গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত সাধারণ একটি জলজ উদ্ভিদের নাম "কচুরিপানা"। ফরিদপুরসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় হাওর-বাঁওড়-খাল-বিল আর শস্য-শ্যামল সবুজে ভরপুর ছোট বড় হাওর, বিল, ঝিল ও বাড়ির পাশের ডোবায় এখন ফুটেছে দৃষ্টিনন্দন কচুরিপানা ফুল দেখতে পাওয়া যায়। এটি একটি বহু-বর্ষজীবী ভাসমান জলজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Eichhornia crassipes।
বহুবর্ষজীবী মুক্তভাসমান একটি জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা। যার আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকায়। এটি প্রচুর বীজ তৈরি করে যা ৩০ বছর পরও বংশবিস্তার ঘটাতে পারে। অনেকের ধারণা কচুরিপানা ফুলের সৌন্দর্যপ্রেমিক এক ব্রাজিলীয় পর্যটক ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলায় কচুরিপানা নিয়ে আসেন। তারপর তা দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে বাংলার প্রায় প্রতিটি জলাশয় ভরে যায়। গ্রামাঞ্চলে এই কচুরিপানা ফুলটিকে অনেকে ‘হেনা’ বলে ডাকেন। কিছু এলাকায় এটি ‘কস্তুরি’ ফুল নামেও বেশ পরিচিত।
এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল বা বিস্তীর্ণ জলাশয়ে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের বিলে বা জলাশয়ে ফোটা ফুলগুলো কোনো সুবাস না ছড়ালেও এসব ফুলের রয়েছে নান্দনিক রূপ। যাতে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমিরা।
স্থানীয়রা বলেন, দিনে দিনে বিস্তীর্ণ এ জলাশয় কিংবা বিলে কচুরিপানায় ভরে ওঠছে। প্রতি বছরই এসব জলাশয় বা বিলে অযত্ন-অবহেলায় নিজে নিজে বেড়ে ওঠছে ফুলগুলো। এক সময়ে ফোটা ফুলে মনোরম হয়ে ওঠে এলাকা। ফুলের শোভা দেখতে কিংবা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভোগ করতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুলের চাদরে ঢেকে আছে অনেক জলাশয়, খাল-বিল। অনেকে এসব ফুলের মগ্ধতা ছড়ানো সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কেউ কেউ খুব যত্ন করে নিজের মুঠোফোনে তুলে নিচ্ছেন এসব ফুলের দৃশ্য।
স্থানীয় লোকজন জানান, চাপাদহ,দাদুরিয়া বিল,বারাসিয়া নদীতে কয়েক বছর আগেও পরিষ্কার ছিল। স্বচ্ছ পানিতে মাছ চাষ করা হতো। দিনে দিনে এ জলাশয় কচুরিপানায় ভরে ওঠে। এরপর ফুল ফুটতে শুরু করে। তবে বেশ কয়েক বছরও একসঙ্গে এত ফুল দেখা যায়নি। এবার বৈশাখে প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টি না থাকায় তবুও কচুরিপানার ফুল ফুটতে শুরু করে। কয়েক দিনের মধ্যে পুরো জলাশয় ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। মনোরম হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ফুলের শোভা দেখতে কিংবা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে ছবি তুলতে জলাশয়ের কাছে ভিড় জমাতে থাকে সৌন্দর্য পিপাসু লোকজন।
নান্দনিক সৌন্দর্য় উপভোগ করতে আসা কাকলি নামে এক নববধূ বলেন, কচুরিপানার ফুলের যে এমন সৌন্দর্য থাকে তা চোখে না দেখলে হয় তো জানাই হতো না। বাড়ির পাশে এমন অপরূপ শোভা চিত্তবিনোদনে খুলে দেয় আনন্দের দুয়ার। বিকেল হলেই আমরা বেরিয়ে পড়ি সৌন্দর্যের খোঁজে। বিলের মধ্যে ফুটে থাকা এমন সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে। আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর মনে হলেও কৃষি ক্ষেত্রে এর যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। কচুরিপানা থেকে এখন জৈব সারও তৈরি হয়। ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, কৃষকদের কচুরিপানা থেকে জৈবসার উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দিলে জৈবসার ব্যবহারে যেমন কৃষক উপকৃত হবে অপরদিকে বিদেশের রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।
অনেক জায়গায় কৃষকেরা কচুরিপানা উঠিয়ে জমিতে ফলানো আলু, পটলসহ বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যবহার করে থাকে।
কচুরিপানা থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কৃষি বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরি করতে সময় লাগে ৭০ দিন কিন্তু কচুরিপানা থেকে সময় লাগে ৫৫ দিন।
একুশে সংবাদ/স.চ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :