ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। জমিদার বাড়ি হচ্ছে এর মধ্যে অন্যতম। যা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক-একটা জমিদার বাড়ির সাথে মিশে আছে এক একরকম ইতিহাস। ভারত উপমহাদেশে মুঘলদের শাসনামল থেকে ব্রিটিশদের শাসনামল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা চালু ছিল।
জমিদাররা ব্রিটিশদের কাছ থেকে জমিদারি নিয়ে প্রজাদের উপর শাসনকার্য চালানোর জন্য একটি নির্ধারিত স্থানে প্রাসাদ তৈরি করে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন এবং বসবাস করতেন। জমিদারদের তৈরি করা এই বাড়িই হলো জমিদার বাড়ি । এই বাড়ি থেকেই জমিদাররা প্রজাদের উপর তাদের শাসনকার্য চালাতেন।
প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশে করলেই চোখে পড়বে খোদাই করা রংবেরংঙের কারুকায করা সদর দরজা। দুপাশে সারি সারি নারিকেল গাছ। রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই চোখে পরবে বিশাল আকৃতির আমগাছ। একপাশে সবজি বাগান অন্যদিকে গোলাপ বাগান। দুচোখ যেদিকে যায় গাছ আর পুকুর। খুব সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো চারপাশটা। ইতিহাসে এটি গাংগাটিয়া জমিদার বাড়ি নামে লিপিবদ্ধ।
অন্যান্য জমিদার বাড়ির মতো এই জমিদার বাড়িরও আছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ভোলানাথ চক্রবর্তী। অন্যান্য জমিদার বাড়ির মত এটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত না হয়ে এখনো পুরোপুরি টিকে আছে। কেননা এখনো এই জমিদার বাড়ির বংশধর এই বাড়িতে বসবাস করছেন। জানা যায়, প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন এই জমিদার বাড়িটি অষ্টাদশ শতকের গ্রীক স্থাপত্যকলা অনুযায়ী নির্মিত। এতে রয়েছে কাচারিঘর, নহবতখানা, দরবারগৃহ মন্দির এবং চতুর্দিকে প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত।
এই জমিদার বাড়ির বর্তমান বংশধর হচ্ছেন মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী । তবে লোকমুখে তিনি মানব বাবু নামে পরিচিত। তার স্ত্রী, ও বোনকে নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করেন। তার কোনো সন্তান নেই। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি মানব বাবুর বাড়ি নামেই বেশ পরিচিত। তিনি জাতে ভ্রাহ্মণ বা পুরোহিত। যা সনাতন ধর্মের মর্যাদাসম্পন্ন একটি জাতি। জমিদারের বংশধররা বেশ উচ্চশিক্ষিত ছিলেন।
এই জমিদার বংশের আদি বসবাস ছিল ভারতের কাইন্নকব্জিতে। প্রায় ছয়শত বছর আগে তারা এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন। এটি মূলত গোবিন্দপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর উপজেলায় অবস্থিত যা কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত। পরে ব্রিটিশ শাসনামলের শুরু থেকে জমিদারি প্রথার প্রচলন হয় এবং দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তাদের জমিদারিও শেষ হয়। এখন পর্যন্ত তারা শান্তিপূর্ণ ভাবেই এখানে বসবাস করছেন। এই অঞ্চলের মানুষেরা মানব বাবু কে জমিদার হিসেবেই স্বীকৃতি দেয় ও সম্মান করে।
প্রাচীন স্থাপত্য মানেই চোখ জুড়ানো সব আয়োজন। প্রতিদিনই এই সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করে দর্শনার্থীরা। যাওয়ার রাস্তা একটু ভাঙাচোরা হওয়ায় অবসাদ নিয়ে তাঁরা এখানে প্রবেশ করেন কিন্তু ফিরে যান প্রশান্তি নিয়ে।
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :