হিল ময়নার সংখ্যা কমছে। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বনের ময়না পাখির প্রজনন।
তিনি আরো বলেন শিকারীদের উৎপাত ও ক্রমশ বন ও পাহাড় ধ্বংসের কারণেও অনেকটা বিলুপ্তির পথে এরা। বাংলাদেশ, নেপালসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এদের দেখা মিলে।বাংলাদেশের ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী আইনেও এ প্রজাতি সংরক্ষিত বলে জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :