ঝুঁকির কথা জেনেও মানুষ পরমাণু শক্তি কাজে লাগিয়ে চলেছে। গোটা বিশ্বজুড়ে প্রায় আড়াই লাখ টন অতি তেজস্ক্রিয় পরমাণু বর্জ্য মজুত রয়েছে। অনেক জায়গায় সেই বিষ পরিবেশও দূষিত করছে। কিন্তু তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেলার স্থায়ী জায়গা পাওয়া কঠিন। বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে ফিনল্যান্ড সেই উদ্যোগ শুরু করেছে। পরমাণু বর্জ্যের চূড়ান্ত গুদাম নির্মাণ করছে দেশটি।
দেশটির রাজধানী হেলসিংকি থেকে গাড়িতে মাত্র তিন ঘণ্টার দূরত্বে এউরাইয়োকি এলাকায় এক পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের পাশেই সেই স্থাপনা গড়ার কাজ চলছে। জায়গাটার নাম ‘ওকালো’, ফিনিশ ভাষায় যার অর্থ গুহা। খনির প্রায় ৪৩০ মিটার গভীরে মাটির নিচে রাখা হবে বর্জ্য।
পরমাণু বর্জ্যের চূড়ান্ত গুদাম প্রায় ১০০ বছর ধরে ধাপে ধাপে ভরে তোলা হবে। ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত সেটি সম্প্রসারণের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। তারপর চিরকালের জন্য সেটি সিল করে দেওয়া হবে।
আন্টি ইয়ুস্টেন সেখানকার প্রধান ভূতত্ত্ববিদ। বিশেষ ভূতাত্ত্বিক গঠনের কারণেই জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়েছে। জায়গাটির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে তিনি বলেন, পাথুরে এই জমি প্রায় ২০০ কোটি বছর পুরানো। প্রায় কোনো ফাটল নেই এবং অত্যন্ত শুকনা। এখানে ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চালনও খুবই কম।
এউরাইয়োকি পৌর কর্তৃপক্ষ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বর্জ্যের চূড়ান্ত গুদামের মালিক কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি বছর ভূমি কর বাবদ প্রায় দুই কোটি ইউরো পায়। সেখানে মাত্র কয়েক হাজার মানুষ বাস করেন। তা সত্ত্বেও নিজস্ব স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, লাইব্রেরি ও বেশ কয়েকটি ক্রীড়া কেন্দ্র রয়েছে। ৯০ লাখ ইউরো মূল্যের আরো একটি ক্রীড়াকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।
ভেসা ইয়ালোনেন এক সময়ে শিক্ষকতা করতেন। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে বাস করছেন। তিনি বলেন, স্টুক নামের আমাদের পরমাণু তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষের প্রতি ফিনল্যান্ডের মানুষের আস্থা রয়েছে। মানুষ ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতার উপর নির্ভর করে। তারা সব পরীক্ষা করে দেখেছেন। মোটকথা এখানে যা চলছে, সে বিষয়ে আমরা গর্ব বোধ করি।
অনেকের কাছে এমন মনোভাব বিস্ময়কর মনে হতে পারে। কারণ অতি তেজস্ক্রিয় পরমাণু বর্জ্য তো আর সাধারণ জঞ্জাল নয়। সেই বর্জ্যে মূলত ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি রড থাকে। লাখ লাখ বছর ধরে তেজস্ক্রিয় থাকায় সেগুলি জীবন বিপন্ন করতে পারে।
জ্বালানি রড থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ লিক হওয়ার বিপদ এড়াতে সেগুলিকে কড়া নিয়ম মেনে মোড়কবন্দি করতে হয়। অনকালোয় সেই কাজ করা হয়। পাঁচ সেন্টিমিটার পুরু ও পাঁচ মিটার উচ্চতার তামার ক্যানিস্টারে সেটা ঘটে। তারপর সেই আধারগুলি ৪০০ মিটারেরও বেশি গভীরে নামিয়ে দেওয়া হয়।
এমন মনোভাব নিয়ে ফিনল্যান্ডই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে অতি তেজস্ক্রিয় পরমাণু বর্জ্য স্থায়ীভাবে মজুত রাখার উদ্যোগ নিচ্ছে।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :