পৃথিবীর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নির্ভর করে তার শিক্ষকের উপর। একজন ভালো শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর ভালো ফলাফলের পাশাপাশি, ক্যারিয়ার গঠনের ভীত তৈরি করে দেন। একজন ভালো শিক্ষক তার সন্তান তুল্য শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখান, সাহস দেন। সেই স্বপ্ন ও সাহসকে পুঁজি করে প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী গড়ে উঠে বিশ্বজয়ের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে।
কবি হয়তো এ জন্যই বলেছেন- শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষক তার কাণ্ডারী!
আমরা সেই জাতি তৈরির কাণ্ডারিদের প্রতিনিয়ত অবজ্ঞা, অবহেলা করে যাচ্ছি আর স্বপ্ন দেখছি আমাদের সন্তানদের আগামীর দার্শনিক, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী তৈরি করার অথচ এই সকল জাতীয় বুদ্ধিজীবীদের যারা তৈরি করেন আমরা তাদেরকেই মূল্যায়ন করতে শিখিনি।
কিভাবে আমরা মূল্যায়ন করতে শিখবো? এখনতো আর শিক্ষক হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে হয়না, অর্থকড়ি হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হওয়া যায়। আমাদের সমাজে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে গভর্নিং বডির সভাপতি অশিক্ষিত লোককে নির্বাচিত করে পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব স্থানান্তরিত করা হয় তার উপর। একজন অজ্ঞ লোক কিভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করবেন তা আমার বোধগম্য নয়!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমার্বতনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি তার আঞ্চলিকতার একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেছিলেন, গরিবের বৌ নাকি সবার বাউজ (ভাবি) অর্থাৎ তিনি এ কথা দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে রাজনীতি করতে বিশেষ কোনো বিষয়ের অর্জিত জ্ঞান লাগে না যেকেউ চাইলে যেকোনো সময়ে রাজনীতি করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ তিনি আরো বলেছিলেন- আমি বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর কিন্তু আমি যদি ভাইস চ্যান্সেলর সাহেবকে বলি স্যার আমাকে রসায়ন ক্লাস নেওয়ার জন্য নিয়োগ দিবেন? তাহলে তিনি দিবেন না, কারণ আমি রসায়ন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানিনা। দেশের একজন রাষ্ট্রপতি যদি ভালো শিক্ষকের প্রতি আস্থা রাখতে পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না?
সুতরাং আপনার সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করবেন আপনি নিজে, আপনার সন্তানকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ভালো শিক্ষকের কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখবেন ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে, ভালো শিক্ষকের গুরুত্ব অত্যধিক বেশি। আমরা অনেকেই উপরে চাকচিক্যতা খুঁজি! কিন্তু একবারও ভাবি না উপরে চাকচিক্যময় হলেও ভিতরে তার ভূষি। একজন ভালো শিক্ষক বটতলায়ও ভালো পাঠদান করাতে পারেন।
সক্রেটিসকে সবাই পাগল বলতো কারণ তিনি তার শিক্ষার্থীদের কখনো রাস্তায়, কখনো বাজারে আবার কখনো গাছের নিচে শিক্ষা দিতেন অথচ সেই পাগলেই আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক আর তারই শিষ্য প্লেটো ও এরিস্টটল পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানী ও দার্শনিক! তাই আসুন আমরা ভালো শিক্ষকের সম্মান করতে শিখি আমাদের সন্তানদের ` সু ` নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করি।
লেখকঃ
মোঃ আনিসুর রহমান মীর
সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ
একুশে সংবাদ.কম/রাফি/বি.এস
আপনার মতামত লিখুন :