দেখতে ঝাঁ চকচকে। কুচকুচে কালো রঙ। চ্যাপ্টা ছোটখাট চেহারা। আর এই বেশে আত্মপ্রকাশ করেই তাক লাগাচ্ছে বিশ্বের নতুন সুপার কার ‘সিমুর্গ’। তবে যে দেশ থেকে এই গাড়ির উৎপত্তি তা তাক লাগাচ্ছে বেশি। আমেরিকা, চিন বা জাপান নয়, সিমুর্গের প্রস্তুতকারক তালেবান শাসিত আফগানিস্তান।
২০২১ সালের ১৫ অগস্ট। দ্বিতীয়বারের জন্য আফগানিস্তানের দখল নেয় তালেবান। ভয়ে সে দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন নাগরিকেরা। গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে তালেবান রাজত্বে সে দেশে অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তান সম্পর্কে দুনিয়ার ধারণা বদলাতে মরিয়া তালেবান নেতৃত্ব। তারই অন্যতম পদক্ষেপ হিসাবে নতুন এই অত্যাধুনিক সুপারকার তৈরি করেছে তালেবান সরকার। এই প্রথম দেশীয় প্রযুক্তিতে সে দেশে তৈরি হচ্ছে সুপারকার।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে অত্যাধুনিক সুপারকার বানানোর কথা ঘোষণা করে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। এই গাড়িটির হাত ধরেই দুনিয়ার কাছে নিজেদের উন্নয়নের ছাপ রাখতে চায় তালিবান।
তবে আফগানিস্তানে তালেবান অভ্যুত্থানের আগে থেকেই আফগানিস্তানের এক সংস্থা সেই সুপারকার তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছিল। আর তারই ফল সিমুর্গ।
সম্প্রতি অত্যাধুনিক ঝকঝকে গাড়িটি সর্বসমক্ষে আনা হয়েছে। কাতারের দোহায় একটি প্রদর্শনীতে সেই সুপারকার আত্মপ্রকাশ করেছে। যা রূপে আর গুণে চোখ ধাঁধাচ্ছে বিশ্ববাসীর।
এক নজরে দেখলে সিমুর্গের সঙ্গে অনেকেই মিল খুঁজে পাবেন জনপ্রিয় কমিকস্ চরিত্র ব্যাটম্যানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত গাড়ি ‘ব্যাটমোবাইল’-এর। গাড়িটির প্রস্তুতকারী সংস্থার দাবি, উচ্চগতির জন্য শীঘ্রই গাড়িপ্রেমিকদের নজর কাড়তে চলেছে সিমুর্গ। প্রস্তুতকারী সংস্থা আরও জানিয়েছে, গাড়িটি এখনও সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি হয়নি। বিভিন্ন পর্যায়ে গাড়ির কাজ এখনও বাকি। শীঘ্রই তা শেষ করা হবে বলেও তারা জানিয়েছে।
সিমুর্গের প্রস্তুতকারী সংস্থা এনটপের সিইও মহম্মদ রেজ়া আহমদি জানিয়েছেন, পার্সিয়ার পৌরাণিক পাখি সিমুর্গের নাম অনুযায়ী এই সুপারকারের নামকরণ করা হয়েছে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, সিমুর্গ পাখিটির মাথা কুকুরের মতো এবং লেজ রয়েছে। ডানা ঈগলের মতো বড়।
আহমদি আরও জানিয়েছেন, পাঁচ বছর ধরে ৩০ জনের একটি দল সিমুর্গ গাড়িটি তৈরি করেছে। তিনি নিজেও এই সুপারকারের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার এবং নকশা প্রস্তুতকারক।
২০২১ সালে আফগানিস্তান দখল করে তালেবান। সেই সময় অতিমারি এবং আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে পতনের কারণে গাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া বেশ কিছু দিন থমকে ছিল। তবে শীঘ্রই আবার সেই গাড়ি তৈরির কাজে হাত লাগায় ওই সংস্থা।
দোহায় ওই গাড়ির প্রদর্শনী চলাকালীন এক সাক্ষাৎকারে আহমদি বলেন, আমার দেশকে বিশ্বের কাছে নতুন করে তুলে ধরার জন্য কিছু করতে চাই। সিমুর্গ আফগানিস্তানের শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করবে।’
চার-সিলিন্ডার ইঞ্জিন যুক্ত গাড়ির ছবি প্রথম প্রকাশ্যে আসে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। প্রাথমিকভাবে গাড়িটির নাম ছিল ‘মাডা-৯’। পরে নাম বদলে সিমুর্গ করা হয়। সিমুর্গ একটি ‘মিড-ইঞ্জিন সুপারকার’। এতে ব্যবহার করা হয়েছে টয়োটা করোলার ইঞ্জিন। তীব্র গতির জন্য এই ধরনের ইঞ্জিন বানানো হয়েছে।
সুপারকারটির চেসিস (গাড়ির নিম্নাংশের কাঠামো) টিউবের আকারের। চেসিসটি খুব একটা ভারী নয়। গাড়িটি তৈরি করতে যে সব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে, তা হালকা। ফর্মুলা-১ রেসের গাড়িগুলোয় যেমন টিউবুলার চেসিস থাকে, তেমন ভাবেই সুপারকারের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
এনটপের দাবি, পাহাড়ি এলাকাতেও ছুটবে সিমুর্গ। আফগানিস্তানের পার্বত্য এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে মহড়া হয়েছে সুপারকারটির। গাড়িটি পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়েছেন ইঞ্জিনিয়াররা।
আফগানিস্তানের প্রথম সুপারকারের দাম আকাশছোঁয়া। মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সিমুর্গের দাম হতে পারে ৪ থেকে ৬ কোটি টাকা।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :